সর্বশেষঃ

লালমোহনে এক বছরে যক্ষ্মায় আক্রান্ত ২৪৫ রোগী, মিলছে বিনামূল্যে চিকিৎসা

জাহিদ দুলাল, লালমোহন ॥ যক্ষ্মা শব্দটি এক সময় ছিল আতঙ্কের নাম। বলা হতো; যক্ষ্মা হলে রক্ষা নেই। কয়েক বছর আগেও গ্রামাঞ্চলে কেউ যক্ষ্মায় আক্রান্ত হলে ওই এলাকার সকল মানুষ আতঙ্কে থাকতেন। তবে সময় বদলেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা ব্যবস্থা হয়েছে আধুনিক। বর্তমানে এখন যক্ষ্মায় আক্রান্ত হলে আগের সেই আতঙ্ক নেই। সঠিক সময়ে-সঠিক চিকিৎসায় এই দুরারোগ্য যক্ষ্মা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
এমনইভাবে ভোলার লালমোহন উপজেলায় ২০২৩ সালের চলতি মাস পর্যন্ত মোট ৫২৯ জন যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে সুস্থ্য হয়েছেন ২৮৪ জন রোগী। বর্তমানে ২৪৫ জন রোগী বিনামূল্যে চিকিৎসা নিচ্ছেন। যার মধ্যে শিশু রয়েছে ১৮ জন। লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্যমতে, বর্তমানে আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী রয়েছে উপজেলার রমাগঞ্জ ইউনিয়নে। এই ইউনিয়নে ৫২ জন রোগী যক্ষ্মায় আক্রান্ত। এরপরের স্থান ধলীগৌরনগর ইউনিয়নে। সেখানে আক্রান্ত ৪৪ জন রোগী। ৪৩ জন আক্রান্ত পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নে। কালমা ইউনিয়নে যক্ষ্মায় আক্রান্ত রয়েছেন ৩২ জন রোগী। এছাড়া ফরাজগঞ্জ ইউনিয়নে ২১ জন, লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়নে ২০ জন, লালমোহন ইউনিয়নে ১৬ জন, চরভূতা ইউনিয়নে ১০ জন। ইউনিয়নের হিসেবে সর্বনি¤œ যক্ষ্মায় আক্রান্ত রোগী বদরপুর ইউনিয়নে। এই ইউনিয়নে আক্রান্ত রোগী ৭ জন।
লালমোহনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিনামূল্যে কফ্ ও জিন এক্সপার্ট পরীক্ষার মাধ্যমে এসব রোগীর যক্ষ্মা শনাক্ত করা হয়। এছাড়া আক্রান্তদের ৬ মাসের জন্য পূর্ণমেয়াদে সঠিক মাত্রায় বিনামূল্যে সরকারিভাবে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। এই চিকিৎসা কার্যক্রমে সহযোগিতা করে ব্রাক নামে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা।
জানা যায়, সাধারণত তিন সপ্তাহের বেশি কাশি, জ্বর, কাশির সঙ্গে কফ এবং মাঝেমধ্যে রক্ত বের হওয়া, ওজন কমে যাওয়া, বুকে ব্যথা, দুর্বলতা ও ক্ষুধামন্দা ইত্যাদি যক্ষ্মার প্রধান উপসর্গ। তবে কিছু বিষয়ে সচেতন হলেই কমে আসতে পারে যক্ষ্মায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। যার মধ্যে রয়েছে- জন্মের পরপর প্রতিটি শিশুকে বিসিজি টিকা প্রদান, হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় রুমাল ব্যবহার করা, যেখানে-সেখানে থুথু না ফেলা। এছাড়া আক্রান্ত রোগীর কফ-থুথু নির্দিষ্ট পাত্রে ফেলে তা মাটিতে পুঁতে ফেলা।
এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. তৈয়বুর রহমান বলেন, সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিলে যক্ষ্মা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। তাই উপজেলাবাসীর প্রতি আমার আহবান থাকবে; কারো যদি দুই সপ্তাহের বেশি কাশি থাকে তাহলে নিকটস্থ কমিউনিটি ক্লিনিক ও ব্রাক সেন্টারে এসে কফ পরীক্ষা করানোর। এই কফ পরীক্ষার মাধ্যমে কারো যক্ষ্মা শনাক্ত হলে তাকে বিনামূল্যে সরকারিভাবে পূর্ণমেয়াদী চিকিৎসা প্রদান করা হবে। আক্রান্ত রোগীকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণও করা হয়। যার মাধ্যমে আক্রান্ত ব্যক্তি পরিপূর্ণ সুস্থতা লাভ করবেন ইনশাআল্লাহ। তবে কেউ চিকিৎসায় অবহেলা করলে তার বিভিন্ন ধরনের শারীরিক জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। এমনকি বাড়তে পারে মৃত্যু ঝুঁকিও।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।