লালমোহনে জরাজীর্ণ কমিউনিটি ক্লিনিকেই চলছে স্বাস্থ্যসেবা

স্টাফ রিপোর্টার, লালমোহন ॥ প্রান্তিক জনগণের দোরগোড়ার স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করে সরকার। তারই ধারাবাহিকতায় পর্যায়ক্রমে ভোলার লালমোহন উপজেলায় নির্মাণ করা হয় ৩৪টি কমিউনিটি ক্লিনিক। এসব কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষ বিনামূল্যে ওষুধ এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন। তবে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো নির্মাণের পর থেকে দীর্ঘদিন মেরামত বা কোনো প্রকার সংস্কার না করায় সেই কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো এখন নিজেই রুগ্ণ হয়ে গেছে। উপজেলার ৩৪টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে এখন ২২টির অবস্থা খুবই জরাজীর্ণ। জরাজীর্ণ এসব ভবনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেবা দিচ্ছেন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা (সিএইচসিপি)। ঝুঁকিতে আছেন এসব কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা নিতে আসা রোগীরাও।
সূত্রে জানা গেছে, লালমোহন উপজেলার ৩৪টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে ২২টির অবস্থা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এরমধ্যে দ্রুত সময়ের মধ্যে পুনঃনির্মাণ দরকার ৭টি কমিউনিটি ক্লিনিক ভবনের। পুনঃনির্মাণযোগ্য এসব কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো হচ্ছে- কুলচড়া, পূর্ব চতলা, চরমোল্লাজী, লেজ ছকিনা, আসুলি, ফাতেমাবাদ এবং দক্ষিণ ফরাজগঞ্জ কমিউনিটি ক্লিনিক। এছাড়া আরো ১৫টি কমিউনিটি ক্লিনিক ভবন মেরামত করা জরুরি। না হয় যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
লালমোহন উপজেলার ধলীগৌরনগর ইউনিয়নের চরমোল্লাজী কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) মো. শহিদুল ইসলাম মুরাদ বলেন, এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের অসহায় মানুষদের সেবা দিচ্ছি। তবে বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে আমার কমিউনিটি ক্লিনিকের ভবনটি খুবই জরাজীর্ণ হয়ে রয়েছে। বৃষ্টি এলে ছাদ ছুঁইয়ে ভেতরে পানি পড়ে। ভেঙে গেছে ক্লিনিকের দরজা-জানালাগুলোও। প্রায় সময়ই ভবনের ছাদ ও দেয়াল থেকে খসে পড়ছে পলেস্তরা। এতে করে ব্যাপক ঝুঁকিতে রয়েছি। যার জন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে ভবনটি নতুন করে নির্মাণ করা জরুরি।
ওই কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা নিতে আসা বেগম শাহানাজ ও মো. হাসান উদ্দিন জানান, এই এলাকাটি উপজেলা সদর থেকে অনেক দূরে। যার জন্য আমাদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার ভরসা কেন্দ্র এই কমিউনিটি ক্লিনিকটি। বিগত দিন আমরা স্বাচ্ছন্দে এখান থেকে সেবা নিতে পারলেও এখন ক্লিনিকে যেতে ভয় হয়। কারণ কমিউনিটি ক্লিনিকটির বিভিন্ন স্থানে ফাঁটল ধরেছে। ভবনের ছাদ ও দেয়াল থেকে পলেস্তরা খসে পড়ছে। খুব শিগগিরই যদি এই কমিউনিটি ক্লিনিকের ভবনটি নতুন করে নির্মাণ না করা হয় তাহলে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
উপজেলার কুলচড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি রীতা রায় বলেন, নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে নিয়মিত ক্লিনিকে আসছি। তবে ক্লিনিকের অধিকাংশ স্থানে ফাঁটল ধরেছে। একটু বৃষ্টি হলে আর ভেতরে বসা যায় না। এসব কারণে আমিসহ এখানে সেবা নিতে আসা রোগীরাও ব্যাপক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। যার জন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে এই কমিউনিটি ক্লিনিকের ভবনটি নতুন করে নির্মাণ না করা হলে যেকোনো সময় ধসে পড়তে পারে।
পূর্ব চতলা কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি মো. আকতার হোসেন জানান, ১৯৯৬ সালে এই কমিউনিটি ক্লিনিকটি স্থাপন করা হয়। স্থাপনের পর থেকে ক্লিনিকের ভবনটি একবারের জন্যও মেরামত করা হয়নি। যার ফলে ভবনটি এখন খুবই জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। বর্তমানে ভবনের বিভিন্নস্থান খসে পড়ছে। অতি শিগগিরই এই কমিউনিটি ক্লিনিকের ভবনটি নতুন করে নির্মাণ জরুরি। না হয় চরমভাবে ব্যাহত হবে প্রান্তিক জনগণের স্বাস্থ্যসেবা।
এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. তৈয়বুর রহমান বলেন, উপজেলার কয়েকটি কমিউনিটি ক্লিনিকের ভবন বর্তমানে একেবারে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। এগুলো নতুন করে নির্মাণ করতে হবে। এছাড়া আরো কয়েকটি ক্লিনিক রয়েছে যেগুলোও মেরামত করা দরকার। এসব নিয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। যেসব কমিউনিটি ক্লিনিক পুনঃনির্মাণ ও মেরামতের প্রয়োজন তা পর্যায়ক্রমে করা হবে বলে তারা আশ্বাস দিয়েছেন।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।