ভোলায় এক ইউপি সদস্যকে অপহরণ মামলা দিয়ে হয়রানীর অভিযোগ

তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হোক : চেয়ারম্যান কামাল।
বর্তমান ইউপি সদস্য আববাস কে জড়ানো ঠিক হয়নি : চেয়ারম্যান ছোটন।

এম রহমান রুবেল ॥ ভোলায় এক ইউপি সদস্যকে অপহরণ মামলা দিয়ে হয়রানীর অভিযোগ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি ভোলার ভেদুরিয়া ইউনিয়নে এমন ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় একটি অপহরণ মামলাও দায়ের করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্তাধিন রয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, ভোলা সদর উপজেলার ভেদুরিয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্বাসকে মিথ্যা অপহরণ মামলা দিয়ে হয়রানীর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমন অভিযোগে মামলা করেছেন একই ওয়ার্ডে ওপর ইউপি সদস্য মাকসুদু রহমান।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে সাবেক মাকসুদ মেম্বারের মেয়ে রাবেয়া আক্তার গত ৬ ফেব্রুয়ারী অপহরণ হয়। এ ঘটনায় বাবা মাকসুদুর রহমান বাদী হয়ে গত ৮ ফেব্রুয়ারী তারিখে ভোলা সদর মডেল থানায় সোহেল ওরফে ছোটনকে প্রধান আসামি করে একটি অপহরণ মামলা করেন। যার নং-১৮, তারিখ-০৮/০২/২০২৪ইং। মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার আব্বাস, আমির হোসেন কুট্টি, জিন্টু, আনোয়ারসহ অজ্ঞাত বেশ কয়েকজনের নামে মামলা করা হয়।
স্থানীয় সুত্রে আরো জানা গেছে, সাবেক মাকসুদ মেম্বারের মেয়ে ছোট বেলা থেকেই উশৃঙ্খল। সে বিভিন্ন ছেলেদের সাথে সম্পর্কে লিপ্ত ছিল। সর্বশেষ সোহেল ওরফে ছোটনের সাথে মাকসুদ মেম্বারের মেয়ে পালিয়ে যায়। এছাড়াও পালিয়ে যাওয়ার আগে বেশ কয়েকবার বাড়ি থেকে বাবা মায়ের অবাধ্য হয়ে বের হয়ে যায়। গত ৪/৫ মাস আগে ভোলার শহরের একটি বাসায় পূর্ব ইলিশার ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন ছোটন ও ভেদুরিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল সহ স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে শালিস মিমাংসায় হয়েছে। সেখানে গন্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে শালিস মিমাংসায় মেয়েকে ওই ছেলে সোহেল ওরফে ছোটনের কাছ থেকে বিচারকরা মেয়েকে উদ্ধার করে বাবা সাবেক মেম্বার মাকসুদের কাছে তুলে দেন। এ সময় বিচারকরা মেয়েকে বলেন, তোমার বয়স যেহেতু কম তাই বাড়ীতে ফিরে যাও। বয়স হলে আমরা তোমাকে ওই ছেলের কাছেই বিয়ে দিবো। কিন্তু ৪/৫ মাস না যেতেই মেয়ে পুনরায় ওই ছেলেকে নিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় বাবা বাদী হয় অপহরণ মামলা দায়ের করেন।
অভিযুক্ত ইউপি সদস্য আব্বাস উদ্দিন এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি অপহরণ ঘটনার সাথে কখনোই জড়িত ছিলাম না। আমি যদি এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকি তা হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর সদস্যরা তদন্ত সাপেক্ষে প্রমাণ পেলে আইন আমাকে যে শাস্তি দিবে তা আমি মাথা পেতে মেনে নিব। তিনি আরো বলেন, সাবেক মাকসুদ মেম্বার আমার সাথে নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর থেকেই তিনি বিভিন্নভাবে আমাকে সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা চালান। তারই ধারাবাহিকতায় আমার বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা দায়ের করেছেন। আমি একজন জনপ্রতিনিধি, আমাকে অন্যায়ভাবে যেন কোন প্রকার হয়রানি করা না হয়। প্রতারণা মামলা করায় আমার কাছ থেকে জনগণ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আমি প্রশাসনের কাছে উক্ত ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত এবং অপহরণ এর সাথে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনার দাবী জানাচ্ছি।
মামলার বাদী মেয়ের বাবা মাকসুদ বলেন, আব্বাস মেম্বারের সাথে আমার রাজনৈতিক কোন দ্বন্দ্ব নেই। আমার মেয়ে অহরণ হয়েছে, তাই মামলা করেছি। ফোনে আপনার সাথে এত কথা বলা যাবে না, সরাসরি আসেন তখন বিস্তারিত বলব।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল বলেন, সাবেক মেম্বার মাকসুদের মেয়ে সোহেল ওরফে ছোটনের সাথে বাড়ী থেকে বের হলে তখন তাকে খুজে বের করে পূর্ব ইলিশার চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন ছোটন চেয়ারম্যানসহ বাবার কাছে পৌছে দেয়া হয়। পরবর্তীতে গত ৬ তারিখে মেয়ে ওই ছেলের সাথে পুনরায় পালিয়ে যায়। তখন বাবা বাদী হয়ে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করে। এতে বর্তমান ইউপি সদস্য আব্বাসসহ বেশ কয়েকজনকে আসামী করা হয়। যেহেতু মামলা হয়েছে, এখন তদন্ত সাপেক্ষে যারা দোষী তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
পূর্ব ইলিশার চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন ছোটন এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, সাবেক মেম্বার মাকসুদ এর মেয়ে প্রেম ঘটিত ব্যাপার নিয়ে সোহেলের সাথে এর আগেও বেশ কয়েকবার বের হয়ে যায়। তখন আমি ও ভেদুরিয়ার চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল ভাইসহ শহরের একটি বাসায় বসে মেয়েকে বুঝিয়ে তার বাবার কাছে পৌছে দেই। কিন্তু ওই ঘটনার ৪/৫ মাস যেতে না যেতেই পুনরায় মেয়ে ওই ছেলেকে নিয়ে পালিয়ে যায়। শুনেছি বাবা বাদী হয়ে একটি অপহরণ মামলা করেছে। কিন্তু ওই মামলায় যাদের নাম দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে বর্তমান ইউপি সদস্য আববাস কে জড়ানো ঠিক হয়নি। কারণ পূর্বের ঘটনা প্রতিয়মান হয় যে আব্বাস এ ঘটনার সাথে কোন ভাবেই জড়িত না।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ভেলুমিয়া ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই এনজামুল হক বলেন, একটি অপহরণ মামলা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ততাধিন রয়েছে, তদন্ত সাপেক্ষে আসামীদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।
ভোলা সদর মডেল থানার ওসি মনির হোসেন মিয়া’র সাথে কথা হলে তিনি বলেন, একটি অপহরণ মামলা হয়েছে। বিষয়টি ভেলুমিয়া ফাঁড়ির ইনচার্জকে তদন্ত করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। অপহৃত মেয়েকে উদ্ধার এবং আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।