মধ্যরাত : পর্ব-২৬৭

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত পর্বের পর) : আমি মনে মনে হাসলাম। এটা পুরুষের কথা নয়। এগুলো দুর্বল চিত্তের মেয়ে মানুষের কথা। যারা সত্যিকারের সাধক, তার সাধনাকে কেহ টলাতে পারে না, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সে তার একনিষ্ঠ সাধনার ধ্যান করে যায়। হেমন্ত চোখ বড় বড় করে আমার ও কচের কথাগুলি শুনছিল। আর মুচকি মুচকি হাসছিল। কচ খুব গম্ভীর হয়ে কি যেন ভাবছিল। আম আর কথা বাড়ালাম না। তাড়াতাড়ি সরে গেলাম। দোলা তখন ড্রইং রুমে বসে বুক শেলফে বইগুলি গুছিয়ে রাখছিল। আমার বিছানার চাদর ঝেড়ে ঝেড়ে বিছানায় রাখছিল। আমি দূর থেকে ওর সব কাজগুলি উপলব্ধি করছিলাম। বালিশ দুটুকে নেড়ে চেড়ে হাত দিয়ে উলটিয়ে পালটিয়ে নরম করে সুন্দর করে রাখল।
উমা কিচেনে সকলের লাঞ্চের যোগার করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। আমি ভার্সিটিতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলাম। উমা বলল দাদা, দোলাকে একটু ডাক্তার দেখানো দরকার। আমি বললাম আচ্ছা হবে। হেমন্ত পাক ঘরে কয়েকবার আনাগোনা করল। উমা এখন কাজে ব্যস্ত, ওর গল্প করার সময় কোথায় ? তবু দোলা এসে বলল, এস হেমন্ত; আমরা গল্প করি। তোমাকে দেখলে আমার ছোট ভাই ইন্দ্রলীল এর কথা মনে পরে। কতদিন ওদের দেখিনা। দুষ্টু দুটোর চিঠিও অনেক দিন পাইনি। আমি বাইরে বেরুবার জন্য পা বাড়ালাম। উমা ডাকল দোলা এদিকে এস। কচ কি খাবে ? কি রাধব ? একটু বলে দাওনা। উমা কিচেনে বসে পটল, আলু, বেগুন কাটছিল। দোলা এসে বলল উমাদি, খিচুরী করো, আর মাংস রাঁধো। নিজের হাতের রাধার চোয়ে কেউর হাতের রান্না খুব ভাল লাগে। আমি নিজে রাঁধলে একদম খেতে ইচ্ছে করে না। উমা বলল, এসময় এরকমই লাগে। দোলা বলল, তুমি জান কি করে ? উমা বলল আমি নিজে ভুক্তভোগী না হলেও শুনেছি লোকের মুখে। উমা বলল দোলা, তুমি ড্রইং রুমে যেয়ে হেমন্তের সাথে গল্প কর। দোলা ড্রইং রুমে যেয়ে বসল। বলল হেমন্ত গল্প কর, গল্প আর কি বলব, মানুষের জীবনটাই একটা গল্প।
আমি মনে মনে ছেলেটির প্রসংসার না করে থাকতে পারলাম না। তবু হেমন্ত দোলাকে বলল দিদি বাংলাদেশ থেকে আর্কিড নামে একটি মেয়ে এসেছে। এখানে ইউনিভার্সিটিতে পড়াশুনো করতে। তার মুখেই শুনবেন তার সত্যিকার জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতা। দোলা বলল, কতদিন হয় এসেছে হেমন্ত ? হেমন্ত বলল প্রায় ৩-৪ মাস। আমি বললাম, একদিন নিয়ে এস। দোলা বলল, মা বাবা আছে ? হেমন্ত বলল, সব আছে, কিন্তু তার দুর্ভাগ্য———। তখন রাত গড়িয়ে যাচ্ছিল। আমি বললাম, হেমন্ত খেয়ে নাও, হেমন্ত মুখ কাচু মাচু করছিল। তবু বসে বসে অনেক কথা বলল। উমা টেবিলে সকলের জন্য একখানা করে প্লেট রাখল। দোলা কচকে টেনে হিচড়ে উঠে বসাল। কচ চোখ কচলে, চোখ বড় বড় করে বলল, ওমা এত রাত হল, যাই ¯œানটা সেরে আসি, এই বলে তাড়াতাড়ি বাথরুমে ঢুকে পরল।
হেমন্ত অনেকক্ষণ দোলার সাথে বসে কথা বলল। বলল, জানেন দোলাদি আপনিত কত সুখী। দাদু পেয়েছেন; এত প্রাণ খোলা, দিল খোলা, উদার-উজার সাগরের ত হৃদয়। স্বামী পেয়েছেন আপন ভোলা। শিশুর মত সরল সহজ, প্রাণবন্ত। আপনাকে দেখলে আমার ভালো লাগে, আবার অবাক হই, এত সুখ ভগবান একজনকে কেমন করে দেয়। আর একজন মেয়ে নিজের সবকিছু বিলিয়ে দেয়, অথচ প্রতিদানে কিছুই মেলেনা। হতাশা, ব্যর্থতা, রিক্ততার গ্লানিতে হৃদয় ছেয়ে থাকে বলেই বলে বেরাত। আমি চুপচাপ হেমন্তকে অবলোকন করছিলাম। ওর মধ্যে কচ বাথরুম থেকে বেরিয়ে এল। আমরা খেতে বসলাম। খিচুড়ীর গরম গরম সুগন্ধে সৌরভ, বেগুন ভাজার গন্ধ আমাদের রসনা সুপ্ত হয়ে উঠল। আমি দোলা, হেমন্ত, কচ কিন্তু উমা ? উমা কই, আমি উঠে কিচেনে উকি দিলাম, দেখলাম উমা ওভেনের কাছে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বললাম, তুমি খাবে না উমা ? উমা বলল, না আপনারা খান, আমি পরে খাব। উমার মনে মাঝে মাঝে সুশান্তর কথা উদয় হয়, কি করবে বেচারী। এত সহজ এত বছরের ঘর সংসারকে কেহই এত সহজে ভুলবে ? মানুষ পারে না। উমাও তাই সহজে মেনে নিতে পারে না। আমি হেমন্তকে বললাম, যাও সামীমাকে ধরে নিয়ে এস। হেমন্ত খাওয়া ফেলে উমাকে হাত ধরে কাছে এনে বলল, মাসীমা আপনি না খেলে আমি খাব না। উমা ঝর ঝর করে কেঁদে ফেলল।

(চলবে——-)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।