ভোলা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কি কোচিং ব্যবসা বন্ধ করছেন !

শিক্ষানবিশ রিপোর্টার ॥ ভোলা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরিক্ষায় ৯ম শ্রেণির ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র বিষয়ে ”ছাত্র-ছাত্রীরা কোচিং সেন্টারে আনন্দ উল্লাস করতে যায়, “এখনই উপযুক্ত সময় তথাকথিত কোচিং সেন্টারে যাওয়ার মানসিকতা বন্ধ করা” এমন উদ্ধৃতি উল্লেখ করে শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করা হয়েছে। রবিবার (১৪ নভেম্বর) এমন একটি প্রশ্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে শিক্ষার্থী-অভিভাবক এবং নেটিজেনরদের মধ্যে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৯ম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী-অভিভাবক বলেন, প্রশ্নপত্রে এমন লেখা দেখে একটু অবাকই হয়েছি ! কেননা, বিদ্যালয়ের শ্রেণি শিক্ষকরা বিগত বছরগুলোতেও শিক্ষার্থীদের কোচিং-এ পড়াতেন, এখনও পড়াচ্ছেন। এমনকি যেসব শিক্ষার্থী শ্রেণি শিক্ষকদের কোচিং-এ পড়তে যায় না, তাদেরকে ভেরাতে বিভিন্ন কূটকৌশলও অবলম্বন করছেন তারা। আবার তারাই শিক্ষার্থীরা কোচিং-এ যাওয়া বন্ধ করতে প্রশ্নপত্রে এমন উদ্ধৃতি ছাপিয়েছেন। আমার মতে, শিক্ষার্থীরা তাদের কোচিং-এ যাওয়া বন্ধ করুক, এটা হয়তো শিক্ষকরা চান না, বরং নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নে, কোচিং ব্যবসা বন্ধ করতে সরকার; শিক্ষকদের যে নির্দেশনা দিয়েছেন, সে নির্দেশনা পেয়ে তারা সাধু সাজার চেষ্টা করছেন।
আরেক অভিভাবক মন্তব্য করে বলেছেন, যারা কোচিং-এ পড়ে, ক্লাসে ঐসব শিক্ষার্থীদের প্রতি বিদ্যালয় শিক্ষকদের থাকে আশীর্বাদ, না পড়লেই শতশত অভিযোগ। সেই শিক্ষকরাই এখন বলছেন ভিন্ন কথা। এখন প্রশ্ন হলো, আমাদের মেয়েরা তো তাদের কোচিং-এ এখনও পড়ছেন। কোচিং-এ যদি শিক্ষার্থীরা আনন্দ উল্লাস করতেই যায়, তাহলে ভোলা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এখনও কোচিং-এ পড়ান কেন ? কোচিং-এ এনে পড়ানো থেকে বাদ যাচ্ছে না, বছরের শুরুতে নতুন কারিকুলামে যুক্ত হওয়া ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণির ছাত্রীরাও।
অথচ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বলেছিলো, এই দুই শ্রেণির নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী পাঠ্যবই ক্লাসে ভালো করে পড়ালে, এদের কোচিং-এর প্রয়োজন হবে না। তিনি আরও বলেন, ”বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কোচিং-এ পড়ানো চালিয়েও যাবেন; আবার শিক্ষার্থীরা কোচিং সেন্টারে যাওয়া বন্ধ করতে; প্রশ্নপত্রে এসব উদ্ধৃতি লিখে দিবেন, এগুলো শিক্ষকদের কোচিং বন্ধে, সরকারের দেওয়া নির্দেশনার সাথে লুকোচুরি খেলা ছাড়া আর কিছুই নয়।
আরেক অভিভাবক বলেছেন, শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশনা হয়তো বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে ভোলা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। নতুন কারিকুলামে উজ্জীবিত হয়ে নিজ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কোচিং-এ পড়ানো বন্ধ করতে যাচ্ছে শ্রেণি শিক্ষকরা। যদি এমনটাই হয়ে থাকে, তাহলে প্রশ্নপত্রে উল্লেখ করা উদ্ধৃতি “ছাত্র-ছাত্রীরা কোচিং সেন্টারে আনন্দ উল্লাস করতে যায়, ”তথাকথিত কোচিং সেন্টারে যাওয়ার মানসিকতা বন্ধ করা” এমন লেখাকে স্বাগত জানাই।
এ বিষয়ে ভোলা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাধান শিক্ষক এ, কে, এম ছালেহ্ উদ্দিন’র নিকট সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিলো, বার্ষিক পরিক্ষার ৯ম শ্রেণির ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র বিষয়ে “’ছাত্র-ছাত্রীরা কোচিং সেন্টারে আনন্দ উল্লাস করতে যায়” “এখনই উপযুক্ত সময় তথাকথিত কোচিং সেন্টারে যাওয়ার মানসিকতা বন্ধ করা” এমন উদ্ধৃতি উল্লেখ করে শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করা হয়েছে। অথচ আপনার বিদ্যালয়ের প্রায় সকল শিক্ষকরা এখনো কোচিং ও প্রাইভেটে নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছেন। এটাকে আপনি কিভাবে দেখছেন? উত্তরে তিনি বলেন, শিক্ষা আইন অনুযায়ী নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পড়ানো যাবে না, এটা আপনিও জানেন, আমিও জানি, সকল শিক্ষকবৃন্দও অবগত রয়েছে। আমি তাদেরকে বেশ কয়েবার বলেছি। এরপরও কোনো শিক্ষক যদি আইন অমান্য করে কোচিং ও প্রাইভেটে নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পড়ান। এর দায়ভার তাকেই নিতে হবে।
উল্লেখ্য, গত ১৫ই জুলাই বহুল আলোচিত শিক্ষা আইনের খসড়া চূড়ান্ত করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত সময়ের বাইরে শিক্ষকদের কোচিং ও প্রাইভেটে পড়ানোর সুযোগ রাখা হয়েছে। তবে, কোনো শিক্ষক তাঁর নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে কোচিং বা প্রাইভেটে পড়াতে পারবেন না।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।