সর্বশেষঃ

মধ্যরাত : পর্ব-২৭১

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত পর্বের পর) : আমি তবু গাড়ী নিয়ে উদভ্রান্তের মত এদিক সেদিক ঘুরলাম। ডাক্তার খানায় নার্সিং হোমেও থাকতে দেয় না। কচ আছে, তারা স্বামী হিসেবে কনসিডার করেছে। দোলা সেটা বুঝেও বুঝতে জায় না, আমার থাকা অসুবিধা। তবুও মেটানিটির বাইরে রাস্তা ধরে অনেকক্ষণ ঘোরলাম। তারপর দুপুরের দিকে এসে কচকে বললাম- বাড়ী থেকে খেয়ে এস। চল খাবে বাসায় চল। কচ কি যেন বলতে চাইল, বুঝলাম না। তবু ওকে নিয়ে গেলাম, উমা টেবিলে খাওয়া রেডী করে রেখেছিল। আমিও দুটে নাকে মুখে গুজে দিলাম। কচ বোধ হয় কিছু খায় নি, বলল দাদু চলেন। গাড়ী তাড়াতাড়ি স্ট্রার্ট দিলাম। পথে এসে সিগন্যালের অসুবিধা ও বিরাট গাড়ীর লাইনে দাঁড়িয়ে পড়তে হল। মনে হল একটা প্লেন পেলে তখন আমি উড়ে যাই। রাস্তায় সিগন্যাল আছে, কিন্তু আকাশেত সিগন্যাল নেই। নেই শত শত গাড়ীর লাইন। এ আইনের না মেনে উমায় নেই। আমার অস্থিরতা যেন ক্রমশ বেড়েই চলল। চুল টেনে ছিড়ে ফেলতে ইচ্ছে করল, তবু ভদ্রভাবে বসে আছি। কচও ভীষণ অধৈর্য্য হয়ে পরেছে। যাক কিছুটা গাড়ীর লাইন হাল্কা হল, আমি ভীষণ দ্রুত বেগে গাড়ী ছাড়লাম।
কিছুক্ষণের মধ্যে মেটানিটিতে গিয়ে পৌছে গেলাম। সিস্টার এগিয়ে এসে বলল, ছেলে হয়েছে, মিষ্টি মুখ করুন। আমি হেসে উঠে বললাম- পেসেন্ট কেমন আছে। সিস্টার বলল- ভেরী উইক। ওকে এখন স্পেশাল কেয়ারে রাখা হয়েছে। বাচ্চাটিকে বাচ্চাদের ঘরে নম্বর লাগিয়ে রাখা হয়েছে। আমরা সকলে বাহির থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখি কচ দোলার কাছেই আছে। সে সেখান থেকে এক পাও নড়তে দেখিনা। আমি মাঝে মধ্যে দোলার খবর নিয়ে স্বস্তি লাভ করি। সন্ধ্যার দিকে সিস্টার বলল- একটু ভাল দিকে। দু’একটা কথা বলছে। আমি দোলাকে দেখতে চাইলাম, ডাক্তারের অনুমতি মিলল। দোলার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। দোলা আমাকে দেখে কেঁদে ফেলল। আমি বললাম- এই যা কাঁদছে, কোথায় হাঁসবি, না-কাঁদা। ছেলে হল, মা হয়েছিস এখনও ছেলে মানুষি। দোলা চুপ করে থাকল, বললাম- ছেলে দেখেছিস ? বলল না। সিস্টার ছেলেটিকে নিয়ে এল, যেন আকাশের চাঁদের মত স্বচ্ছ, সুন্দর, নাদুস-নুদুস, গোল-গাল। আমি অবাক দেখে, যেন বড়দি-র মুখের মত মুখখানা। বললাম দেখ দেখ দোলা, তোর দিদিমার মুখের মত মুখখানা। দোলা বলল- কই দেখি দাদু।
সিস্টার বাচ্চাটিকে দোলার কাছে এগিয়ে নিয়ে এল। দোলার মুখখানা আনন্দে উদভাসিত হয়ে উঠল। কচ এতক্ষণে মুচকি মুচকি হাসছে। ছেলের দিকে আড় নয়নে চেয়ে চেয়ে দেখেছে। সিস্টার বাচ্চাটাকে পুনরায় বাচ্চাদের রুমে নিয়ে বেী খাটে নম্বর এসে রেখে দিল। এতক্ষণে আমার অস্থিরতা অনেক কমে গেল। দোলার সুস্থ্যতা দেখে ডাক্তার বলল- ভয় নেই, ভয় কেটে গেছে। আমি বাসায় চলে এলাম। বড়দিকে একটা তার করে দিলাম। উমা আনন্দে গদ গদ। দোলার ছেলের আগমনে আমার বাসায় একটা আনন্দের ঢেউ বয়ে গেল। উমা নিজের জীবনে একটি সন্তানের মুখ দেখেনি, আজ সেই সন্তান দোলার ঘরে জন্ম নিল। যেন উমার নিজেরই সন্তান। জীবনের কত সাধ, স্বপ্ন চিল একটি কচি মুখ দেখার। আমার হাতে দু’শ ডলার গুজে দিল। উমা সরু এক ছড়া সোনার চেন আমার দরকার। ছেলের মুখ খালি হাতে দেখা যায় না।

(চলবে———)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।