সর্বশেষঃ

লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বেড়েছে সেবাপ্রত্যাশী’র সংখ্যা

জাহিদ দুলাল ॥ ভোলার লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বেড়েছে চিকিৎসা সেবাপ্রত্যাশী মানুষের সংখ্যা। সদ্য বিদায়ী বছর ২০২৩ সালে লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন ১ লাখ এক হাজার ৬৩৪ জন। ২০২২ সালে যার সংখ্যা ছিল ৫৮ হাজার ৫৬৪ জন। সে হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবাপ্রত্যাশী মানুষের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় দুইগুণ।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তথ্যমতে, ২০২৩ সালে হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে বিভিন্ন শারীরিক জটিলতার জন্য চিকিৎসা নিয়েছেন ৮৭ হাজার ৯৯ জন। আর ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন ১৪ হাজার ৫৩৫ জন সেবাপ্রত্যাশী মানুষ। ২০২৩ সালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে আশঙ্কাজনক কারণে উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার্ড করা হয়েছে ৮৪০জন রোগীকে। এ বছর হাসপাতালে মারা গেছেন ৭৬ জন রোগী। ২০২৩ সালে লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ডেঙ্গু, ডায়রিয়া, পেট্রিক আলসার, জ্বর ও মারামারিতে আহত রোগীরা সবচেয়ে বেশি সেবা নিয়েছেন। এছাড়া এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিদায়ী বছরে স্বাভাবিক প্রসব করেছেন ৮২৫ জন প্রসূতি। ২০২৩ সালে চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের পেছনে সরকারিভাবে বিনামূল্যের অন্তত দুই কোটি টাকার ওষুধ ব্যয় হয়েছে।
হিসেব অনুযায়ী ২০২২ সালের থেকে সদ্য বিদায়ী বছরে অনেকাংশে লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বেড়েছে চিকিৎসা সেবাপ্রত্যাশী মানুষের সংখ্যা। ২০২২ সালে বহির্বিভাগ থেকে ৫৮ হাজার ৫৬৪ জন রোগী সেবা নিয়েছেন। ওই বছর ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন ১০ হাজার দুইশতর মতো রোগী। ২০২২ সালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাভাবিক প্রসব হয়েছিল ৫৩৭ জন প্রসূতির। সে বছরে সাশ্রয়ী মূল্যে প্যাথলজি বিভাগ থেকে ল্যাব টেস্ট হয়েছিল ১ লাখ তিন হাজার তিনশত টাকার। আর সেখানে বিদায়ী বছর ২০২৩ সালে ল্যাব টেস্ট হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা। লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অন্তত ২০ ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থার চালু রয়েছে। যে সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা বেসরকারি হসপিটাল ও ডায়াগনিস্টিকের তুলনায় নাম মাত্র মূল্যে করা হয়। প্যাথলজি বিভাগের ল্যাব টেস্ট থেকে আসা অর্থ সরকারিখাতে জমা দেওয়া হয়।
লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্টাফ ও কর্মকর্তারা মনে করছেন, বর্তমান ইউএইচএফপিও ডা. মো. তৈয়বুর রহমানের যোগাদানের পর তাঁর আন্তরিকতার কারণেই বেড়েছে এ সেবার মান। ইউএইচএফপিও ডা. মো. তৈয়বুর রহমান ২০২২ সালের ১৫ ডিসেম্বর লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকে চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা এবং স্টাফদের নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেবার মান বৃদ্ধিতে নিরলসভাবে কাজ শুরু করেন। বর্তমানে লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আটজন চিকিৎসক, উনিশ জন সিনিয়র স্টাফ নার্স ও চারজন মিডওয়াইফ এখনকার ইউএইচএফপিওর নেতৃত্বে রোগীদের সেবায় নিয়মিত কাজ করছেন। যার ফলশ্রুতিতে তাঁর যোগদানের এক বছরের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা রোগীদের সেবায় আমূল পরিবর্তন হয়েছে। যা এখন দৃশ্যমান।
তবে লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বর্তমানে বন্ধ রয়েছে ইসিজি, এক্স-রে ও আল্ট্রাসোনোগ্রামের মেশিন। যা রোগীদের চিকিৎসা সেবায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অতিদ্রুত সময়ে এসব চালু করা হলে লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীদের তেমন আর দুর্ভোগে পড়তে হবে না বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন মহল।
এসব বিষয়ে লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. তৈয়বুর রহমান বলেন, আমি যোগদানের পর থেকে লালমোহনের মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। এতে হাসপাতালের চিকিৎসক, সিনিয়র স্টাফ নার্স, মিডওয়াইফ, স্টাফসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা আমাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করছেন। যার ফলশ্রুতিতে ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে আউটডোর ও ইনডোরে রোগীর সেবার মান রেড়েছে। নরমাল ডেলিভারির সংখ্যাও বেড়েছে, বেড়েছে প্যাথলজি ল্যাব টেস্টও। উন্নতির এই ধারা ২০২৪ সালেও অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ। আমরা সব সময় চেষ্টা করবো সামর্থের মধ্যে রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার।
উপজেলার শীর্ষ এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আরো বলেন, এ হসপিটালে যোগদানের পরেই আমি ইসিজি চালু করি। তবে তা কিছুদিন পর পর নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এই ইসিজিসহ অন্যান্য যে সেবা বর্তমানে বন্ধ রয়েছে তাও খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে চালু করা হবে। এ জন্য আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।