সর্বশেষঃ

মধ্যরাত : পর্ব-২৩৯

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত পর্বের পর) : আমিও না করে উমাকে এখান থেকে একেবারে জোর করে সরিয়ে নেই। যদি উমা নিজের ইচ্ছায় ভাইর কাছে বা দেবরদের কাছে না যায়। যে সুশান্ত আমাকে এত ভাল বেসেছে, যে উমার এত আদর যতœ, সেবা শুশ্রুসা পেয়েছে, আজ উমা স্বামী হারা হয়ে আমার সামনে পরে আছে, আমার বাড়ীতে। ভাই এসেছিল গেল না। দেবরের ছেলে এসেছিল, গেল না। কতটুকু বিম্বাস, কতটুকু শ্রদ্ধা, কতটুকু আপনতা, ভালবাসা দাবী করে আমার কাছে রয়ে গেছে। আমি জীবন থাকতে যে দাবী ও মর্যাদার ক্ষুন্ন হতে দেব না।
উমার ঘরে স্যুপ, ব্রেড ও জল দিয়ে এলাম। ওয়েন বালিশে হেলান দিয়ে কি ভাবছে, মন কোথায় কোন সুদূর পারাবারে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। বললাম, উমা খেয়ে ঘুমাও। ও বলল, আমার কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না। আমি বললাম, খাও, না খেলে শরীর দুর্বল হয়ে পরবে। আমি আমার নিজের ঘরে এসে একটা বই নিয়ে শুয়ে শুয়ে পড়ছিলাম। অনেক রাত হল, ঘুমিয়ে পরার জন্য চেষ্টা করলাম। অনেক গভীর রাতে ডোরার ফোন এল। হ্যালো প্রশান্ত কি করছ ? ঘুমাবার চেষ্টা করছি, তুমি ? আমারও শরীর ভাল না। জ্বর জ্বর; ঘুমাবার ঔষধ খেয়েও ঘুম আসছে না। উমাদি কেমন আছে ? বললাম, এখন ভাল, ডোরা বলল আমি ডিসেম্বরে বড়দিনের ছুটিতে তোমার ওখানে আসতে চাই, তোমার কি মত ? উত্তর কি দেব ভাবছিলাম। বললাম, উমার সান্তনার জন্য, উমাকে একটু শাস্তি দেবার জন্য আসতে পার। আর তখন বোধহয় ডোরাও তার সাহায্যের জন্য আমার এখানে আসবে। ডোরা বলল, তুকি কি এনিয়েই জীবন কাটিয়ে দেবে ? উমা-ডোরা এছাড়া তোমার কি কিছু বলার নেই ? আমি বললাম, আমি নিজে যখন ঘর বাঁধলাম না, তখন যারা আমার আশ্রিত বা যাদের একদিন সবছিল, আজ আর তাদের কাছে কেউ নেই। তখন তাদের কোথায় কোন দূরে ঠেলে দেব ?
ডোরা বলল প্রশান্ত এ বড় মহাসাধকের কথা, তোমার এত বড় বড় কথার উত্তর দেবার এই মধ্যরাতে আমার ক্ষমতা নেই। আমি বললাম, ডোরা আমি বদলে যাচ্ছি। সে সুযোগ তুমিই আমাকে দিয়েছ। সে সুযোগ পেতে পেতে আমার কাম ক্রোধ লোভ লালসা বর্জিত মন তৈরী হয়ে গেছে। আজ আমি এক কর্তব্যের আহ্বানে সমানের দিকে ছুটে চলছি। আমাকে ভুল বুঝনা, ক্ষমা করো। বলে ফোন ছেড়ে দিলাম। আজ সত্যি আমি ফুলে ফুলে কাঁদলাম। কিনা ছিল আমার, জীবন-যৌবন, সুখ-শান্তি, সাধ-আহ্লাদ, নিজের উচ্চ অভিলাষের জন্য সময় নিয়ে দেরী করলাম। সময় নদীর স্রোতের মত ধেয়ে ধেয়ে চলে গেল। তারপর যদিও ডোরার সান্নিধ্য মিলল, আমি এগিয়ে গেলে ডোরা, পিছিয়ে যায়, আমি পিছিয়ে গেলে ডোরা এগিয়ে আসে। আমার পিছনে যতনা বাঁধা, আর ডোরা তার বিরাট সমুদ্র পাড়ি দিয়ে আমার কাছে এগুতে এগুতে তার বয়সের সিড়ি অনেক আগেই টার্মিনাল টেনে দিল। আজ আর এসব জোড়া তালি দিয়ে ভালবাসাকে কতক্ষণ ধামা-চাঁপা দিয়ে রাখা যায়।
এখন এক মহা আদর্শ আমাকে হাতছানি দিয়ে সুদূরে ডাকছে। এখন আর ভোগ নয়, ত্যাগ। মহত্ত, তিতিক্ষা, সংযম, স্নেহ, মায়া মমতার বিলাসে আমি নিজকে বিলীন করে দিতে চাই। যারা আমার আশ্রিত ও ¯েœহের জন। আর এ বয়সে যা মানায় না, তা নিয়ে ন্যাকামী করে ছোটদের কাছে নিজেকে মর্যাদাকে ক্ষুন্ন করতে চাই না। ডোরা আমাকে ভালবাসার কঠিন বাঁধনে বাঁধতে পারেনি। ব্যাকুল প্রেম অযাচিত বিহ্বল ভালবাসা, বিহ্বল মন নিয়ে পুরুষকে মেয়েরাই বন্দি করে রাখে। ডোরা আমাকে আসমুদ্রে হিমাচল ব্যাপী ভালবাসা দিয়ে কাছে বেঁধে রাখতে পারেনি। আমার সে ভালবাসা ব্যাকুল হয়ে নদ-নদী, সাগর-পাহাড়, বন-নান্তরে কেঁদে কেঁদে হয় রান হয়ে মরে গেছে। এ দোষ আমার নয়, এ দোষ ডো–রা–র। না- না আমি বলতে পরি না। আমি বলতে পারি না। হে বিশ্ব প্রভু——তুমি জা—–ন। (চলবে——–)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।