লালমোহনে বাঁশ-বেতের সামগ্রী তৈরি ও বিক্রিতে চলে শাহজলের জীবিকা

জাহিদ দুলাল ॥ প্রায় ৬০ বছরের বৃদ্ধ মো. শাহজল বেপারী। নিজের বয়সের প্রায় ৩৫ বছর কেটেছে বাঁশ-বেতের সঙ্গে। তিনি বাঁশ-বেত দিয়ে তৈরি করেন বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কুটির সামগ্রী। উপজেলার বিভিন্ন হাঁটে গিয়ে বিক্রি করেন সেসব সামগ্রী। সেখানের আয়ে চলে তার সংসার। বৃদ্ধ শাহজল বেপারী ভোলার লালমোহন উপজেলার চরভূতা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের খাড়াকান্দি এলাকার কপিলউদ্দি বাড়ির বাসিন্দা।
শাহজল বেপারী বলেন, প্রায় ৩৫ বছর ধরে বাঁশ ও বেত দিয়ে তৈরি করছি কুলা, চালুন, খাঁচা, দুই থেকে তিন ধরনের টুকরি। গ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাঁশ ও বেত কিনে এগুলো নিজ বাড়িতে পরিবারের সকলে মিলে তৈরি করি। এরপর সপ্তাহের হাঁটের দিনগুলোতে উপজেলার বিভিন্ন হাঁটে নিয়ে এসব বিক্রি করি। আমার কাছে সর্বনিম্ন একশত থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে তিনশত টাকার বাঁশ-বেতের সামগ্রী রয়েছে। প্রতি হাঁটে দুই হাজার থেকে চার হাজার টাকার মতো বিক্রি করতে পারি। বিক্রি অনুযায়ী গড়ে পাঁচশত থেকে আটশত টাকার মতো লাভ হয়। যা দিয়ে চলে আমার সংসার। সংসারে স্ত্রীসহ দুই ছেলে ও চার মেয়ে রয়েছে তার। এদের মধ্যে চার মেয়েকেই বিয়ে দিয়েছি আর ছেলেদেরও বিয়ে করিয়েছি। মেয়েরা শ্বশুড় বাড়ি থাকে। তবে ছেলেরা আমার সঙ্গেই আছে। তারাও আমার এ কাজে সহযোগিতা করেন।
তিনি আরো বলেন, লালমোহনের বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জের প্রতিটি বাড়িতে হাঁস-মুরগি পালন করা হয়। যার জন্য অনেকে খাঁচা কিনেন। আবার মাটি কাটা ও ময়লা রাখার জন্য দরকার হয় টুকরির। এছাড়া ধান ও চাল ঝাড়তে জন্য দরকার হয় কুলা ও চালুনের। আমার কাছে থাকা প্রতিটি পণ্যই গৃহস্থলির কাজের জন্য খুবই দরকারি। যার জন্য মানুষজনের কাছে বাঁশ-বেত দিয়ে তৈরি করা আমার এসব সামগ্রীর চাহিদা রয়েছে।
শাহজল বেপারীর কাছে খাঁচা কিনতে আসা মো. ইকবাল জানান, বাড়িতে হাঁস ও মুরগির বাচ্চা রয়েছে। এই জন্য খাঁচা কেনা জরুরি। তাই বাঁশ ও বেতের তৈরি একটি খাঁচা কিনেছি, দাম একটু বেশি হলেও এটি ভালো হবে বলে আশা করছি।
অন্যদিকে দুই ধরনের টুকরি কিনেছেন মো. মাহবুব আলম। তিনি বলেন, এই টুকরিকে গ্রামের ভাষায় অনেকে লাই বা হাজি বলে থাকেন। খামারের কাজের জন্য টুকরির দরকার। তাই দুই সাইজের দুইটি টুকরি কিনেছি। বর্তমান বাঁশ-বেত ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে এসব সামগ্রীর দামও আগের তুলনায় অনেকটা বেশি। তারপরও প্রয়োজনের তাগিদে কিনতে হয়েছে।
এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা রিমা আক্তার জানান, কুটির শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের জন্য আমাদের পল্লী উদ্যোক্তা ঋণের ব্যবস্থা রয়েছে। কারো প্রয়োজনে যোগাযোগ করলে তাকে ঋণ প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।