লালমোহনে বেড়েছে সূর্যমুখীর চাষ
জাহিদ দুলাল ॥ ভোলার লালমোহন উপজেলার বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে হাসছে সূর্যমুখী ফুল। এই সূর্যমুখীকে কেন্দ্র করে স্বপ্ন বুনছেন উপজেলার কৃষকরা। প্রতি বছরই এ উপজেলায় বৃদ্ধি পাচ্ছে সূর্যমুখীর আবাদ। গত বছরের চেয়েও এ বছরও বেড়েছে সূর্যমুখীর চাষ। চলতি বছর লালমোহন উপজেলার ১৭৫ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ হয়েছে। যেখানে গত বছর এই উপজেলায় ১৬২ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ হয়েছিল। চলতি বছর লালমোহনে কাবেরী, হাইসান-৩৩, আরডিএস-২৭৫ এবং বারি সূর্যমুখী-২সহ বেশ কয়েকটি জাতের সূর্যমুখীর চাষ করেছেন কৃষকরা।
লালমোহন উপজেলার পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের পাঙাশিয়া গ্রামের চাষি মো. হারুন বলেন, কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী এ বছর প্রথমবারের মতো ১৬০ শতাংশ জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করেছি। বর্তমানে ক্ষেতে ফসল অনেক ভালো দেখা যাচ্ছে। এ ফসল সংগ্রহ করা পর্যন্ত ৫০ হাজার থেকে ৫৫ হাজার টাকার মতো খরচ হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে এ বছর ক্ষেত থেকে লক্ষাধিক টাকার ফসল সংগ্রহ করতে পারবো ইনশাআল্লাহ।
লালমোহন উপজেলার লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের প্যায়ারী মোহন গ্রামের চাষি পুরঞ্জিত চন্দ্র দাস বলেন, গত বছর একশত শতাংশ জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করেছি। ওই বছর ফলন ভালো হওয়ায় চলতি বছর দুইশত শতাংশ জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করেছি। এ বছর চাষাবাদে অন্তত ৬২ হাজার টাকার মতো খরচ হবে। তবে ক্ষেত থেকে এ বছর এক লাখ ত্রিশ হাজার টাকার ফসল সংগ্রহ করতে পারবো। সূর্যমুখী চাষের পর থেকে নিজেদের রান্নায় এই তেলই ব্যবহার করছি। পারিবারিক চাহিদার পর অতিরিক্ত থাকা তেল বাজারে বিক্রি করি।
উপজেলা কৃষি অফিস বলছে, এসব সূর্যমুখী চাষিদের কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। তবে চাষে কৃষকদের নিজস্ব খরচ রয়েছে- জমি প্রস্তুত, সেচ, কীটনাশক ও শ্রমিকদের মজুরি। এ উপজেলার চাষিরা আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে তাদের ফসল সংগ্রহ করতে পারবেন। চলতি বছরে সবচেয়ে বেশি সূর্যমুখীর চাষ করেছেন পশ্চিম চরউমেদ, লর্ডহার্ডিঞ্জ ও লালমোহন ইউনিয়নের কৃষকরা।
এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আবু হাসনাইন বলেন, কৃষি অফিসের নানামুখী পদক্ষেপের কারণে এবং তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকরা সূর্যমুখী চাষের দিকে ঝুঁকছেন। প্রতি বছরই লালমোহনে সূর্যমুখীর আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষকদের ক্ষেতে ফলনও ভালো দেখা যাচ্ছে। আমাদের কর্মকর্তারা নিয়মিত কৃষকদের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন। আবহাওয়া ভালো থাকলে চাষিরা ভালো ফলন পাওয়ার পাশাপাশি তাদের ফসলের ন্যায্য মূল্য পেয়ে অধিক লাভবান হবেন বলে আশা করছি।
এ কৃষি কর্মকর্তা আরো বলেন, সূর্যমুখী তেলের পুষ্টিগুণ যেমন বেশি তেমনি অন্যান্য তেলের তুলনায় এটি অধিক স্বাস্থ্যসস্মত। অধিক হারে এর চাষ বৃদ্ধি করা গেলে পুষ্টি চাহিদা অনেকাংশে পূরণ হবে এবং ভোজ্য তেলের জন্য বিদেশ নির্ভরতা কমে যাবে । এছাড়া আগামীতে কেউ যদি নতুন করে সূর্যমুখী চাষে আগ্রহী হয় তাহলে আমরা সব সময় তাদের পাশে থাকবো।