সর্বশেষঃ

মধ্যরাত : পর্ব-২৩৬

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত পর্বের পর) : সেদিন গল্প করতে করতে প্রায় বিকেল গড়িয়ে এল। তাড়াতাড়ি বাড়ীর পথে পাড়ি জমালাম। বাড়ী এসে দেখি উমা খুব অসুস্থ্য হয়ে ঘরে পরে আছে। শুনলাম কোকাচ্ছে, রুমের কাছে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করলাম কি হয়েছে ? উমা বলল, দাদা ভিষণ জ্বও, কিছু খেতে পারি না। বললাম, মাথা করে ধুয়ে ফেল। খাওয়া-দাওয়া করো। উমা সারাদিন জ্বরে আচ্ছন্ন হয়ে পরেছিল। আমি নিজে দুটু ডাল-ভাত ফুটিয়ে খেলাম। উমাকে কিছু খেতে বললাম। ও উঠলা না, খেলো-ও না। বিকেলের দিকে হেমন্ত এল। বলল, মাসীমা কই, আমি বললাম, ওর জ্বর। হেমন্ত বলল, ওমা তাইত দেখছিনা। ওনি কোথায়, বললাম- ওর ঘরে। দেখি বলে হেমন্ত ওর ঘরে ওকে দেখতে গেল। মাথায় হাত দিয়ে হেমন্ত দা ভীষণ জ্বর-ত। আমি বললাম, ডাক্তার দেখাতে হবে কিনা জিজ্ঞাসা করো। হেমন্ত বলল আজকে দিনটা দেখে কাল ডাক্তার দেখাব। হেমন্ত গ্লাসে করে দুধ নিয়ে ওকে খেতে দিল। ধরে বসিয়ে দিল বলল, মাসিমা এখন কেমন বোধ করছেন। হেমন্ত বলছিল জানেন প্রশান্ত দা মার অসুখ হলে আমি মাকে দেখা শুনো করি। বসন্ত ও আবার এসব রোগীদের যতœ করতে পারে না। যতদিন মার কাছে ছিলাম, মাকে দেখা শুনো করেছি। আজ মার কাছে থেকে আমি অনেক অনেক দূরে। আজ আমি আবার একজন মা পেয়েছি। এই বলে উমাকে বলল, কিছু খেয়ে নিন, না খেলে দুর্বল হয়ে পরবেন।
তখন রাত বেড়ে যাচ্ছিল, হেমন্ত বলল-আমি এখন আসি প্রশান্ত দা। আবার পরে আসব। আমি হেমন্তকে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিলাম। ঘরে ঢুকে বাঁতি নিভিয়ে শুয়ে পরলাম। শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলাম, আজ সব থেকেও আমার কেউ নেই। সুশান্ত চলে গেল, দোলা বিয়ে হয়ে কচের কাছে গেল। আমি এক হতভাগা নিঃস্ব, উমা আরও নিঃস্ব হয়ে আমার কাছে আশ্রয় নিল। উমার এই অসহায় ভাব দেখে আমার খুব কষ্ট হয়। আমি উমার জন্য কি করতে পারি। কিছু করতে পারি না। তাই বড় দুঃখ হয়। বিধবারাত আজ কাল বিয়ে করে, কিন্তু উমা ? অসম্ভব ও এ পথে পা বাড়াবে না। মরে যাবে, উমাকে আর কেউ না জানুক না চিনুক, আমি উমাকে ভাল করে জানি।
উমা সারাজীবন সুশান্তর স্মৃতি বুকে আকরে ধরে জীবন কাটিয়ে দেবে। তবু, উমা অন্য পথে যাবে না। উমার অসম্ভব ধৈর্য্য, ত্যাগ, তিতিক্ষা। উমা যে কয়দিন আমার এখানে আছে, কখন কোনদিন কোন সময় এখান থেকে পাড়ি জমাবে কে জানে। বল যে তীর্থে যাবে গিয়ে আর আসে কি না জানি না। ওর অন্তরের কথা ভগবান জানেন। সুশান্তর শোক এখনও উমা সামলে উঠতে পারেনি। আস্তে আস্তে সব দুঃখ কষ্ট বিলুপ্তির পথে যাবে। তখন বুঝব উমা স্বাভাবিক হয়েছে। এখন মনটা ওর অস্থির, হেমন্তকে পেলে বড় খুশী হয়। নিজের সন্তানের মত মাতৃ¯েœহে ওকে আদও যতœ করে। সারা রাত উমা জ্বরের দাপটে আঃ উঃ করেছে। আমি দু’দিন ও রুমের সামনে গিয়ে বলেছি, উমা জল খাবে, মাথা ধোবে ? আমাকে একটু জ্বল দিন, দাদা মাথা ধোবনা। থাক, আপনার কষ্ট হবে।

(চলবে——-)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।