চরফ্যাশন ক্যাডেট স্কুল এন্ড কলেজে বার্ষিক বিতর্ক প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ
মধ্যরাত : পর্ব-২৭৮
ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),
(গত পর্বের পর) : আমি অনেকক্ষণ ধরে কি যেন ভাবছিলাম। ঐ অবুঝ শিশুকে দেখে, আমার বন্ধুরা, বন্ধুর বৌরা বলল, কি প্রশান্ত বাবু; কি ভাবছেন ? কি ছেলে দেখে সখ হল নাকি, সংসার বাঁধার ? আমি মুচকি হাসলাম। বললাম- আপনাদের দেখে দেখেই আমার সখ সাধ মিটে গেছে। বয়সও নেই, তারপর ইচ্ছাও নেই। বন্ধুরা সব চলে গেল। দোলার নেওয়ার কথা ডাক্তারকে জানালাম। ডাক্তার বলল- আগামীকাল এসে নিয়ে যান। আমি দোলার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় এলাম। উমা ঘরে ঢুকে ঘরের আলোগুলি সব জেলে দিল। কি খাব জিজ্ঞাসা করল, আমার দুঃখ কষ্টের ব্যথার একটু অংশ গ্রহণ করে। ছোট বোনের মত কাছ থেকে শ্রদ্ধার ডলিয়ে সাজিয়ে রাখে। উমা ছিল আমার চিন্তার ও কল্পনার জগতের একেবারে বাইরের মানুষ। আমি কোনদিন এমন অলুক্ষণে কথা ভাবিনে যে, সুশান্ত এ পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবে, উমা বিধবা হয়ে এসে আমার বাড়ী ঘর আগলে রাখবে। ভবিতব্য কখন কি করেন সে তিনিই জানেন। মানুষ কোন কালে কিছু করতে পারে না, নছিব তাকে কান ধরে উঠায় আর বসায়। আমি যে সংসার বাঁধিনি তাও বোধ হয় সেই অসীম শক্তিমানের ইচ্ছে, না হলে কেন আমি এগিয়ে গেলে ডোরা পিছিয়ে যায়। আমি পিছিয়ে গেলে ডোরা এগিয়ে আসে। এ এক আদিম রহস্য, তার ইচ্ছে নেই সংসার বাঁধি, নাতনী দোলা, উমা এদের নিয়ে বাকী জীবনটা কাটিয়ে দেই।
দোলার সন্তান, স্বামী, সংষার গড়ে উঠবে আনন্দের কল কোলাহলে। হাস্য মুখরিত দিনগুলি ভরে যাবে প্রেম, ভালবাসায়। তাই দেখে আমি স্বস্তি ও সান্তান লাভ করব। আনন্দ পাব। এটাই আমার জীবনের কামনা, আশা-আকাঙ্খা। উমা যদি সুশান্তকে নিয়ে সংসার করতে পারত, আমি কত খুশী হতাম। নিজকে ধন্য মনে করতাম। কিন্তু ভগবান তা দিলেন না। নিয়ে গেল একটা প্রেম-ভালবাসার আত্ম নিবেদনের মুখরিত নিঃসন্তান। একটি কপোত-কপোতির সংসার। ভেঙ্গে দিল এক নিমেষে। মানুষকে ভগবান সবকিছুই দেয় না। কিছু অভাব রেখে দেয়, দৈন্য রেখে দেয়। সে জন্যই কবি বলেছেন- যাহা চাই, তাহা ভুল করে পাই, যাহা চাই তাহা পাই না।
রাতে ঘুমুতে গেলাম ড্রইং রুমের বড় ঘরিটায় তখন রাত ১২টার কাটা থেমে আছে। আমি অপলক নেত্রে তার দিকে চেয়ে আছি। তখন আমার মাথার কাছে ফোন বেজে উঠল, কচ আমার পাশেই শুয়ে আছে। ও দৌড়ে এসে ফোনের রিসিভার কানের কাছে ধরল। বড় করুন ওর মুখখানা দেখছি। দুঃখে ভেঙ্গে পরছে, বলল দাদু ডোরাদি। আমি তাড়াতাড়ি ফোন ধরলাম। বললাম কি ডোরা, বড় কঁকিয়ে কঁকিয়ে বলল প্রশান্ত আমি বড় অসুস্থ্য, একবার আসবে কি ? আমার বড় জ্বর, আর কমছে না। অনবরত বেড়েই চলছে। আমি বড় একা, কাছে কেউ নেই। শুনে বড় মায়া হল, বিদেশে কে কাকে দেখে। বললাম- ডোরা তুমি ভেবনা, দেখি কি করা যায়, আসবার চেষ্টা করব। রাতে আর মোটেই চোখ বুঝতে পারলাম না, ভীষণ চিন্তা হল। এদিকে দোলা এখনও মেটানিটিতে, কাল আনতে হবে। কচ এর ছুটি ফুরিয়ে আসছে, ও চলে যাবে। দোলা সুস্থ হতে এখনও মাস দুয়েক দেরী লাগবে। বাচ্চাটা একটু ঝর ঝরে হলে পর, এরপর শরীর সেরে উঠবে। অনেক জল্পনা-কল্পনা করতে করতে ভোর হয়ে গেল। সেদিন খুব ভোরে উঠলাম।
(চলবে———-)