সর্বশেষঃ

মধ্যরাত : পর্ব-২৪১

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরতœ),

(গত পর্বের পর) : দোলার জন্য আমিও পথ চেয়ে আছি, ও কখন আসবে তা-তো জানি না। দু’জনে কদিন একটু এক সাথে থাকুক, ঘুরুক-ফিরুক। এই গিয়েই বায়না ধরেছে আমি দাদুর কাছে যাব। আমি নিষেধ করলাম, থাক ক’দিন বেচারা কচ–কি ভাববে। মেয়েটা খালি দাদু দাদু করে। দোলা এখনও বড্ড ছেলে মানুষ। হানি মুনে গেল। আমাকে ধরে বেঁধে নিয়ে গেল মায়ামি, আমি আবার সুশান্ত কে নিয়ে গেলাম। সেখানে গিয়েই যত অনিষ্টের মুল। সুশান্ত অসুস্থ সেখান থেকেই হল। আর দোলা-কচ ? তারাও হিং¯্র জন্তুর আক্রমনে ক্ষত-বিক্ষত হয়েছিল। কপাল ভাল দু’জনেই বেঁচে গেল। দোলা অন্তসত্বা থেকেও সে রকম কোন ক্ষতি হয়নি। আমিত ভেবেছিলাম এভারসন না হয়ে যায়। সবই ভগবানের কৃপা। দোলার জন্য কত জন পথ চেয়ে আছে।
কচের বড় ভাই বিশ্বজিৎ ও মাধুরীর ওদেরও কোন সন্তান সন্ততি নেই। ওরাও বড় আশায় পথ চেয়ে আছে। বিশ্চজিৎ ও কচকে (ছোট ভাইকে) নিজের ছেলের মত মানুষ করেছে। মাধুরিত কচ একবেলা না খেয়ে তার খাওয়া-দাওয়া বন্ধ। এতবড় ছেলে কচ, তাকে ভাত মেখে তুলে খাইয়ে তবে ছেড়েছে। দোলাকে কুসুমের বিয়েতে দেখে তবেই পছন্দ করে ফেলল। কুসুমেরও দোলার আগে বিয়ে হয়েছে, এখনও বাচ্চা আসেনি। দোলার ইচ্ছে সকলের সখ, বাচ্চার জন্য। দোলা-ত বাচ্চা হতে আমার কাছে থাকতে চায়। যদিও বিশ্বজিৎ মাধুরি কিন্তু কোন আপত্তি তুলে নাই। আমি আবার ভয় পাই তাদের বংশধর, তারা না অসন্তুষ্ট হয়। আমি ভাবছি বিশ্বজিৎ বাবুকে লিখব আপনাদের বৌমাকে আপনাদের কাছে রাখতে চান না কি ? আপনারা যদি আগ্রহ করেন আপনাদের কাছে পাঠিয়ে দেব। আমি বিশ্বজিৎ বাবুকে একট চিঠি দিলাম। দেখি চিঠির কি উত্তর দেয়। মাধুরিকে একটা চিঠি দিলাম। এই বড় বউদি নিজ সন্তানতুল্য কচকে মানুষ করেছে। আমি সেকথা খুব ভাল করেই জানি। দোলা ছেলে মানুষ, ও অনেক কিছুই করতে পারে। আমারত বুঝে সুঝে চলতে হবে।
দোলাকেও একটা চিঠি দিলাম। ও আবার মনে মনে ভেবে নেয় দাদু আমার দাদুর কাছে থাকা বোধ হয় পছন্দ করে না। এই সব নানা কথা ভেবে ভেবে ভার্সিটি করে বাসায় ফিরে এলাম। আর ভালো লাগে না এই ইউনিভার্সিটি, এই আমার শাল ভাদরের বাড়ী। কোথাও যেয়ে কিছুদিন ঘুরে আসি। বড় নিজেকে অসহায়, বড় নিঃস্ব মনে হয়। কোথায় যাই, সামনে দোলার এই বিপদ। মেয়েটার আবার এখানে আমি ছাড়া কেহ নাই। নিজে সংসার করলাম না, বিয়ে করে ঘর বাঁধলাম না। অথচ আত্মীয়-বন্ধু-বান্ধবী আমাকে অক্টোপাসের মত আষ্টে-পৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে।
মনটা কেন জানি ব্যকুল হতে ব্যকুল-তর হতে লাগল। গাড়ীটা নিয়ে কোর্দ্দোনিশের যীশুখৃষ্টের গির্জ্জায় যাওয়াই মনস্থির করে ফেললাম। সেদিন বোরবার ছিল, খুব উচু পাহাড়ের উপর গির্জ্জাটি ১৯২৪ সালে স্থাপিত হয়। খুব উৎকৃষ্ট মানের। রকমারি জিনিস পত্র দিয়ে গির্জ্জাটি পরিপাটি করে সাজান। সকল জাতের সকল ধর্মের লোক সেখানে যাতায়াত করে। আমি ঠিক ওদের উপাসনার সময় মনের অজান্তে সেখানে উপস্থিত হলাম। ইংলিশে মন্ত্র পাঠ হচ্ছিল, গানও ইংলিশে, ওরা বসা ছিল, ওরা ওঠে দাঁড়াল। আমিও মন্ত্রমুগ্ধের মত দাঁড়িয়ে গেলাম। জানি না কোন অদৃশ্য শক্তি আমাকে পেয়ে বসেছিল। যীশুর হাত এবং পা বাঁধা। হাতটি পিছনে নিয়ে বাঁধা, বুকের থেকে তাজা রক্ত ঝরে ঝরে পড়ছে। জানি না কোন নিপুন শিল্পী নিপুন হাতে এই প্রস্তর মুর্তি গড়েছে। প্রত্যেকটি ঘরে যীশুর মুর্তি, যীশুর স্মৃতি। হাজার হাজার কাঁচের গ্লাসের ভিতর মোমের আলো জ্বলছে, যেটা না জালান হয়েছে আমি একটা কাঠি নিয়ে সেইটা ধরিয়ে দিলাম। আর ঘুরে ঘুরে ঘরগুলি প্রদক্ষিণ করলাম। কত বিচিত্র দেশের, বিচিত্র ধর্মের, বিচিত্র বেশ-ভুষার সাদা-কালো-লাল-হলুদ বর্ণের লোকজন ঘোরা ফিরা করছে। দু’হাত তুলে প্রার্থণা জানাচ্ছে, ভগবান যীশুর ধ্যানমগ্ন মহাঋষি তুল্য সুদর্শণ চেহারা চক্ষু নিমিলিত করে ধ্যানমগ্ন হয়ে আছে।

(চলবে———-)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।