সর্বশেষঃ

ভোলায় মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান

নিষেধাজ্ঞা মানবো কতদিন, হাড়ির চালতো ফুরিয়ে আসছে

এইচ এম নাহিদ ॥ ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়ায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় আজ ৬ দিন অতিবাহিত হচ্ছে। এরই মধ্যে জেলেদের মাঝে অস্থিরতা বিরাজ করছে। গত ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা চলবে। এবারের মা’ ইলিশ রক্ষা অভিযান বিগত বছর গুলো থেকে একটু কড়াকরি লক্ষ্য করা গেছে। সরেজমিনে গিয়ে এমন দৃশ্যই লক্ষ্য করা গেছে। নদী গুলোতে জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য তেমন একটা চোখে পড়েনি। মাঝে মাঝে দু’একটা যায়গায় মাছ শিকারের দৃশ্য চোখে পড়লেও গত বছরের তুলনায় এর সংখ্যা অনেক কম। কিন্তু দিন যত যাচ্ছে ততই জেলেদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। তারা বলছেন, নিষেধাজ্ঞা মানবো কতদিন। হাড়ির চালতো ফুরিয়ে আসছে, মহাজনের দাদন, সমিতির কিস্তি পরিশোধ কি ভাবে করবো।
বছর জুরে নিষেধাজ্ঞায় চরম সঙ্কটে দিনাতিপাত করছেন ভোলার জেলেরা। একদিকে নিষেধাজ্ঞা অন্যদিকে কর্মহীন সময়। এই অবস্থায় সংসারের ভরণ পোষণের অক্ষমতায় চরম দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন। বকেয়া পরিশোধ করতে না পারায় জুটছে না নতুন করে ধার দেনাও। ভোলার মৎস্য বিভাগ ১৩৩৮৯৯টি জেলে পরিবারকে ৩৩৪৭.৪৮ মে.টন চাল মানবিক সহায়তার জন্য ভিজিএফ কর্মসূচীর আওতায় নিবন্ধিত জেলেদের মাঝে বিতরণ করেছে। তার পরেও জেলেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নানান কৌশলে নদীতে জাল ফেলে মা ইলিশ নিধন করছেন।
ভোলায় জেলেদের চাল বিতরণ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। জেলেরা বার বার অভিযোগ করে আসছেন যে প্রকৃত জেলেদের বিশাল একটি অংশ সরকারের মানবিক সহায়তা প্রকল্প ভিজিএফ কার্ড পায়নি। যারা পেয়েছেন তাদের মধ্যে অনেকেই জেলে না হয়েও সরকারের কাছ থেকে নিবন্ধিত জেলে সেজে সুবিধা নিচ্ছেন। অথচ প্রকৃত জেলেরা এই সহায়তা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। নদীতে সরকারের নিষেধাজ্ঞা আসলেই বঞ্চিত জেলেরা সংসারের ভরণ পোষণের জন্য এর জন্য আতঙ্কিত থাকেন। প্রতিবছর দেশের মৎস্য বিভাগ জেলে কার্ডের তালিকা লম্বা করলেও সেই তালিকা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রকৃত জেলেরা। এর জন্য তারা দায়িত্ব প্রাপ্ত মৎস্য অফিসার ও সংশ্লিষ্ট ইউপির চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের দায়ী করছেন।
জেলেরা বলেছন নদীকে সম্পুর্ণ অভিযানের আওতায় আনতে হলে বিগত বছর গুলোতে সংশ্লিষ্ট জন প্রতিনিধি ও মৎস্য কর্মকর্তাদের তদন্তের আওতায় এনে প্রকৃত পেশাদার জেলেদের মাঝে সরকারের মানবিক সহায়তাগুলো বন্টন করলেই মৎস্য অভিযান সফল ও সার্থকতা পাবে। ভোলা সদর উপজেলার ভেদুরিয়া ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড হাজির হাট রাস্তার মাথার জেলে আব্দুল হাশিম মাঝি (৪৫) বলেন, নিষেধাজ্ঞা কয়দিন মানুম, জোর কইরা আমাগো উপর অভিযান চাপাইয়া দিবেন কয়দিন, পেডে ভাত আছে কিনা খবর লইছেন ? হুনছি সরকার নাকি আমাগোরে চাইল দেয়, হেই চাইল কারা পায় ? আমি ২৫ বছর ধইর‌্যা নদীতে জাল বাই। আমারে কার্ড কে দিব ? পেডের টানে নদীতে গেলে (জেল হাজতে) গারদে ভরেন। আমাগো বউ পোলাইনের কি হইবো হেই কতা আমনেরা চিন্তা করেন না। খালি নদীতে পাহারা দিতে আহেন।


অনিবন্ধিত জেলে আব্দুর রহমান মাঝি (৩০), সবুজ মাঝি (৩৫), রহিম মাঝি (২৮), মঞ্জু মাঝি (৩০) সোহেল মাঝি (৩৫), নিরব মাঝি (৩২), কালাম মাঝি (৩৮), ইদ্রিস মাঝি (৪৫) বলেন, সরকার বিভিন্ন সময় জাইলাদের কত সুবিধা দেয় আমরা কি জাইলা না? এত বছর নদীতে জাল বাই, আমরা জাইলা না হইলে চেয়ারম্যান, মেম্বারদে বাড়ির কামের মানুষ জাইলা হয় ক্যামনে। আমরা সাহায্য সহযোগীতাও পামুনা আবার নদীতে জালও হালাইতে পারুম না। এইডা কেমন কথা, আমাগো কি সংসার নাই ? সমিতির কিস্তি, মহাজনের দাদনের টাকা কি দিয়া শোধ করুম ?
সুত্রমতে, ভোলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৬৫ হাজার। এর মধ্যে ১ লাখ ৩২ হাজার জেলে খাদ্য সহায়তা পেছেন। নিবন্ধিত বাকি ২৬ হাজার জেলে এবং অনিবন্ধিত ৮০ হাজার জেলে সরকারের মানবিক খাদ্য সহায়তা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। নদীতে অভিযান হলে এরা নানান কৌশল অবলম্বন করে নদীতে মাছ শিকার করছেন। প্রশাসনের একটি অংশ জেনেও না জানার ভান করে থাকায় এদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যাবস্থা নেয়া সম্ভব হচ্ছেনা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সদর উপজেলার এক মৎস্য অফিসার জেলেদের অভিযোগ শিকার করে বলেন, রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে আমরা মাঠ পর্যায়ের জেলেদের নিয়ে কাজ করতে পারিনা। তাদের নামের সুযোগ সুবিধা তাদের হাতে পৌছাতে পারিনা। এর জন্য আমরা অসহায়, আমাদের হাত পা বাঁধা।
জেলা মৎস্য অফিসার মু: আবুল কালাম আজাদ বলেন, মৎস্য কার্ড বিতরণে কোন অনিয়ম হলে আমরা মাঠ পর্যায়ে জেলেদের নিয়ে কর্মশালা করে প্রতিকারের ব্যাবস্থা করবো। আর বঞ্চিত অনিবন্ধিত জেলেদের সরকারের সহায়তার আওতায় এনে পূর্ণবাসনের ব্যাবস্থা করবো।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।