দুই চোখ হারিয়েও বাঁচার জন্য সংগ্রাম করছে লালমোহনের নজরুল

জাহিদ দুলাল, লালমোহন ॥ প্রায় ৪৫ বছরের যুবক মো. নজরুল ইসলাম। দৃষ্টি নেই দুই চোখের। তবুও অদম্য তিনি। তার কাছে অসাধ্য নেই তেমন কিছুই। দৃষ্টিহীন দুই চোখ নিয়ে বাঁচার তাগিদে রোজ সংগ্রাম চালাচ্ছেন ভোলার লালমোহন উপজেলার লালমোহন ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের ফুলবাগিচা এলাকার আলতাব হাওলাদার বাড়ির মো. সফিজল ইসলামের ছেলে নজরুল ইসলাম।
তিনি জানান, বয়স যখন ১২ অথবা ১৫, তখন টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হই। এর ফলে দুই চোখের দৃষ্টি ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যেতে শুরু করে। নিজের ২০ বছর বয়সে পুরোপুরি হারিয়ে ফেলি দুই চোখের দৃষ্টিই। এরপর থেকে শুরু হয় জীবন যুদ্ধ। তখন থেকেই এই পর্যন্ত বেঁচে থাকার তাগিদে করতে হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের কাজ।
দৃষ্টিহীন যুবক নজরুল ইসলাম জানান, এখন দিনমজুরীতে কাজ করি। যার মধ্যে বড় বড় গাছে উঠে ডাল-পালা পরিষ্কার করা, ধান মাড়াই, ধান কাটা ও মাছ ধরাসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ রয়েছে। একটু কষ্ট হলেও এসব করতে হয়। কারণ কাজ না করলে খাওয়া বন্ধ। প্রতিদিন কাজ না থাকলেও মাসে দিনমজুরীতে কাজ করে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকার মতো উপার্জন করি।
যুবক নজরুল আরো জানান, সংসারে চার মেয়ে আর স্ত্রী আছে। আমার উপার্জনেই জোটে সকলের তিন বেলার খাবার। নিজের সম্পত্তি নেই। তাই সন্তান আর স্ত্রীকে নিয়ে বাবার বসতঘরেই থাকি। নিজের উপার্জন দিয়ে সেখানে কোনো রকমে সন্তান আর স্ত্রীকে নিয়ে দিন কেটে যাচ্ছে।
তিনি জানান, দুই চোখেই না দেখতে পাওয়ার কারণে একটি প্রতিবন্ধী ভাতা পেতাম। তবে বিগত কয়েক মাস ধরে সেই ভাতার টাকা আসা বন্ধ হয়ে গেছে। ওই ভাতাটি চালু হলে কষ্ট অনেকটা কমতো। তাই আমার নামের প্রতিবন্ধী ভাতাটি পূণরায় চালু করার দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে লালমোহন ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. জসিম উদ্দিন জানান, নজরুল ওরফে নজির, তার দুই চোখই দৃষ্টিহীন। বাঁচার জন্য বিভিন্ন ধরনের কাজ করেন তিনি। আমরা তাকে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সাধ্যের মধ্যে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করছি। এছাড়া তার নামে যে প্রতিবন্ধী ভাতা রয়েছে, তা প্রতারকরা প্রতারণা করে হাতিয়ে নিয়েছে। নজরুল সমাজসেবা অফিসে গেলে তা ঠিক হয়ে যাবে।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।