সর্বশেষঃ

মধ্যরাত : পর্ব-২৬৮

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন), 

(গত পর্বের পর) : আমরা সকলে সে সময় আর ভালো করে খেতে পারলাম না। দোলা, কচ, হেমন্ত সকলের চোখ ছল ছল করছিল। উমা মাঝে মাঝে কেমন যেন হয়ে যায়। সুশান্তর স্মৃতি ওকে ওরকম অধীর করে তুলে। অহেতুক অভিমান ওর, হৃদয় ভারাক্রান্ত হয়ে অভিমানে ভরে যায়। হেমন্ত কিছুক্ষণ পর চলে গেল। উমা কতক্ষণ দম ধরে বসে থেকে উঠে গেল। দোলার শরীরটা বোধ হয় ভাল ছিল না। কচ কিছুক্ষণ আমার সাথে নানাবিধ আলাপ করে তারপর শোয়ার তাগিদে আড়মোড়া দিচ্ছিল। আমি বললাম কি ? শোবে, যাও, বিশ্রাম কর।
আর আর একা একা কতক্ষণ বসে থাকব। চিরদিনেরই সেই নিঃস্ব বিছানা মেলাই আছে, আমার একার অপেক্ষায়। শুয়ে শুয়ে কত কথা ভাবলাম, সুশান্তর কথা, কেমন হঠঅৎ করে ও চলে গেল। আর উমা আমার কাছে থেকে গেল। ছোট বোনের মত, মান অভিমান, রিক্ততা-তিক্ততার স্বাদ আমাকেই বহন করতে হচ্ছে বিনা বাক্য ব্যয়ে। সুশান্ত আমার অকৃত্তিম বন্ধু ছিল। তাকে ভীষণ ভালবাসতাম বলেই উমার সব দায়িত্ব কেমন করে জানি আমি আমার মনের অজান্তে গ্রহণ করেছি। উমার যখন মুখখানা বড় ক্লান্ত দেখি, বড় অসহায় দেখি, আমি তখন নিজেকে বড় অসহায় বোধ করি। কিছু করতে আমি পারি না, করার কোন উপায়ও আমার নেই। তবু বুকটা আমার হা হা করে উঠে। হিন্দু ধর্মের কি অবিচার, কি কড়া আইন, আর কেউ বিয়ে তর্তে পারবে না বিধবা হলে। কিন্তু আজকাল মানছে কজনে ? যারা মানেনা তারা বেশ আছে, কিন্তু উমা ? ওকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। ও আদ্যি কালের পুরোন, ঘুনে ধরা সমাজ ব্যবস্থার পক্ষপাতি। তাকেই সে মনে প্রাণে শ্রদ্ধা করে। আমিও এ নিয়ে ঘাটাঘাটি করিনা, যে যাতে শান্তিতে থাক থাকুক।
ঢং ঢং করে ড্রইং রুমের বড় ঘড়িতে ১২টার ঘণ্টা পরল। আমি চোখ বুজতে চাইলাম। কিন্তু ঘুমের সঙ্গে-ত আমার চিরকালের আড়ি। এই ঘড়িটা পরম বন্ধুর মত আমার কাজে-কর্মের সাথী। কোন চাওয়া নেই, পাওয়া নেই, কাজ করে যাচ্ছে প্রভু ভক্ত প্রহরীর মত। সেদিন হেমন্ত আমাকে ফোন করল, আর্কিড কে নিয়ে আমার এখানে আসতে চায়। আমি বললাম, আবার ফোন কেন, যখন মনে হয় বা মেয়েটি আসতে চায় নিয়ে এস। আমার মনও নানা চিন্তায় ভরপুর থাকে। অনেক সময় অনেক কথা ভুলেও বসে থাকি, ইউনিভার্সিটির নানা কাজ, ছেলেদের নানা রকম বাঁদরামী সামাল দিয়ে চলতে হয়। তার পর দোলা, উমা এদের মন-মানসিকতার খোজ রাখতে হয়। নিজের কথা আমি মাঝে মধ্যে ভুলে যাই। তবু আমার নিজস্ব জগৎ তো একটা আছে ? অনাদি অনন্ত কালের প্রেম ভালবাসার রিক্ততা।

(চলবে———)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।