সর্বশেষঃ

তজুমদ্দিনে মানুষ-বন্যপ্রাণীর বিরল ভালোবাসা

ডেস্ক রিপোর্ট ॥ মানুষে মানুষে সখ্যতা গড়ে, এটা স্বাভাবিক। তবে বন্যপ্রাণীর সঙ্গে মানুষের সখ্যতার দৃশ্য বিরল। ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলায় হরিণের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে রীতিমতো আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন নূরুল্যাহ নামে এক বন কর্মী। তিনি হরিণটির নাম দিয়েছেন শশী। ওই নামে ডাকলে সাড়া দেয় হরিণটি।
জানা গেছে, প্রায় চারমাস আগে তজুমদ্দিনের বিচ্ছিন্ন চরমোজাম্মেলের বন থেকে দলছুট হয়ে লোকালয়ে আসে একটি মা হরিণ। ওই হরিণটি একটি বাচ্চা প্রসব করে শিকারীদের ভয়ে আবার বনে ফিরে যায়। পরে স্থানীয়রা বন বিভাগের লোকজনকে সংবাদ দিলে বনকর্মীদের একটি টিম শশীগঞ্জ বিটের বিট কর্মকর্তা কাজী রোমেল হোসেনের নেতৃত্বে চরে গিয়ে হরিণের বাচ্চাটি উদ্ধার করে শশীগঞ্জ বনবিটের আওতায় আনেন। এরপর ওই হরিণের বাচ্চাটিকে পরম যতেœ লালন-পালন করেন নূরুল্যাহ সিকদার নামে এক বনকর্মী।
প্রথমদিকে নূরুল্যাহ হরিণের বাচ্চাটিকে দৈনিক দেড় লিটার গরুর দুধ খাওয়াতেন এবং রাতের বেলায় তার সঙ্গে একই খাটে রাখতেন। একপর্যায়ে নূরুল্যাহর সঙ্গে মানুষের খাবার ভাত, কলা-রুটি, বিস্কিটসহ অন্যান্য খাবার খাওয়া শুরু করে। বনকর্মী নূরুল্যাহর সঙ্গে হরিণের বাচ্চাটির এমন সখ্যতা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। প্রতিদিন স্থানীয় লোকজন বনকর্মী ও হরিণের সখ্যতা দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন শশীগঞ্জ বনবিট অফিসে।
স্থানীয় দলীল লেখক খোকন দাস বলেন, বনকর্মী নূরুল্যাহর সঙ্গে হরিণের বাচ্চাটির গত সাড়ে চার মাসে যে সখ্যতা গড়ে উঠেছে এটি সত্যিই একটি বিরল ঘটনা। প্রতিদিনই হরিণ ও মানুষের এমন সখ্যতা দেখতে এলাকাবাসী ফরেষ্ট অফিসে ভিড় জমাচ্ছেন। হরিণের সঙ্গে মানুষের এমন সখ্যতা সমাজে ভালোবাসার এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
এ নিয়ে বনকর্মী নূরুল্যাহ সিকদার জানান, উদ্ধারের পর হরিণের বাচ্চাটিকে পরম মমতায় লালন-পালন করায় হরিণটি এখন আমাকে ছাড়া কিছুই বুঝে না। হরিণের বাচ্চাটি সারাক্ষণ আমার সঙ্গে থাকায় মানুষের খাবার ভাত, মাছ, তাজা সবজিসহ অন্যান্য সব খাবার খায়। তিনি আরো জানান, সরকারি নিয়মানুযায়ী হরিণের বাচ্চাটিকে আর কয়েকদিনের মধ্যে বন, চিড়িয়াখানা অথবা সাফারি পার্কে অবমুক্ত করতে হবে। তখন হয়তো সাময়িক কষ্ট হবে। তারপরও সরকারি আইন মানতেই হবে।
দৌলতখানের রেঞ্জ বন কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, হরিণের বাচ্চাটিকে দীর্ঘদিন আমাদের কর্মীরা লালন-পালন করায় সেটির ভয় দূর হয়ে গেছে। এ জন্য হরিণটি মানুষের সঙ্গে মিশে গেছে। তাই এটি বনে অবমুক্ত করলে শিকারির কবলে পড়ার ঝুঁকি থাকে। সেজন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে নির্দেশনা অনুযায়ী ওই হরিণটির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।