সর্বশেষঃ

মধ্যরাত : পর্ব-২১১

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন)

(গত পর্বের পর) : বাসন্তী অলকের স্ত্রী-উমাকে স্নান করিয়ে সাদা এক খানা থান শাড়ী পড়িয়েছে। উমার দিকে ভয়ে আমি তাকাকে পারিনি। উমাকে আমি এই পরিবেশে দেখব বলে আমি চিন্তা করিনি। ৩দিন এই ভাবে চলল। ৪দিনের দিন শুনলাম বাসন্তী উমার মুখে কিছু তুলে দিয়েছিল। উমা একটু শান্ত হয়ে এসেছে। আমি বুদ্ধি করে সুশান্তর ভাইদের কাছে পাবনায় তার করে দিলাম। ভাইর দুই ছেলে লন্ডন থাকে। তার কাছে ফোন করলাম। উমার ভাইরা কলকাতায় থাকে, হাওড়ায় তাদের জানালাম। এমনি নানাবিধ কর্তব্য কাজ সমাধা করার চেষ্টা করলাম। টরেন্টো ব্যাংকে সুশান্তর কি ক্যাস আছে, পাশ বই বের করে দেখলাম। মন্দনা, উমার জন্য মোটামুটি বেশ কিছু রেখেছে। উমা হিসেব করে খেলে চলবে কিছুদিন। টরেন্টো যাওয়ার জন একদিন সময় করতে হবে। সেখানে উমার কাপড়-চোপড়, সুশান্তর জামা-কাপড়, ব্যাংকে উমার গহনা, সেগুলোর খোঁজ-খবর নিতে হবে। উমাকে এখন এসব ব্যাপারে কিচুই জিজ্ঞাসা করার মত উমার মন-মানসিকতা নেই। আমারও মনের অবস্থা তদ্রুপ। বাসন্তী এসে বলল, প্রশান্ত দা; উমাদি চুল কেটে ফেরতে চাচ্ছে। আমি বললাম, এগুলো ধর্মের আইন ন। এ একটা মস্তবড় কুসংস্কার। চুল কাটলেই কি সব দুঃখ-কষ্ট, ব্যথা-বেদনা, স্বামীর প্রতি ভালবাসার প্রকাশ পায় ?
উমাকে বল এসব না করতে, তাহলে আমি খুব দুঃখ পাব। ও আমার ছোট বোন, ওকে আমি ¯েœহ করি। ও যেমনি এতদিন ছিল, তেমনি থাকবে। সুশান্ত মরে নাই, সে বেঁচে আছে। উমার ভালবাসার মধ্যে দিয়ে সে বেঁচে থাকবে। বাসন্তী ক্যাল ফ্যাল করে আমার মুখের দিকে চেয়ে বলল, প্রশান্ত দা আপনি এসব কি বলছেন, লোকে শুনলে হাসবে।
দোলার শরীরটা ভাল না। কিছু খেতে পারে না। মাথা ঘোরে, বমি হয়, প্রায় সময় শুয়ে থাকে। কচ বুঝি লসএঞ্জেল এ একটা চাকুরীর দরখাস্ত করেছিল, সেখান থেকে ইন্টারভিউতে ডেকেছে। আমাকে বলল দাদু, দোলাকে আপনার কাছে রেখে যাই। আপনি এখন বড় একা। দোলা থাকলে, উমাদি থাকলে আপনার সাথে গল্প করলে আপনাদের মনের একটু আনন্দ আসতে পারে। তোমার যদি কোন অসুবিধা না হয় তাহলে রেখে যাও।
কচ লসএঞ্জেল যাওয়ার জন্য আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রওয়ানা হয়ে গেল। দোলা জানালার কাছে দাঁড়িয়ে কচের পথের দিকে তাকিয়ে থাকল। আমি পিছনে দাঁড়িয়ে ওর কাঁধে হাত রাখলাম। বললাম দোলা, অমনি করে অলুক্ষণের মত চেয়ে থাকতে নেই। দোলা জানালার কাছ থেকে সরে এল। আমি বললাম, দোলা তুই বড় দিন দিন কেমন শুকিয়ে যাচ্ছিস। কিছু খাওয়া-দাওয়া করিস না ? দোলা বলল, আমার কিছু খেতে ইচ্ছে করে না। আমি বললাম, তবু জোর করে খেতে হয়। উমা তখন ড্রইং রুমে বসে বসে সুশান্তর একখানা বড় ছবির দিকে অনিমেষ নয়নে চেয়ে আছে। এটা বোধ হয় সুশান্তর যৌবন কালের ছবি। হঠাৎ ফোন বেজে উঠল। আমি ফোন ধরলাম। হ্যাঁলে ডোরার গলা, প্রশান্ত তোমরা কেন আছ ? হ্যা, ভালো কথা, তোমার বন্ধু সুশান্ত দা কেমন আছে ? ওর শরীর খারাপ জেনেছিলাম। আমার এত কাজ, ভীষণ ব্যস্ত থাকায় তোমাদের খবর নিতে পারি নাই। আমি চুপ করে থাকলাম, ডোরা বলল হ্যাঁলো হ্যাঁলো, কথা বল ? তোমরা কেমন আছ ? আমি বললাম, সুশান্ত নেই। ডোরা বলল, ওনি কোথায় গেলেন আবার ? আমি আবার চুপ করে থাকলাম। তারপর বললাম, সুশান্ত এ পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে। ডোরা বলল বলকি ? এই বলে ওর হাত থেকে ফোনের রিসিভারটা পরে যাওয়ার শব্দ শুনলাম।

(চলবে—-)

আরও পড়ুন

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।

You cannot copy content of this page