সর্বশেষঃ

লালমোহন মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে সন্তান প্রসব করলেই দিতে হয় টাকা

জাহিদ দুলাল ॥ ভোলার লালমোহন উপজেলার মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে কোনো প্রসূতি মা সন্তান প্রসব করলেই দিতে হয় টাকা। যার পরিমাণ দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা। অথচ সরকারিভাবে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটিতে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে সেবা প্রদানের কথা রয়েছে। তবে সরকারি সেই নিয়মের তোয়াক্কা না করে নিজস্ব সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে লালমোহন মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের ইনচার্জ এবং পরিবার কল্যাণ পরিদর্শীকা মিরা রাণী। তার সঙ্গে জড়িত রয়েছে ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির কয়েকজন দাই নার্স ও স্টাফ। এই সিন্ডিকেটের দাবি অনুযায়ী টাকা দেওয়া না হলে রোগী ও স্বজনদের সঙ্গে করা হয় অশোভন আচরণ। এতে করে প্রতিনিয়ত হয়রানীর শিকার হচ্ছেন সেবাপ্রত্যাশী মানুষজন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সম্প্রতি লালমোহন মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে উপজেলার তজুমদ্দিনের খাসের হাট এলাকা থেকে শারমিন নামে এক প্রসূতিকে আনেন স্বজনরা। এখানে আনার পর ওই প্রসূতি স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসব করেন। সন্তান প্রসবের পরই প্রসূতি শারমিনের স্বামী শাহাবুদ্দিনের কাছ থেকে মিরা রাণী পাঁচ হাজার টাকা দাবি করেন। অনেক কথা বলাবলির পরে বাধ্য হয়ে মিরা রাণীকে তিন হাজার টাকা দেন শাহাবুদ্দিন।
এই মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে স্ত্রীর সন্তান প্রসব করানোয় উপজেলার রমাগঞ্জ ইউনিয়নের দিনমজুর মো. শরীফকে দিতে হয়েছে আড়াই হাজার টাকা। দিনমজুর শরীফ বলেন, আমার স্ত্রী রিক্তা বেগমের প্রসব বেদনা উঠলে তাকে লালমোহন মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে নিই। সেখানে স্বাভাবিকভাবেই আমার স্ত্রী সন্তান প্রসব করেন। প্রসবের পরপরই মিরা রাণী নামের একজন মিষ্টি খাওয়ার জন্য চার হাজার টাকা দাবি করেন। এতো টাকা কেনো দেবো তা জানতে চাইলে আমাদের সঙ্গে খুবই খারাপ ব্যবহার করেন মিরা রাণী। পরে বাধ্য হয়ে তাকে আড়াই হাজার টাকা দেই।
এছাড়াও এই মিরা রাণী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে প্রসূতির স্বজনদের বাধ্য করে টাকা আদায়ের অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। লালমোহন মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের ভেতরেই তার নিজস্ব সরকারি বাসভবন হওয়ায় রাত-বিরাতে কোনো প্রসূতি আসলেই তাদের জিম্মি করে টাকা আদায় করেন মিরা রাণী ও তার অনুসারীরা। যেখানে সন্তান প্রসব করলেই প্রসূতির স্বজনদের গুনতে হয় দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা।
টাকা নেওয়ার বিষয়ে লালমোহন মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের ইনচার্জ এবং পরিবার কল্যাণ পরিদর্শীকা মিরা রাণী বলেন, বাচ্চা প্রসব হলে রোগীর স্বজনরা খুশি হয়ে আমাদের কিছু টাকা দেন। তবে টাকা দেওয়ার জন্য কখনো কাউকে বাধ্য করা হয় না। এছাড়া এ নিয়ে কখনো কারও সঙ্গে অশোভন আচরণও করা হয় না।
এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) এবং মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. অমিত কর্মকার জানান, সত্যিই যদি তারা কোনো টাকা নেন, তাহলে তাদের টাকা না নিতে বলে দেবো।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।