লালমোহনে প্রায় ১২৫ বছর ধরে সংঘবদ্ধ ঐতিহ্যবাহী ‘চিলার গোষ্ঠী’

জাহিদ দুলাল ॥ ভোলার লালমোহনে প্রায় ১২৫ বছর যাবত সংঘবদ্ধভাবে বসবাস করছেন চিলার গোষ্ঠী নামে এক জনগোষ্ঠী। জানা যায়, এই চিলার গোষ্ঠীর আদি নিবাস ছিলো নোয়াখালীর চর জুবলীতে। নদী ভাঙনের কারনে নোয়াখালী থেকে তখনকার চর শাহবাজপুরের বুড়িরধোন বর্তমান ভোলার লালমোহন উপজেলার লর্ডহাডিঞ্জ ইউনিয়নে চলে আসেন। সেই থেকে এই চিলার গোষ্ঠী এখন পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ ও সংঘবদ্ধ।
লর্ডহাডিঞ্জ ইউনিয়নের চিলার গোষ্ঠীর বাসিন্ধা লর্ডহাডিঞ্জ ফাজিল মাদ্রসার সহকারী শিক্ষক মো. ফখরুল আলম একলাছ জানান, আমাদের পূর্বপুরুষদের বাড়ী ছিল নোয়াখালী জেলার চর জুবলীতে। সেখান থেকে আনুমানিক ১৯০০ সালের দিকে নদী ভাঙনের কারনে পূর্বপুরুষগণ তৎকালীন শাহবাজপুর চরে চলে আসে। চিলার গোষ্টী নাম হয়েছে মূলত তখন চরজুবলীতে সি ইউ ড্যাব (ভূমি কর্মকর্তা) জমি বন্দোবস্ত দিতে আসেন। তিনি যখন আমাদের বাড়ীতে আসেন তখন আমাদের বাড়ীর গাছে একটি চিল বসে ছিল। তখন সি ইউ ড্যাব চিল দেখে আমাদের বাড়ীকে বলেন চিলার বাড়ী। সেই থেকে আমাদের বাড়ীর নাম হয়ে যায় চিলার বাড়ী। পরে নদী ভাঙনের কারনে যখন ভোলার লালমোহনে তৎকালীন শাহবাজপুর চরে চিলার বাড়ীর লোকজন চলে আসে। এখানে এসে তারা সবসময় একতাবদ্ধ ছিল। তখন একত্রে ২০টি পরিবার এখানে আসে। এই এলাকায় আসার পর বাহিরের কেউ চিলার বাড়ীর লোকজনকে ক্ষতি করার চেষ্টা করলেই সকলেই একতাবদ্ধ হয়ে তা মোকাবেলা করত। সেই থেকে এখানে আমাদের পদবী হয়ে যায় চিলার গোষ্ঠী। এখন আমরা চিলার গোষ্ঠী নামে পরিচিত। এখন প্রায় একশ পরিবার এখানে রয়েছে। চিলার গোষ্ঠীর বর্তমানে ভোটারের সংখ্যা সাত শত এর উপরে। এখনো আমরা সু-সংগঠিত, সুসংহত, সাহসী। আমরা কখনো অন্যায় করতাম না এবং অন্যায়কে প্রশ্রয় দিতাম না। এজন্য সকলেই আমাদেরকে ভালো বাসতেন এবং অন্যায়কারীরা ভয়ে থাকতেন। তখনো ছিলার গোষ্ঠী ছিল স্বচ্ছল এখনো আমরা সকলেই প্রায় স্বচ্ছল। আমরাই এই এলাকার তখন থেকেই নেতৃত্ব দিয়ে আসছি। আমাদের ছিলার গোষ্ঠীর রকবত আলী মিয়া ছিলেন তৎকালীন এখানকার প্রেসিডেন্ট। এরপর মাইঝা মিয়ার (বিচার শালিস করতেন) প্রচলন হলে নুর মোহাম্মদ মিয়া ছিলেন মাইঝা মিয়া। এরপর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার হন আবদুল হাই মিয়া, আবুল কাশেম মিয়া, বর্তমানে লর্ডহাডিঞ্জ ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের মেম্বার শাহাদাত মিয়া রয়েছেন। গত প্রায় ৪৫ বছর ধরে আমাদের মধ্য থেকে ইউপি সদস্য নির্বাচিত হচ্ছে। চিলার গোষ্ঠী সকল নির্বাচনে সবাই ছিলেন একমূখী। এজন্য সকল নির্বাচনের সময় চিলার গোষ্ঠীর কাছে ভোট চাইতে প্রার্থীরা আসতেন এখনো আসেন।
চিলার গোষ্ঠীর বর্তমান ৭নং ওয়ার্ডের মেম্বার শাহাদাত মিয়া বলেন, আমাদের চিলার গোষ্ঠীর মধ্যে ছিল বড় মিয়া ছিলেন হাজী আ: শহিদ, ছোট মিয়া ছিলেন হাজী মোস্তফা মিয়া, এছাড়া বিচার শালিস ও সামাজিক ন্যায়বিচার করতেন হাজী বশির উল্যাহ ডিলার, হাজী সৈয়দুর রহমান, হাজী বদিউজ্জামান, হাজী ছানাউল্যাহ মিয়া, আবুল হাসেম ঢালী, মনছুর আহমেদ, মৌলভী সেরাজল হক। এখানে তারা বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরীতে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন। বর্তমানে আমাদের মধ্যে রয়েছে সরকারি চাকুরীজীবি, অধ্যাপক, শিক্ষক, রাজনৈতিক নেতা, প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, কৃষকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। তবে সবাই এখনো আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি। আশা করছি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মও এই ধারা অব্যাহত রাখবে। এখানে আমাদের রয়েছে চিলার গোষ্ঠী ঐক্য পরিষদ। সেখানে ফান্ড রয়েছে প্রায় ১৬ লক্ষ টাকা। এই টাকা চিলার গোষ্ঠীর মধ্যে বিপদগ্রস্থ, অসুস্থতায় যাদের সামর্থ নাই বা সমস্যা তাদের কল্যানে ব্যায় করা হয়।