মধ্যরাত : পর্ব-২৬৬

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন), 

(গত পর্বের পর) : তবু দোলাকে দেখে অনেকটা স্বস্তি ও সান্তনা পাই। ও যেন আমাকে অন্তর থেকে ভালবাসে, শ্রদ্ধা করে। আমিও যেন ওকে ¯েœহ করি, ভালজানি, ভালবাসি। ডোরা আমাকে কেন এমনি আকরে ধরে রাখল না। কেন আমাকে নিবিড় ভালবাসার বাঁধনে জড়িয়ে নিলাম। কোন লজ্জাবতী লতার মত আমার বুকে লেপটে থাকল না। কেন আমাকে কখন, কোনদিন জোর করল না। প্রশান্ত তুমি আমার——কেন ? কেন ? কেন ? কোন করল না অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবী আমিত চিরদিন নিরব নির্বিকার ছিলাম। আমি জোর করতে শিখিনি। মাকে হারানোর পর থেকে আমি যেন কারও উপর জোর করতে ভুলে গিয়েছিলাম, সাহস শক্তি মনোবল আমার ভেঙ্গে গিয়েছিল।
আজ আমার কেহ নেই, কিছু নেই, তবু আমি বেঁচে আছি। আরো হয়ত বহুদিন বাঁচব, কিন্তু কি নিয়ে বেঁচে থাকব। কিসের আশায়, কিসের মোহে ? অনেক দুঃখে-বেদনায় আমার দুটো চোখ বুজে এল। তখন সন্ধ্যা হয় হয়, উমা ঘরে ঘুপ-ধুনা দিচ্ছিল। দোলা আমার ঘরে ঢুকে মাথায় হাত রাখল। বলল ও দাদু, এখন সন্ধ্যা বেল ঘুমাচ্ছ ? কি ব্যাপার, শরীর খারাপ হয়নি-ত ? আমি চোখ কচলাতে কচলাতে উঠে পরলাম। তাইত এখন অবেলায় কেহ শুয়ে থাকে নাকি ? এমন সময় দরজায় কলিং বেলটা বেজে উঠল। দোলা চলে গেল দেখার জন্য। আমিও এগিয়ে গেলাম দেখার জন্য, হেমন্ত দাঁড়িয়ে আছে। দোলা ওকে স্বাদরে ঘরে নিয়ে এল। হেমন্ত একটা সোফায় বসল। আমি হাত-মুখ ধুয়ে হেমন্তর একটা কাছের সোফায় বসে পরলাম। দোলাও সোফায় বসল। উমা ঘুরে ঘুরে ধুপের নৈবেদ্য হাতে ধুনা দিচ্ছিল। সমস্ত ঘর একটা ¯িœগ্ধ দুরভিত সুগন্ধে যেন পবিত্র হতে পবিত্রতর হতে লাগল।
তবু আমি চুপ হয়ে ভাবছিলাম অনেক অনেক কথা। দোলা হেমন্তকে চা দিল; আমাকে এক কাপ চা দিল। আমি গরম চায়ে চুমুক দিলাম। যেন শরীরটা ঝর ঝরে হয়ে গেল। মনে যেন একটা তৃপ্তি ফিরে এল। উমা ধুপ ধুনার ও সন্ধ্যার আরতি শেষ করে আমার কাছে ফিরে এল, এসে হেমন্তর পাশে বসে বলল, কেমন আছ বাবা, হেমন্ত খুশী খুশী মনে বলল ভাল আছি। আপনি কেমন আছেন মাসি মা। কচ তখনও ড্রইং রুমে শুয়ে শুয়ে ঘুমুচ্ছিল। বললাম, এইযে উঠেবেন না, চা খাবেন না ? বলল না আমি এখন ঘুমুব। আমি বললাম, শ্যাম সুন্দর কি খালি পরে পরে কুমিরের মত ঘুমুচ্ছে। এত বাজনা জান শুনাও না। মান-মন্দিরের মানস প্রতিমাকে পেয়ে সব খেয়ে বসে আছে। কচ বলল সত্যি বলেছেন দাদু, এখন আর অত সুন্দর বাজনা আমার তাতে উঠে না, অত গানের সুর আগের মত আমি আর তুলতে পারি না। কেন জানি সব ভুলে যেতে বসেচি। মনে হয় দাদু, দোলাই ছিল আমার জীবনের সাধনা, বাসনা, কামনা। সুর, ছন্দ, তাল লয়, কাব্য কবিতা, গীতি উপন্যাস। দোলাকে পেয়ে মনে হয় জীবনের সব চোওয়া ও পাওয়া আমার শেষ।

(চলবে——)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।