মধ্যরাত : পর্ব-২৩৩

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),
(গত পর্বের পর) : উমা মুখ ঘুরিয়ে ওর ঘরে গিয়ে অনেকক্ষণ কাঁদল। আমি চুপ করে থাকলাম। থাক ওর মনে দুঃখ হয়েছে, কেঁদে একটু দুঃখটা লাঘব করুক। আমি আর বেশিক্ষণ ঘরে থাকলাম না, সেদিন ভার্সিটি ছুটি ছিল, নিজে ভাত মাছের ঝোল নিয়ে খেয়ে নিলাম। ভাবলাম রাহাত খাঁনের বাড়ী যাই। নতুন বাড়ী নিয়েছে, আমাকে ক’দিন বলেছে আসুন আমার বাড়ী একদিন। দেখি আজ একটু যাই তাড়াতাড়ি গাড়ীটা বের করে উঠে পরলাম, চাবি দিয়ে দরজা বন্ধ করে রাহাত খাঁনের বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম।
রাহাত খাঁনের বাড়ী কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌছে গেলাম, কলিং বের টিপলাম। রাহাত খান নিজেই এসে দরজা খুলে দিল। রাহাত খান নিজে দেখতে খুব ভাল, লম্বা চওড়া ফর্সা, সুন্দর, চিকন গোঁফ, স্বচ্ছ দাঁত, হাসলে আরও সুন্দর দেখায়। ছেলে-মেয়ে মোটামুটি মন্দনা স্বাস্থ্য ভাল। কিন্তু ওর বৌ যাকে দেখলাম খুবই কালে লম্বা দেখতে ভাল বলা চলে না। বলল, যুথিকা প্রশান্ত বাবু, এস তোমার সাথে পরিচয় করিয়ে দেই। আমি বসে ছিলাম, উঠে দাঁড়ালাম। যুথিকা আমাকে আদাব জানাল। দেখলাম মেয়েটির ভিতর গেয়ো ভাব এখনও রয়েছে, শহরে হতে এখনও ঢের সময় লাগবে। কিন্তু সেজন্য রাহাত খানের কোন আফছোস নেই, প্রগাড় শ্রদ্ধা ও ভালবাসা বউটার জন্য আছে। ছেলেটির নাম শ্যামল। মেয়েটির নাম শ্যামা। কিন্তু সে নিজে অনেক উন্নত মনের অধিকারী। যুথিকা আমাকে নারকোলের বরফি কি যেন পিঠে তৈরী করেছিল তা দিল।
রাহাত খাঁন অনেক গল্প করল। শুনলাম ওর শ্বশুর অনেক গরীব। ওকে বিয়েতে কিছুই দিতে থুতে পারেনি। রাহাত খানও কোন দাবী করেনি। কি হবে পরের ধরেন আশা করে সে বলল, যুথিকাকে আমি গ্রহণ করে তাকে সাহায্য করবার বা উপকৃত করার চেষ্টা করেছি। কথাগুলু বলতে বলতে রাহাত খানের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠছিল। সত্যিকার ত্যাগ মানবতাবোধ এলোকটার মধ্যে জাগ্রত হয়ে আছে। রাহাত খান খুব কথা বলে। বড় সরল, সহজ, অনাড়ম্বর ন্যায্য কাজ করে, ন্যায্য কথা বলে। ন্যায্য কথা বলে বলেই অনেকে ওর প্রতি তুষ্ট না। যদিও কেহ তাহা প্রকাশ করে না। তবে আমি সেটা বেশ ভাল করে বুঝি। কিন্তু আমি রাহাত খানকে খুব পছন্দ করি, ও সত্যিকারের মানুষ। আসল মানুষ ওর মধ্যে লুকিয়ে আছে।
এত কথা খোলা-খুলি ভাবে বলাতে যুথিকা খুব লজ্জা পাচ্ছিল। বলল ওই তুমি চা খাবে ? খাবে কখন খালিত কথাই বলছ। রাহাত খান বলল, যুথিকা তুমিত জাননা। দিল খুলে কথা না বললে আমার ভাল লাগে না। আমি খুব দিল খোলা লোক। যুথিকা বলল, আমার ও খুব সৌভাগ্য তোমার মত দিল খোলা লোকের স্ত্রী হয়েছি, বলে খুব হেসে উঠল। শ্যামল আর শ্যামা ওর বাবার পিঠে চড়েছিল। বার বার ওর বাবাকে টেনে টেনে ফেলে দিচ্ছিল। যুথিকা ধমকে উঠল। এই শ্যামা আজ একটু ছুটির দিন বিশ্রাম নেবে না ? বাপটাকে টেনে হিচরে জ্ঞান শেষ করল। ওদের দু’ভাই বোনকে ঘুমুতে নিয়ে গেল। রাহাত খান বলল, ওরাত আমাকে কাছে পায় না। আজ একটু বেচারারা পেয়েছে, দাওনা দুষ্টুমী করুক। যুথিকা বলল, ওদের ঘুমের সময় হয়েছে, তুমি আরামে বসে ভদ্র লোকের সাথে গল্প কর।
(চলবে——–)