সর্বশেষঃ

মধ্যরাত : পর্ব-২৩৪

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত পর্বের পর) : কি পবিত্রতা স্ত্রী, স্বামীর সুখ শন্তির দিকে তার কত লক্ষ্য। কোন চাওয়া নেই, পাওয়া নেই, শুধুমাত্র ত্যাগ-ভালবাসা। আমি যেন রাহাত খাঁনের কাছে কতক্ষণ বসে আরাম বোধ করছিলাম। এরকম নিস্বার্থ স্ত্রী কজনের ভাগ্যে মিলে। রাহাত খাঁন বলল, আমিও যুথিকাকে তেমন কিছু দেইনি। আমি নিজেও মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে। ৫টি ভাই, ৪টি বোন। যুথিকা বলেছে তুমি ওদের দেখ। ভাইদের প্রত্যেককেই পড়ার খরচ বহন করেছি, বোন ৩টিকে বি.এ পর্যন্ত পড়িয়ে বিয়ে দিয়েছি। যুথিকা বলেছে, সকলের সুখে আমার সুখ। আমার ৩টি বোনকেও যুথিকা নিজে দাঁড়িয়ে তদারক করে সম্প্রদান করেছে। আমার বোনরা যুথিকাকে ভাবী বলতে অজ্ঞান। আমার বাব-মা— মা করে ডাকে। বলে তুমি বোধ হয় জন্মে আমাদের মা ছিলে। যুথিকা বলল, এত বলনা দেমাক বেড়ে যাবে।
আমি রাহাত খাঁন হেসে উঠলাম। বললাম, ভাবিকে নিয়ে আসেন একদিন আমার বাসায়। রাহাত খাঁন বলল, আসব একদিন। তারপর ম্যাগগিলের পড়াশুনার আইন-কানুন নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করলাম। ম্যাগগিল ইউনিভার্সিটি খুব নাম করা ছিল। এখন কনকোর্ডিয়া নাম করে বসে আছে। এক কালে ম্যাগগিলের প্রফেসারদের খুব দাপট ছিল, আইন-কানুন গুলি বড় কড়া কড়া। এমনি নানা কথায় প্রায় সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল। আমিও বাসায় ফিরে আসার জন্য উঠে পরলাম। বাসায় এসে দেখলাম উমা হেমন্তের সাথে গল্প করছে। হেমন্ত আমাকে দেখে উঠে দাঁড়াল। আমি বললাম আরে বস বস। তারপর তোমাদের মা-ছেলের কি গল্প হল, কখন এসেছ হেমন্ত ? বলল মিনিট পাচেক হল। আমি বললাম, আমিও আমার এক বন্ধুর বাসায় গিয়েছিলাম, সেখানেই এতক্ষণ ছিলাম। ভদ্রলোকের নাম রাহাত খাঁন, বড় ভালো, বড় অমায়িক। বৌটি আরও ভাল। রূপ নেই, কিন্তু গুন অনেক অনেক, খুব বুদ্ধিমতি।
উমা আমার মুখের দিকে অপলক নেত্রে তাকিয়ে ছিল। আমি বললাম, উমা কিছু বলবে আমাকে ? বলল না এই বলে উমা ঘরে চলে গেল। হেমন্ত কতক্ষণ বসে থেকে ওর পড়াশুনার দোহাই দিয়ে কেটে পরল। আমি কিছু খেয়ে নিয়ে ড্রইং রুমে বসে খবরের কাগজটা পড়ছিলাম। তারপর জানি কোন আমার আর ভালো লাগছিলনা। হঠাৎ ডোরার ফোন এল। উমা বলল ডোরাদি ফোন করেছে। তোমার সাথে কথা বলতে চায়। আমার যেন এসব এখন আর ভালো লাগে না। তবুও মনের অনিচ্ছা সত্ত্বে রিসিভারটা কানে লাগালাম। হ্যালো প্রশান্ত, তুমিকি সুশান্ত মরার সাথে সাথে তুমি নিজেই মরে গেছ ? আমি বললাম, ঠিক বলেছ। আমি আর সেই আগের প্রশান্ত নেই। সুশান্তকে হারিয়ে আমি সব হারিয়ে বসে আছি। ডোরা বলল, পাগলামী করোনা প্রশান্ত, ধৈর্য্য ধর। বেড়াতে এসনা, সামনের বড়দিনের ছুটিতে উমাদিকে নিয়ে এস, কয়দিন এদিক-ওদিক ঘুরলে প্রফুল্লা লাগবে।
আমি বললাম ডোরা এখন কোথাও যাওয়া উমা বা আমার সেরকম মন মানসিকতা নেই। বরং তুমি এসে আমাদের দেখে যাও। আমরা কি হালতে আছি। ডোরা বলল, দেখি। আমি ফোন ছেড়ে দিলাম। ভাল লাগেনা। এসব আর শুধু প্রেম, ভালবাসা, ধন, যৌবন কিছুই চিরস্থায়ী নয়। কি হবে এসব করে ? আর যাকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করতে পারিনি, আমি এগুলে সে পিছিয়ে যায়। সে এগুলে আমি পিছিয়ে আসি। এ রকম করে চলা যায় না। আর উমার এই বৈধব্য আমার জীবনেও টর্মিনাল টেনে দিলাম। ছোট বোন স্বামী হারা হয়ে কাছে চোখের জল ফেলবে, আর আমি রোমান্সের সমুদ্রে অবগাহন করব ? এ হয় না। আমার জীবনের ব্রত উদযাপন হবে সেই দিন, যেদিন উমার জীবনের পাশে পাশে বড় ভাইয়ের আদর্শ নিয়ে আমি উমার শেষ ক্রিয়া, অন্তেষ্টিক্রিয়া সম্পদান করতে পারব।

(চলবে——)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।