অগ্নিঝরা ১৭ মার্চ

ডেস্ক রিপোর্ট ॥ একাত্তরের মার্চের প্রতিটি দিনই কাটছিল আন্দোলন ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। আজকের দিনে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে টানা ১৪ তম দিনের মতো চলে অসহযোগ আন্দোলন। এদিন বঙ্গবন্ধু ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে তৃতীয় দিনের মতো বৈঠকে বসেন। বৈঠকে বঙ্গবন্ধু জনগণের গণতান্ত্রিক রায়ের ভিত্তিতে ক্ষমতা হস্তান্তর এবং ছয় দফার ভিত্তিতে সংবিধান প্রণয়নের প্রশ্নে অটল থাকেন। অন্যদিকে ইয়াহিয়া খান জনগণের ভোটে নির্বাচিতদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে অস্বীকৃতি জানান। ফলে বৈঠকে শুরু হয় অচলাবস্থা। এক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু ও ইয়াহিয়া খানের মধ্যে আলোচনা ভেঙে যায়। বৈঠক শেষে প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে বঙ্গবন্ধুর গাড়ি বের হয়ে আসেন। আগের মতোই তার সাদা গাড়ির এক পাশে কালো পতাকা এবং অপর পাশে শোভা পাচ্ছিল বাংলাদেশের প্রস্তাবিত মানচিত্রখোচিত পতাকা।
বৈঠক থেকে বেরিয়ে আসার পথে সাংবাদিকরা বঙ্গবন্ধুর গাড়ি ঘিরে ধরেন। বঙ্গবন্ধু গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসলে সাংবাদিকরা তার কাছে আলোচনার ফলাফল সম্পর্কে জানতে চান। তখন জাতর পিতার উত্তরটি ছিল এমন- ‘আলোচনার ফলাফল বলার সময় আসেনি।’ এর পরই সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘সংগ্রাম জোরদার হতে পারে।
ইয়াহিয়ার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর বৈঠক ভেঙে যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে ঢাকার রাজপথে নেমে আসে জনতার ঢল। বায়তুল মোকাররম মসজিদ এলাকায় ছাত্র ইউনিয়নের প্রতিবাদ সমাবেশে ছাত্র নেতারা ঘোষণা করেন, ‘বাংলার মানুষ এখন যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। আর কোনো বৈঠক দরকার নেই। স্বাধীনতা ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই।
একাত্তরের আজকের দিনেই টিক্কা খান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে উত্থাপিত নৃশংস কার্যকলাপের অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দিলে বঙ্গবন্ধু তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, ‘সামরিক কর্তৃপক্ষ নিযুক্ত তদন্ত কমিশন মানি না। এদিন গভীর রাতে ঢাকায় পাকিস্তান জেনারেলদের গোপন বৈঠক বসে। মূলত ইয়াহিয়া খানের আলোচনা নাটকের আড়ালেই চলতে থাকে ইতিহাসের নৃশংস হত্যাকা-ের পরিকল্পনা। এ রাতেই প্রেসিডেন্ট ভবনে ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে টিক্কা খানের বৈঠক হয়। গভীর রাতেই জেনারেল খাদেম হোসেন রাজাকে চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। ঢাকায় সামরিক জান্তার বৈঠকে বাঙালি হত্যার নীলনকশা ‘অপারেশন সার্চলাইট’ চূড়ান্ত করা হয় এদিনই। বাঙালীকে দমিয়ে রাখতে দীর্ঘ সময় ধরে সব ধরণের ষড়যন্ত্রেরই আশ্রয় নেয় সামরিক জান্তা। কিন্তু বলাই বাহুল্য, শেষ পর্যন্ত তাদের সব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিয়েই বাঙালী ছিনিয়ে স্বাধীন একটা দেশের মানচিত্র।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।