সর্বশেষঃ

মধ্যরাত : পর্ব-২৩১

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত পর্বের পর) : কিন্তু আমার কাছে কেন এই মধ্য রাত পৃথিবীর যত ব্যথা, বেদনা, হতাশা, দীর্ঘশ্বাস, বিরহ, না পাওয়ার ব্যথিত করুন আবেদন মুর্ত হয়ে উঠে। জানি না একি আমার নিজেরই মনের প্রতিচ্ছবি ? কোন মানস প্রিয়ার মানস সরোবর থেকে এ বেদনা বয়ে আনে ? অনাদি কালের অনাদি স্বপ্ন কথা। আমি-ত এখন আর রোমান্সের স্বায়রে স্নান করিনা, সত্যিকার বাস্তবকে আমি খুঁজে নিয়েছি। কল্পনার রাজ্যে আমি আর বিচরণ করিনা। হে মহামন্ত্র তোমার দ্বার উন্মোচন কর। মানুষের দুঃখ-কষ্ট ব্যথাকে আমি আলিঙ্গন করতে এখন আর দ্বিধা করিনা। নিজের জীবনের ভোগ-লালসাকে আমি অগ্নিকুন্ডে জলাঞ্জলি দিয়েছি। যদি পারি, ত্যাগ-তিতিক্ষার, সাধনায়, মহত্তে আমি পরুষোত্তম সত্য হয়ে নিজকে বিকশিত করব। আমি যেন এসব ভাবতে ভাবতে অন্য জগতে চলে গিয়েছিলাম। সে জগত আছে শুধু সাধনা, মহত্ত, ত্যাগ, তিতিক্ষা অমর জ্যোতি।
আমি আবার বাস্তব জগতে ফিরে এলাম। তখন ভোর হয়ে আসছে। পাখির কল-কাকলি মুখরিত কিচির-মিচির শব্দে আমার তন্মতা ভেঙ্গে গেল। আমি আবার বিছনার কাছে চলে গেলাম। দেখলাম মাথার বালিশ তেমনি আছে। গায়ের কম্বল খানা তেমনি অগোছালভাবে ছড়িয়ে আছে। মাথার কাছে ছোট্ট টেবিলটায় এক গ্লাস জল একখানি পিরিচ দিয়ে ঢাকা আছে। আকি ঢক ঢক করে এক চুমুকে জলটা খেয়ে নিলাম। আমি বড় হয়রান, বড় ক্লান্ত, বড় পেরেশান।
তাড়াতাড়ি একটু বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। কম্বল খানা টেনে গায়ে জড়িয়ে নিলাম। একটু চোখ বুজে থাকলাম। যেন বড় শান্তি, যেন বড় সিগ্ধতায় শরীর জুড়িয়ে গেল। ভোরের নিরব নিস্তব্ধ শরতের শিউলি বিছানো পথে কে যেন কতগুলি শুভ্র শ্বেত লাজুক শিউলি ছড়িয়ে রেখেছে। আমার বাংলাদেশের আমার বাড়ীর আঙ্গিনায়। বড়দি পুজোর অঞ্জলির জন্য ফুলগুলি কুড়িয়ে নিচ্ছে। আমি বড়দির হাত থেকে ফুলগুলি হাতে নিয়ে শুকছি, কি ¯œগ্ধ-সুরভি যেন আমার সমস্ত অন্তর জুড়িয়ে গেল। বড়দি বলল, দে প্রশান্ত এ ফুল দেবতার পুজায় লাগবে, আমার তন্দ্রা ভেঙ্গে গেল। ঘুম ভেঙ্গে দেখলাম শালভাদরের চারপাশে রোদ ঝিকমিক করছে। উমা ডাকছে দাদা তুমি-ত এত বেলা কোনদিন ঘুমাও না। আজ কি শরীর খারাপ ? আমি বললাম, রাতে ঘুম হয় না, মধ্য রাতের দিকে একটু খানি ঘুমিয়ে ছিলাম। তার জন্য দেরী হল। উমা বলল, দাদা ভার্সিটিতে যাবে না ? আমি বললাম, আজ ক্লাশ দুপুরের দিকে। উমা ওঃ আচ্ছা। টেবিলে তোমার নাশতা দেওয়া আছে, আমি একটু আহ্নিক এ বসলাম।
আমি হাত মুখ ধুয়ে চুল আচরিয়ে খেতে বসালাম। খেয়ে নিউজ পেপারটার উপর চোখ রাখলাম, নিউজ পেপার না পড়লে আমার হজম হয় না। শুধু খাওয়া আর ইউনিভার্সিটি মোটেই ভাল লাগে না। হঠাৎ ডাকবাক্সে চিঠি দেওয়ার শব্দ পেলাম, উঠে গিয়ে দেখি ক্যামেলিয়ার চিঠি। এতদিন পর চিঠি পেয়ে অবাক হলাম। সুশান্ত মাস ছয়েক হল মারা গেছে, ক্যামেলিয়ার এতদিন পরে দরদ উথলে উঠেছে। আশ্চর্য্য বইতে দেখি মাঝে মাঝে নারী রহস্যময়ী, ছলনাময়ী, নারীর মন প্রাণ দুর্ভেদ্য প্রাচীর বেষ্টিত। এসব কথা আমার মনে করি, কারো স্বার্থে আঘাত লেগেছে বলে তার জন্য প্রযোজ্য। কিন্তু আসলে নারী মমতাময়ী, কল্যাণময়ী, নারী মহিয়সী, গরিয়সীর ভূমিকায় তার স্থান দেওয়া যায়।
চিঠি খানা খুলে পড়লাম। লিখেছে আমাকে। সুশান্তর মৃত্যুতে সে খুব দুঃখ পেয়েছে। দেবপ্রিয় খুব অসুস্থ হয়ে কিছুদিন হাসপাতালে ছিল। প্রায় জমে মানুষ টানা-টানি করে তবে কিছুটা সুস্থ্য হয়েছে। এখনও প্রাকটিস আরম্ভ করেনি। শরীর খুব দুর্বল। শীঘ্রই কোথাও চেঞ্জে যাওয়ার কথা ভাবছে। সুশান্তর অকাল মৃত্যুতে কি লিখে উমা বৌদিকে সান্তনা দেবে তার সেই ভাষাও খুঁজে পাচ্ছে না। একবার এসে বোম্বে থেকে ঘুরে যাওয়ার কথা লিখেছে। উমা বৌেিদক সাথে করে নিয়ে আসতে যেন ভুল না হয়। হায়রে শুধু এই কথা ? আর কিছু না ? ক্যামেলিয়া ধনি গৃহিনী। তোমাকে সমুদ্র থেকে তুলতে গিয়ে সুশান্ত নিজেও অচৈতন্য হয়ে পরেছিল। স্পীডবোট এর সাহায্যে দু’জনকে অচৈতন্য অবস্থায় তুলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ডাক্তাররা বহু পরিশ্রমে দুজনকে সুস্থ্য করে তুলে। ক্যামেলিয়া সুস্থ হয়ে তার স্বামী দেবপ্রিয়ের সাথে কলকাতা হয়ে বোম্বে পাড়ি জমাল।

(চলবে———-)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।