মধ্যরাত : পর্ব-২৩২

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),
(গত পর্বের পর) : আর সুশান্ত একটু সুস্থ হয়ে ভার্জিনিয়া হয়ে টরেন্টো এসে ইউনিভার্সিটিতে যোগদান করল। কিন্তু ভাগ্য তার খারাপ, একটু একটু জ্বও দম নিতে কষ্ট হয়; ডাক্তাররা বলল, প্লুরিসি শেষ পর্যন্ত মন্ট্রিলে এসে দেহত্যাগ করল। এত তাড়াতাড়ি ম্যাজিকের মত ঘটনা ঘটল যে উমা, আমি বা অতদূও থেকে ক্যামেলিয়া ও দেবপ্রিয়ও চিন্তা করে দেখার সময় করে উঠতে পারেনি। সবই ভাবিতব্যের লীলা খেলা। আজ সুশান্ত নেই, তবু তার কথা-স্মৃতি অহরহ আমাকে দংশন করে। যতদিন আমি বেঁচে থাকব, ততদিন উমা বেঁচে থাকবে। ততদিন আমরা তার মহত্ত, উদারতা উজারতা, তার ভালবাসার কথা স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ করে রাখব।
ক্যামেলিয়ারও তার প্রতি কোন দুর্বলতা যদি কোন দিন, কোন সময়, কোন ক্ষণে, তার মনে সুশান্তর কথা তার হৃদয় মন্দিরে দাগ কেটে থাকে। ক্যামেলিয়া মনে করতে পারে, দয়া দেখাতে পারে। সে দয়াকে সুশান্তর আত্মা ঘৃণা করে। সুশান্তকে আর কেউ না জানুক, আমি জানি। সুশান্ত মানুষকে ভালবেসেছে, করুণা করেছে, দয়া দাক্ষিণ্য দেখিয়েছে। কিন্তু প্রতিদানে কারও কাছে কোনদিন কিছু প্রত্যাশা করেনি। কারও দয়াকে সে অবহেলায় ফিরিয়ে দিয়েছে। আর কেউ যদি সত্যি ভাল বেসেছে, বা ভালবাসাতে চেয়েছে তাকে মাথা পেতে গ্রহণ করতে কার্পণ্য করেনি।
ক্যামেলিয়া এখন পরস্ত্রী, তার অনেক অসুবিধা আছে। সেটা আমি খুব ভাল করে বুঝি, সবকিছুই তাকে চিন্তা করে, প্লান-প্রোগ্রাম করে করতে হয়। বন্যার জল যখন পুকুরে প্রবেশ করে তখন পদ্মের ভাটায় টান পরে। তবুও যে ক্যামেলিয়া ভদ্রতা করে এতদিন পরে স্বামীর সুস্থ্যতার পর চিঠির উত্তর দিল, সেজন্য তাকে ভদ্র বলতে হবে। ভদ্রতার মুখোশটা দেখছি ক্যামেলিয়া এখনও খোলেনি বা খুলে ফেলেনি। উমা এসে বলল, দাদা কার চিঠি ? আমি শুনলাম ক্যামেলিয়ার, ক্যামেলিয়া ? আমি বললাম, এরি মধ্যে ভুলে গেলে ? সুশান্ত যাকে সমুদ্র থেকে ভুলতে গিয়ে সমুদ্রে অচৈতন্য হয়ে পরেছিল। স্পীডবোট এর সাহায্যে লোকজন ক্যামেলিয়া ও সুশান্তকে উদ্ধার করল, ক্যামেলিয়া সুস্থ হয়ে বোম্বে পাড়ি জমাল। সুশান্ত আমরা ভার্জিনিয়া দিয়ে টরেন্টো এলাম।
উমা ফুলে ফুলে কেঁদে উঠল। বলল, সেই থেকেই অল্প অল্প জ্বর, দম বন্ধ হয়ে আসে। আর সুস্থ হয়ে উঠল না। সে চলে গেল। ও এখনও চিঠি লিখে ? দাদা জান মেয়েটা সাক্ষাৎ অলক্ষ্মী। ছিঃ উমা ওকথা বলতে নেই, ও ত বেঁচেছে। কিন্তু আমার স্বামী ওকে তুলতে গিয়ে মরে গেল। উমা খুব কাঁদল, প্রশান্ত দা ও মেয়েটা সমুদ্রে না ডুবলে আমার স্বামী ওকে তুলতে যেত না, আর তুলতে গিয়েই সে আর কোনদিন সুস্থ্য হয়ে বেঁচে উঠল না। আমি উমাকে অনেক বোঝাতে চেষ্টা করলাম। ও তোমার ভুল ধারণা তুমিত অনেক লেখা পড়া করেছ, সবই বিধাতার নির্দেশ। মৃত্যুকে আজ পর্যন্ত কেউ জয় করতে পারেনি। সুশান্তর আয়ু, ছিল না বলেই চলে গেল। যদি আয়ু থাকত তা হলে কোন রকমে না কোন রকমে সে বেঁচে থাকত। তোমাকে ক্যামেলিয়া বোম্বে থেকে ঘুরে আসতে লিখেছে, যাবে ?
(চলবে———)