সর্বশেষঃ

মধ্যরাত : পর্ব-২৩৮

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন), 

(গত পর্বের পর) : উমাকে নিয়ে অতি সত্তর আমি ইমার্জেন্সিতে পৌছে গেলাম। তখনও প্রচন্ড জ্বরে উমা কাঁপছিল। উমাকে তাড়াতাড়ি একটা বেডে শুইয়ে ডাক্তার দেখছিল। জ্বর পাঁচ এ চলছিল উমা অজ্ঞান হয়ে যাবার উপক্রম হবার যোগাড় হচ্ছিল। ইমার্জেন্সির ডাক্তার ওকে অন্য কোন হাসপাতালে রাখার জন্য বললেন। কিছু ঔষধ পত্র দিয়ে ছেড়ে দিলেন। উমাকে ওখান থেকে মন্ট্রিল জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলাম। আমি হেমন্ত ধরা ধরি করে গাড়ী থেকে নামিয়ে ওকে হাসপাতালের লিফটে তুলে ১২ তলার উপর তুললাম। ওকে বারান্দায় বসিয়ে রেখে ডাক্তারের সাথে আলাপ করে একটা সিট নিলাম। উমার তখন ভীষণ জ্বরের চোটে জ্ঞান বের হয়ে যাবার উপক্রম হবার মত হয়েছিল।
সাদা ধব ধবে বিছানাটার উপর উমার রোগাক্রান্ত শরীরটা এলিয়ে পরল। হেমন্ত উমার মুখের কাছে মুখ নিয়ে ডাকল মাসিমা। উমা কোন উত্তর দিল না। নার্স পাল্স ধরে ডাক্তারকে ডাকল, ডাক্তার বলল আইস ব্যাগ দাও। নার্স উমার মাথায় আইস ব্যাগ ধরল, ডাক্তার কি যেন একটা ইনজেকশন দিল। আমি হেমন্ত তখন বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। অনেকক্ষণ পর উমার সাভাবিক অবস্থা ফিরে এল। উমা চোখ মেলে এদিকে-ওদিক খুঁজছে। চোখ বড় বড় করে কাকে যেন খুঁজছে। আমি হেমন্তকে ওর কাছে পাঠিয়ে দিলাম। হেমন্ত ওর কাছে গেল-বলল, মাসিমা কেমন লাগছে। উমা বলল- দাদা কাই, হেমন্ত আমাকে তার কাছে ডাকল। আমি কাছে গেলাম, বলল- দাদা আমি এখানে কেন ? বাড়ী যাব, আমি বললাম- সুস্থ্য হও তবে বাড়ী এস। আমি হেমন্ত উমার কাছেই থাকলাম। দু’দিনের ভিতরই উমার জ্বর কমের দিকে এল, ডাক্তার বলল- ভাইরাস জ্বর। উমার কাছে হয় হেমন্ত, না হয় আমি পালা করে থেকে উমাকে সুস্থ্য করে বাড়ী নিয়ে গেলাম।
রাহাত খান ওর বৌকে নিয়ে আমার বাসায়ই দেখতে এল। উমা তখন খুব দুর্বল, আমি নিজেই ওদের সাথে গল্প-সল্প করে চা-নাশতা দিলাম। রাহাত খান উচ্চমনা, উচ্চ অভিলাষী, পর নিন্দা-পরর্চ্চা, করে দিন কাটানো ওর অভ্যাস নয়। লোকের দুঃখে-সুখে, বিপদে-আপদে-আনন্দে সবখানে ওকে দেখা যায়। এই বিংশ শতাব্দিতে এরকম লোক বিরল। রাহাত খান শ্রদ্ধার পাত্র। ওকে শ্রদ্ধা করা যায়, ভালাবাসাও যায়। রাহাত খান অনেক গল্প করল। অনেকক্ষণ বসল। বাচ্চাদুটু খুব বিরক্ত আরম্ভ করল বলে আর বসলনা। ওর বৌ বলল চল, ওরা কাঁদছে। আমি ওদের দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিলাম। উমা খুব দুর্বল, আমি নিজেই রান্না ঘরে আমার নিজের খাবার তৈরী করে নেই, উমারটাও তৈরী করে দেই। মনটা বড় বিষন্নতায় ভরে গেছে, দুঃখ-কষ্ট, ব্যথা-বেদনায় আমি বড় নিরুপায় হয়ে পরেছি। এখন ভার্সিটির কমন রুমে বসে গল্প করিনা, বন্ধুরা বাঁকা চোখে দেখে, টিপ্পনি কাটে। যেহেতু আমি বিয়ে করিনি বলেই তাদের মনে সন্দেহ দোলা দেয়। উমা বিধাবা হয়ে আমার এখানে আছে, এসব নানা কথার জল্পনা-কল্পনা হয়, মানুষ সব সময় মুখরোচক গল্প করতে ভালবাসে। পৃথিবীতে সবাই-ত আর দেবতা হয়ে জন্ম গ্রহণ করেনি ?

(চলবে——-)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।