মধ্যরাত : পর্ব-২৬৯

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত পর্বের পর) : তখন সন্ধ্যা হয়, আকাশ বেশ ঝক ঝকে বকের পালকের মত পরিস্কার। কোথাও মেঘ মেদুরের চিহ্ন নেই। বড় চাঁদটা এককোনে উকি দিচ্ছিল যেন সোনার থালার মত হাসছিল। দুঃখ, বেদনা, হতাশা, ব্যর্থতা, রিক্ততা, তিক্ততা এই নশ্বর পৃথিবীতে আছে বলে মনে হয় না। যেন মনে হয় এই চাঁদের মতই যেন সুখের জীবন, এই বিশ্ব মানব মানবীর। প্রেম, ভালবাসা, সুখ, শান্তিতে ভরা কলহাস্যে ভরা। দরজায় কড়া নড়ে উঠল, কলিং বেল বেজে উঠল, আমি নিজেই দরজা খুলে দিলাম। হেমন্ত আর্কিড কে নিয়ে ঘরে ঢুকল। সন্ধ্যার ¯িœগ্ধ করবীর মত একগুচ্ছ জেসমিনের মত তার রূপ। আমি তাকে বসতে বলতে ভুলে গেলাম। হেমন্ত বলল বস আর্কিড, আমি দোলাকে উমাকে ডেকে দিয়ে কি যেন কাজের কথা বলে কেটে পরলাম। দোলা উমা সেদিন ওর সাথে অনেকক্ষণ গল্প করল। আমি মাঝে মাঝে এঘরে ওঘরে নানা কাজে উছিলায় ঘুরাঘুরি করছিলাম। কচ পাশের রুমে বসে টিভি দেখছিলো। প্রায় ঘণ্টা দুয়েক ওরা গল্প-গুজব করে চলে গেল। যাওয়ার সময় আমাকে বলল, আসি। মেয়েটির যাওয়ার পথে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে কি যেন ভাবলাম। কেমন যেন মায়া মেদুর মুখ খানা কচি কোমল লাউয়ের ডগার মত শরীর। চোখ দু’টি বড় বড় ছল ছল, আবার আসতেও বলিনি। বিদেশে এসেছে অনেক দিন আপন কেহ কাছে নেই, হেমন্তের সাথে ভারি ভাব।
উমা বলল জানেন প্রশান্ত দাদা মেয়েটি বড় নরম, বড় ভদ্র। আমি বললাম মেয়েরা চিরদনি নরম ও কোমল মনা। শত ঝড় ঝাপটা ওরা নীরবে হজম করে। খুব প্রাণ ঘাতক না হলে কাউকে বলে না। সে জন্যই নারীর আরেক নাম স্বার্গাদপি গরিয়সী। দোলা বলল, দাদু মেয়েটি যাদু জানে। এক মুহূর্তে আমার মন জয় করে নিয়ে গেল। মেয়েটাকে আসতে বলেছিস ? দোলা বলল, না দাদু। বলব বলব করে বলা হয়নি। দোলা চুপ করে কি যেন ভাবল, বলল মেয়েটার ¯িœগ্ধ, কাজল কালো রূপের কাছে আমি যেন তন্ময় হয়ে ছিলাম। আমি যেন অবাক হয়ে বললাম, তুই মেয়ে হয়ে একজন মেয়ের রূপের কাছে আত্মহুতি দিলি, এ-ত ভাবলে হাসি পায়। দোলা বলল, তা তুমি বুঝবেনা দাদু। এ মন চুরি করা রূপ। আমি বললাম, নামও শুনলাম আর্কিড। বিধাতার আপন হাতের সৃষ্টি। ধনীরা বিলাসিতায় ড্রইং রুমে গাছের গুড়িতে সযতেœ আর্কিড ফোটায়। আবার গভীর অরণ্যের অনেক পুরনো গাছের বাকলে আর্কিডের সৃষ্টি হয়। মানুষ আনমনা হয়, সুমধুর ¯িœগ্ধ সুরভিতে।
অনেকক্ষণ দোলার কথাগুলো চিন্তা করলাম। দোলা এত ভাল উপমা দিতে জানে। শরীর দোলার তত ভাল না। তবু মেয়ে হয়ে একটি মেয়েকে ওরা কত সহজে বুঝে নেয়। নিজের জীবনে সুখী দোলা, তবু যেন অনুভব অনুভূতি, অনুরাগ-অনুকম্পা দিয়ে মানুষকে নিবিড় করে বুঝে, এটা ওর একটা মস্তগুন। কচ ড্রইং রম থেকে এসে বলল, দাদু আমার ছুটি দু-চার দিনের। দোলাকে আপনার এখানে রেখে যাব। আপনি আছেন, উমাদি আছে; সেই ভরসা। ওখানে আমি অফিসে গেলে ও একদম একা। তাই সেই ভরসায় এলাম। আমি বললাম- নিশ্চয় নিশ্চয়। আমিত এসব কিছুই বুঝিনা। তবে উমা একাই সব গুছিয়ে নেবে। আর এখানেত ডেলিভারীর সময় মেটানিটিতে থাকবে, প্রায় দিন সাতেক সেখানেও খুব ভাল নার্সিং এর বন্দোবস্ত আছে। যতœ আত্মির শেষ নেই, তোমার আমার কিছু করার নেই, ভগবান দেখবেন।

(চলবে——-)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।