চরফ্যাশন ক্যাডেট স্কুল এন্ড কলেজে বার্ষিক বিতর্ক প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ
লালমোহনে ৩৯টি জরাজীর্ণ ব্রিজে জনদুর্ভোগ চরমে
স্টাফ রিপোর্টার, লালমোহন ॥ ভোলার লালমোহন উপজেলার ৩৯টি জরাজীর্ণ ব্রিজের কারণে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। এরমধ্যে কিছু ব্রিজ ৫ থেকে ১৫ বছর ধরে জরাজীর্ণ হয়ে রয়েছে। বিভিন্নস্থানের ব্রিজগুলো দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে নানান সময় ঘটছে দুর্ঘটনাও। এসব ব্রিজ এখন নতুন করে নির্মাণ করা ছাড়া বিকল্প নেই।
লালমোহন উপজেলা প্রকৌশলীর দফতর থেকে জানানো হয়েছে, লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়নে চারটি, রমাগঞ্জ ইউনিয়নে ছয়টি, বদরপুর ইউনিয়নের ছয়টি, পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নে চারটি, লালমোহন ইউনিয়নে তিনটি, কালমা ইউনিয়নে আটটি, ধলীগৌরনগর ইউনিয়নে তিনটি, চরভূতা ইউনিয়নে চারটি এবং ফরাজগঞ্জ ইউনিয়নে একটি ব্রিজ রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে আয়রন, বক্স কালভার্ট, গার্ডার এবং লাইট ট্রাফিক ব্রিজ। এর সবকয়টি ব্রিজ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
সরেজমিন উপজেলার লালমোহন ইউনিয়নের পূর্ব ফুলবাগিচা এলাকায় গিয়ে দেখা গিয়েছে, ওই এলাকার লালন খালের ওপর একটি ব্রিজ রয়েছে। ওই ব্রিজটি ভেঙে খালের মধ্যে থুবড়ে পড়ে আছে। ভাঙা ব্রিজটির ওপর যাতায়াতের স্বার্থে স্থানীয় লোকজন সুপারি গাছ এবং হাতল হিসেবে বাঁশ দিয়ে চলাচল করছেন। ওই এলাকার মো. শাহজল এবং মো. সিরাজ বলেন, ব্রিজটি বেশ কয়েক বছর ধরেই জরাজীর্ণ ছিল। এরপর মাসখানেক আগে ব্রিজের একটি অংশ খালের মধ্যে ধসে পড়ে যায়। এরপর থেকেই চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এলাকাবাসী। কোনো রকমে একটু যাতায়াতের জন্য ব্রিজের ধসে পড়া অংশের ওপর সুপারি গাছ দেওয়া হয়েছে। আর সেখানে হাতল হিসেবে দেওয়া হয়েছে বাঁশ। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই ব্রিজটি দিয়ে প্রতিদিন কয়েক শত মানুষ পারাপার হন। স্থানীয় মানুষজনের জীবনের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে শিগগিরই ব্রিজটি পুনর্র্নিমাণের দাবি জানাচ্ছি।
একই অবস্থা উপজেলার কালমা ইউনিয়নের চরলক্ষ্মী এলাকার চরলক্ষ্মী খালের ওপরের ব্রিজটির। ওই ব্রিজটির মাঝখান দিয়ে সৃষ্টি হয়েছে কয়েকটি গর্ত। চলাচলের স্বার্থে স্থানীয় লোকজন ও অটো এবং সিএনজি চালকদের উদ্যোগে ওই গর্তের ওপর দেওয়া হয়েছে কাঠের পাটাতন। তবে এখন কোনোভাবে মানুষ ও ছোট যানবাহন চলতে পারলেও বড় ধরনের কোনো যানবাহন চলতে পারছে না ব্রিজটির ওপর দিয়ে।
চরলক্ষ্মী এলাকার সিএনজি চালক মো. সালাউদ্দিন জানান, বছরের পর বছর ধরে ব্রিজটির বেহাল অবস্থা। মনে হচ্ছে এই চিত্র কেউই দেখছে না। না হয় এত বছর ধরে জরাজীর্ণ থাকার পরও কেনো ব্রিজটি নতুন করে নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এই অবস্থায় আর বছরখানেক থাকলে যেকোনো সময় ব্রিজটি খালের মধ্যে পুরোপুরি ধ্বসে পড়ে যাবে। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে এই ব্রিজটি পুনর্র্নিমাণের দাবি করছি।
আরো বেহাল অবস্থা কালমা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের উত্তর কালমা এলাকার হাচন আলী খালের ওপরের ব্রিজটির। সাধারণত লোহা আর ইট-সিমেন্ট দিয়ে তৈরি হয় ব্রিজ। তবে এই ব্রিজটির চিত্র ভিন্ন। নির্মাণের কয়েক বছর লোহা, ইট-সিমেন্ট থাকলেও এখন ব্রিজটি পরিণত হয়েছে সাঁকোতে। কারণ ব্রিজটির অধিকাংশ অংশই ভেঙে খালের মধ্যে পড়ে গিয়েছে। বাকি যতটুকু আছে তার মধ্যেও কয়েকটি গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। তবুও চলাচলের জন্য ওই ব্রিজের ওপর সুপারি গাছ দিয়ে বানানো হয়েছে সাঁকো। হাতল হিসেবে দেওয়া হয়েছে লম্বা বাঁশের লাঠি।
সবুজ মন্ডল নামে ওই এলাকার এক যুবক বলেন, এখান দিয়ে আগে অটোরিকশাসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচল করতো। ব্রিজটি ভেঙে যাওয়ায় এখন সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। যানবাহন তো দূরে থাক এক এই ব্রিজের ওপর দিয়ে মানুষের চলাচলেই সমস্যা। এছাড়া কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরও বিদ্যালয়-মাদরাসায় যেতে সমস্যা হচ্ছে। তবুও প্রয়োজনের তাগিদে আশেপাশের কয়েকটি গ্রামের অন্তত কয়েক হাজার মানুষ প্রাণহানির শঙ্কা নিয়ে জরাজীর্ণ এবং বেহাল এই ব্রিজটির ওপর দিয়ে চলাচল করছেন। আমরা এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে জরুরিভাবে এখানে নতুন ব্রিজ নির্মাণের জোর দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে এলজিইডির লালমোহন উপজেলা প্রকৌশলী রাজীব সাহা জানান, লালমোহন উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রায় ৩৯টি ব্রিজ খুবই জরাজীর্ণ। আমরা ওইসব ব্রিজ পুনর্র্নিমাণের জন্য কয়েকটি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। ওই প্রস্তাবনাটি পাস হলে এবং বরাদ্দ পেলে জরাজীর্ণ ব্রিজগুলো পুনর্র্নিমাণের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে। ব্রিজগুলো নির্মাণ সম্পন্ন হলে দুর্ভোগ কেটে মানুষের চলাফেরায় স্বস্তি ফিরবে।