ভোলার বাজারে শীতকালীন সবজির চড়া দাম ॥ চরম বিপাকে সাধারণ ক্রেতারা

এইচ এম জাকির ॥ ভোলার কাঁচাবাজারে পর্যাপ্ত শীতকালীন সবজির সমারোহ থাকলেও চড়া মূল্যের কারণে সাধারণ ক্রেতারা রয়েছেন চরম বিপাকে। প্রতিদিন পৌর এলাকা ও এর আশপাশের বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে ক্রেতারা বাজারে এসে সবজি ক্রয় করতে গিয়ে রীতিমতোই তাদের মাথায় হাত পড়ছে। যেখানে পুরো বাজার জুড়ে রয়েছে শীতকালীন সবজির সমারোহ, সেখানে প্রতিটি সবজির মূল্য উর্ধ্বমুখীতে সাধারণ ক্রেতাদেরকে অনেকটা ভাবিয়ে তুলেছে। শুধু সবজির বাজারই নয়, এর সাথে রয়েছে নিত্যপণ্য। বিশেষ করে তেল, ডাল, চিনি, লবণ সহ প্রতিটি পণ্যই এখন সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে। এতে করে একদিকে যেমন ক্রেতাদের চাহিদার তুলনায় ক্রয় করছেন কম, অন্যদিকে আশানুরূপ বেচা বিক্রি থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
সরে জমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভোলার পৌর এলাকার কাঁচা বাজারে শীতের শুরু থেকেই অধিকাংশ শীতকালীন সবজির দাম চড়া রয়েছে। এছাড়া আগের মতোই উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে মাছ, চিনি, চাল, আটা, ডাল বিভিন্ন পণ্য। বাজারে সবজির মধ্যে নতুন আলুর পর্যাপ্ত সমারোহ থাকলেও দাম যেন বরাবরে উর্ধ্বমুখী।
দেখা গেছে, গেল সপ্তাহে আলু কেজি পতি বিক্রি হয়েছে ৬০-৬৫ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৫ টাকা কমে বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৫৫ টাকা। একইভাবে নতুন পেঁয়াজ কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা, পাকা টমেটোর ৪০ থেকে ৫০ টাকা, করোলা ৭০-৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০ টাকা, বিভিন্ন জাতের বেগুন ৭০ টাকা, মূলা ২৫ টাকা, বরবটি ৫০ টাকা ও পেঁপে কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা। এর সাথে কাঁচামরিচ ১০০ টাকা কেজি, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, ঝিঙা ৭০ টাকা, কচুর লতি ৬০ টাকা, গাজর ৫০ টাকা, শসা ৪৫ টাকা ও কাঁচা কলার হালিতে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। প্রতি কেজি ফুলকপি ও বাঁধাকপি ৫০- ৪০ টাকা। তাছাড়া বড় আকৃতির লাউ ৮০-১০০ টাকা। লাল শাকের আঁটি ২০-৩০ টাকা, লাউ শাক ২০-৩০ টাকা, মূলা শাক ২০-২৫ টাকা, পালং শাক ২০-৩০ টাকা, কলমি শাক ১৫-২০ টাকা মুটা বিক্রি করতে দেখা গেছে। শীতের শুরুতে শাকসবজির মূল্য যা দেখা গেছে বর্তমানেও তার কিছুটা কমলেও গেল বছরের তুলনায় অনেকাংশে বেশি বলেই মনে করছেন ক্রেতারা।
শাকসবজির মতো মাছের বাজারের চিত্র একই রকম দেখা গেছে। নদীর মাছের তুলনায় পুকুরের মাছের মূল্য কিছুটা কম হলেও গেল বছরের তুলনায় তাও অনেকটা চড়া মূল্যেই বিক্রি হচ্ছে। যেমন- শোল মাছ আকৃতি অনুযায়ী কেজি প্রতি কেজি ৯০০ থেকে ১২০০ টাকা, শিং মাছ ও বাইলা মাছ প্রতি কেজি প্রকারভেদে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, পোয়া মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০, পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ৪৫০, মলা মাছ ৩০০ টাকা, পাঁচ মিশালি মাছ ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে।


অণ্যদিকে পণ্যের বাজারেও দীর্ঘদিনের লাগানো আগুন কোনভাবেই যেন নিভানো যাচ্ছে না। ৬০/৬৫ টাকার মসুরির ডাল কিনতে হচ্ছে ১৪০ টাকায়, ব্রয়লার মুরগি ২০০ টাকা এবং গরুর মাংস ৭০০ টাকা। এদিকে অনেকদিন ধরেই নিত্যপণ্য ও শাকসবজি মাছ মাংসের বৃদ্ধি পেয়ে কোনভাবেই তা এখন আর নিচের দিকে নামছে না। যেকোনো জিনিসেরই মূল্য বৃদ্ধি পেলে কেন যেন তা ঊর্ধমুখী থেকে যায় নিন্মমুখের সম্ভাবনা সহজে চোখে পড়ে না বলে অভিযোগ করছেন ক্রেতা ও বিক্রেতারা।
বাজার করতে আসা শাহাবুদ্দিন নামে এক ক্রেতা বলেন, মাছ মাংস যেটাই ধরি তাতেই যেন আগুনের মতো মুল্য। বিত্তবানদের ক্রয় ক্ষমতা থাকলেও মধ্যমায় ও নিন্ময়ের মানুষদের পড়তে হয় চরম বিপাকে। অপর ক্রেতা শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ম্যানেজার নজরুল ইসলাম বলেন, মাস শেষে যেটুকু বেতন পাওয়া যায় তা দিয়ে বাজার খরচ ছেলে সন্তানদের পড়ালেখার খরচেই চলে যায়। ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করে রাখার মতো কোন অবস্থায় থাকে না। স্কুল শিক্ষক আনোয়ার পারভেজ বলেন, বর্তমান বাজারের যে পরিস্থিতি তাতে করে বড় বড় রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা কিছুটা ভালোভাবে চলতে পারলেও আমাদের মতো মধ্যবিত্ত ও নির্ণয়ের মানুষদেরকে পড়তে হয় চরম বিপাকে। কেননা বাজারের সব কিছুর মূল্যই দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছ, কিন্তু সেই তুলনায় আমাদের বেতন আগের অবস্থায় রয়েছে। তাতে করে এখন খাওয়া দাওয়া আর ছেলে সন্তানদের লেখাপড়ার পিছনে খরচ করে ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করার মত কোন অর্থই হাতে থাকে না।
তবে স্থানীয় পর্যায়ে চাষাবাদের পরিমাণ বাড়িয়ে মাঠ পর্যায়ে পর্যাপ্ত সবজির উৎপাদন করতে পারলে বাইরের থেকে আমদানির পরিমাণটা অনেকটা কমিয়ে বাজার কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখা যেত এমনটি পরামর্শ দিয়ে ভোলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মো. মোস্তফা সোহেল। তিনি জানান, আমারা স্থানীয় ভাবে উৎপাদিত শীতকালীন সবজি ও বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বাজারে সরবরাহ তুলনামূলক কম হওয়ায় বাইরের থেকে আমদানি করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। তাতে করে পরিবহন খরচসহ সকল দিক বিবেচনায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে চড়া মূল্যে বিক্রি করতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। স্থানীয়ভাবে যদি উৎপাদনের পরিমাণ বাড়ানো যেত তাহলে আমদানি কমিয়ে বাজার মূল্য অনেকটা সহনীয় পর্যায়ে রাখা যেত বলে মনে করছেন তিনি।
তবে চিনি, চাল, আটা ও ডাল মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে ভোক্তা অদিধপ্তর (ভোলা) সহকারী পরিচালক মো. মাহমুদুল হাসান জানান, প্রতিনিয়ত বাজার মনিটরিং কার্যক্রম তাদের অব্যাহত রয়েছে। কোন ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট এর মাধ্যমে যদি কোন পণ্যের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত মূল্যে মূল্যে বিক্রি করছে এ ধরনের কোনো অভিযোগ ঐ সকল ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।