সর্বশেষঃ

ম্যধরাত : পর্ব-২৪০

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত পর্বের পর) : রাগ প্রায় শেষ হয়ে আসছে। বড় ঘড়িটায় ঢং ঢং করে ৪টার ঘণ্টা পরল। রাত জাগা পাখি তার প্রহর ঘোষণা করল ম্যধরাতের। আমার আর শয়ে ভাল লাগছিল না, উঠে জানালার বড় কাঁচ দিয়ে ঘেরা জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। আকাশে তখন বড় করে লক্ষ্মী পুর্ণিমার চাঁদটা উঠেছিল। এই চাঁদ আমার জীবনের কত সাক্ষী থেকে গেল; সুখ-দুঃখ, আনন্দ অশ্রুর। আজ আর তাকে কি বলব, খুঁজে পাই না। নতুন করে কিছু বলার নেই। অনেকক্ষণ চাঁদটার দিকে চেয়ে চেয়ে কত কথা মনে পরল। কত স্মৃতি, কত বিস্মৃতি আমায় আবার উতলা করে তুলল। রাত তখন ভোর হয়ে আসছিল। পাখির সারা শব্দ আমার কানে প্রবেশ করছে। ড্রইং রুমের বড় সোফায় একটু শুয়ে পরলাম। নিজের বিছানা যেন আর ভালো লাগে না। ঐ বিছানায় দীর্ঘদিন শুয়ে শুয়ে অরুচি ধরে গেছে। নুতন অন্য কোথায় যেন শোয়টা বদল করলে ভাল লাগে। আমার জীবন যেন আজ হঠাৎ করে বৈচিত্র খুঁজতে আরম্ভ করল। বুক শেলফ থেকে মাওসেতুং এর একটা বই বের করে দেখতে ও পড়তে লাগলাম। এই বইগুলি দোলার কাছে বড় পরম প্রিয় ছিল। আজ দোলা নেই বলে এর অনাদর দেখা দিয়েছে।
বইটা পড়তে পড়তে আমি মাঝে মাঝে আনমনা হয়ে পরছিলাম। এই সব মহামানব দেশের জন্য কত অক্ষয় কীর্তি রেখে গেছেন। এই সব পড়ে পড়ে আমাদের সেই সব পথ অনুসরণ করা উচিত। যদিও মানুষের মত মানুষ আমরা কজন ? তখন ভোর হয়ে গেছে, ভোরের স্নিগ্ধ আলোয় আমার মনটা জরিয়ে গেল। আমি হাত মুখ ধুয়ে কাপড়-চোপড় বদলিয়ে ডাইনিং এ ঢুকে দেখি উমা দুর্বল হাতে আমার নাশথা টেবিলে রাখছে। আমি বললাম, উমা থাক তুমি কষ্ট করো না। আমি নিজেই নিয়ে খেতে পারব। তুমি এই মাত্র অসুখ থেকে উঠেছ, শরীর তোমার দুর্বল কদিন বিশ্রামে থাক। উমা বলল, না দাদা; এই সামান্য একটু চা করে দেওয়া, ব্রেডটা টোষ করে প্লেটে করে দিলাম। এ আর এমন কি পরিশ্রম, আমি-ত দেখতে পারছিনা। আমি হেসে ফেললাম। বেশ বেশ তোমার পরিশ্রম লাগছে না, তা ভাল কর ? উমা বলল দাদা, দোলা কবে আসবে, ও আসলে ভাল লাগত। আমি বললাম, ও শীগগিরই আসবে। উমা বলল জানেন দাদা, উমার মুখের দিকে দিকে চেয়ে থাকলাম, ও যেন কি বলতে চায়। আবার বলল জানেন দাদা, দোলার বাচ্চা হলে আমাদের বাড়ীতে আবার আনন্দ আসবে। কল-কোলাহল মুখরিত হয়ে উঠবে। ছোট একটা শিশুর কান্না, কত সুখ, কত বছর আমার কানে এসে পৌছেনি। কত অনাদি অনন্ত দিন এমনি একটি নবজাতকের স্বপ্ন আমি দেখেছিলাম। সুশান্ত তা জানত, ও বেঁচে থাকলে দোলার বাচ্চা দেখলে কত আনন্দ পেত। তা দাদা আপনাকে বলে আমি বোঝাতে পারব না। উমার দু’চোখ জলে ভরে উঠল, কান্না সামলাতে না পেরে আমার সামনে থেকে সরে গেল।
আমিও কি কাজের তাগাদা ছিল বাস ধরার জন্য বেরিয়ে পরলাম। আমি সাধারণতঃ সুশান্ত মারা যাওয়ার পর উমার সামনে কম থাকি। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ওর সামনে থাকি না। বাইরে কি কাজ ছিল খুটি-নাটি, সেখান থেকে হেমন্তের ওখানে গেলাম। দেখি হেমন্তের ওখানে বেল টিপে ফোন সারাশব্দ পেলাম না। ভাবলাম বোধহয় ক্লাশে গেছে। আমি বাস ধরবার জন্য বাস স্টপেজে এলাম, দেখলাম বাসও এসে গেছে, বাসে উঠে অনেক কথা মনে পরল। বিশেষতঃ উমার কথাগুলি তখন আর্তনাদের মত আমার কর্ণকুহরে প্রবেশ করল। ও নিঃসন্তান, সুশান্তর সাথে প্রায় দীর্ঘ ২৫-৩০ বছর সংসার করেছে। একটি কচি সন্তানের মুখ দেখেনি। আজ বিধবা হয়েও অপরের একটি সন্তানের মুখ দেখার জন্য কি এক ব্যকুল আগ্রহ। এ আগ্রহের শেষ নেই, এ আগ্রহের কুল নেই, কিনারা নেই।

(চলবে———-)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।