জামায়াত বিএনপির ঘারে ভর করে সুযোগের অপেক্ষায়

আওয়ামীলীগে বিভেদ, ঐক্য নেই বিএনপিতে

এইচ এম নাহিদ ॥ দ্বীপজেলা ভোলা দেশের দক্ষিণাঞ্চলের প্রাকৃতিক গ্যাসে সমৃদ্ধ একটি অঞ্চল। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কে সামনে রেখে ভোলা জেলার ৪টি সংসদীয় আসনেই নির্বাচনী বাতাস বইতে শুরু করেছে। আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এই আসনগুলোর রাজনীতি এখন সরগরম। বর্তমানে জেলার সবকটি আসনেই আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় ৪টি আসনেই আওয়ামী লীগের ভিতরে বাহিরে প্রকাশ্য কিছু বিভেদ শুরু হয়েছে। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোলা জেলার ৪টি সংসদীয় আসনেই আওয়ামীলীগ নিরঙ্কুশ ভাবে জয়লাভ করলেও আসছে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে পূর্বের প্রত্যাশা পুরনে বড় চ্যালেঞ্জ সামনে অপেক্ষা করছে দলটির। দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে আওয়ামীলীগের শীর্ষ মহল। আত্বীয় করন, পক্ষপাতমূলক আচরণ, পছন্দের লোকেদের প্রাধান্য দেয়া এবং দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের অবমুল্যায়ন করে হাইব্রিডদের মূল্যায়ন, অঢেল সম্পদ গড়ার দিকে মনোনিবেশ দিয়ে সাধারন ভোটারদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় তৃণমূল নেতাদের আশঙ্কা, সামনের নির্বাচনে এসব কোন্দল মিটিয়ে নির্বাচন করাটা বড় জটিল হবে এবং দলীয় কোন্দল তীব্র হতে পারে বলে মনে করছেন তারা।
এদিকে রাজনীতির মাঠ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দখলে থাকলেও বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে সক্রিয় বিএনপি জোট। টানা ১৬ বছর ক্ষমতার বাহিরে থাকার কারণে ভোলার বিএনপির রাজনীতি অনেকটাই ঐক্যহীন, অগুছালো। তার পরেও তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি আদায়ের আন্দোলনে থেকেই আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। দলটি হারানো আসন পুনরুদ্ধারে মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছে। তবে দলীয় ও অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন কমিটি দেওয়া নিয়ে তাদের মধ্যেও জোরালো গ্রুপিং বাণিজ্য রয়েছে। সবকিছু ছাপিয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ অন্য সমমনা দলগুলো তৃণমূল ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করছে।
ভোলা রাজননৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি জামায়াত ভোলায় দর্শকের সারিতে অবস্থান করছে। এরা বিএনপি জোটের ঘারে ভর করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে বড় ধরনের সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছে এই শক্তি। তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে আওয়ামীলীগের জন্য ভোলার ৪ টি আসনেই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়াবে।
ভোলা সদর-(১) : জাতীয় সংসদের ১১৫ নং এ আসনটি ১টি পৌরসভা ও ১৩ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। ভোটার সংখ্যা ৩,০৯,৯৩৩ জন। এ আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হলেও বিএনপি ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির ও প্রভাব রয়েছে। ভোলা-১ আসন থেকে তোফায়েল আহমেদ ৫ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী হবেন। এবার জেলার ৪টি আসনের মধ্যে ভোলা সদর আসনকে নিয়ে চলছে নানা হিসেব নিকেশ। মহান স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে আওয়ামীলীগ থেকে তোফায়েল আহামেদ’র শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী কেউ না থাকলেও দ্বাদশ সংসদ নির্বচনের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। আওয়ামীলীগের এই আসনটিতে এবার অভ্যন্তরীণ কোন্দল ব্যাপক ভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। ক্ষমতার ভারসাম্যহীন রাজনীতিই মূল কারণ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকগণ। তারা মনে করছেন, ক্ষমতার এই ১৫ বছরে ব্যাপক আত্মীয়করণ, ত্যাগী নেতা-কর্মীদের অবমূল্যায়নে দলের ভিতরে ও বাহিরে বিদ্রহীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। যার ফলে দলটিতে কয়েকটি গ্রুপে ভাগ হওয়ার ফলে তৃণমূল দুর্বল হয়েছে। এই অবস্থার অবসান না হলে আসনটিতে আওয়ামীগের বড় বিপর্যয় হতে পারে।
এবারও এই আসনটিতে বর্ষীয়ান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব তোফায়েল আহমেদ মনোনয়ন চাইবেন। তার বিপরীতে আছেন জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ফজলুল কাদের মজনু মোল্লা। এছাড়াও মনোনয়নের লড়াইয়ে আছেন ঢাকা মহানগর (উত্তর) আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মাহবুবুর রহমান হিরণ ও আওয়ামীলীগের উপ-কমিটির সদস্য হেমায়েত উদ্দিন হিমু।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা আওয়ামীলীগের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছেন, এই আসনটিতে যদি কোন কারণে জাতীয় নেতা তোফায়েল আহমেদ নির্বাচন না করেন তাহলে তার একামাত্র কন্যা ডা. তাসলিমা আহমেদ মুন্নী ভোলা সদর আসন থেকে এবার নির্বাচন করতে পারেন।
অন্যদিকে ভোলা সদর আসনে বিএনপির অন্তঃকোন্দল চরমে। ৫ মে ২০১২ সালে প্রয়াত সাবেক মন্ত্রী মোশারেফ হোসেন শাজাহানের মৃত্যুর পর থেকে বিএনপির সদর আসনটিতে দলীয় কোন্দল চরমে দেখা দিয়েছে। পাল্টাপাল্টি কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে জেলা থেকে তৃণমূল পর্যন্ত দু’টি গ্রুপে বিভক্ত ভোলা জেলা বিএনপি। দলটিতে সাংগঠনিক কাঠামো পূর্বের চেয়ে বর্তমানে একেবারেই নাজুক। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘনিষ্ট গিয়াস উদ্দিন আল মামুন তার ভাই সাবেক বিএনপির সংসদ হাফিজ ইব্রাহীমকে দিয়ে একটি গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করছেন, আরেকটি গ্রুপকে সাবেক সংসদ ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অবঃ) হাফিজ উদ্দিন, নাজিম উদ্দিন আলম ও জেলা বিএনপির সভাপতি গোলামনবী আলমগীর নিয়ন্ত্রণ করছেন। দলটিতে যদি গ্রুপিং সমস্যা অচিরেই নিয়ন্ত্রণ না হয় তাহলে নিজেরাই নিজেদের মধ্যে বড় ধরনের সংঘাতে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। দলটির দু’টি গ্রুপই আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে জামায়াতকে ছায়াজোট বানিয়ে নিজেদের সংঘবদ্ধ করার চেষ্টা করছে।
এই আসনটিতে জেলা বিএনপির সভাপতি গোলামনবী আলমগীর দ্বাদশ সংসদ নির্বচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী। মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য হায়দার আলী লেলিন, জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক শফিউর রহমান কিরন। যদি তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয় তাহলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘনিষ্ট গিয়াস উদ্দিন আল মামুন ভোলা সদর আসন থেকে নির্বাচন করতে পারেন বলে দলীয় একটি সূত্র বলছে।
এদিকে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)’র প্রার্থী হচ্ছেন দলটির চেয়ারম্যান সাবেক সাংসদ আন্দালিব রহমান পার্থ। বিজেপির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত নাজিউর রহমান মঞ্জুর মৃত্যুর পর দলটির হাল ধরেন পার্থ। অনেক চড়াই-উতড়াই পার করে দীর্ঘ দেড়যুগ ধরে টিকে থাকার লড়াইয়ে এখনো বেশ অবস্থানে রয়েছে দলটি। দলটির সভাপতি আমিরুল ইসলাম রতন বলছেন, নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকারের দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা এই সরকারের অধীনে আর কোন নির্বাচনে অংশগ্রহন করবো না। যদি দাবী আদায় হয় তাহলে নির্বাচনে অংশগ্রহন করবো। আর সেটা একক না জোটবদ্ধ ভাবে হবে তা পরিস্থিতি বুঝে বলা যাবে। তবে দলের নির্ভরযোগ্য একটি সুত্র বলছে, যদি বিএনপির দাবী আদায় হয় তাহলে আমরা বিএনপির সাথে জোটবদ্ধ হয়েই ভোলা ১ আসন থেকে নির্বাচন করবো।
এছাড়াও বাংলাদেশ ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন থেকে ভোলা-১ আসনে প্রার্থী হবেন, মাওলানা ইয়াছিন নবীপূরী। জাতীয় পার্টির এরশাদ থেকে মনোনয়ন চাইবেন কেফায়েত উল্লাহ নজীব, আজিম গোলদার প্রমুখ।
প্রিয় পাঠক, আগামীকাল দেখুন ভোলা-২ (দৌলতখান-বোরহানউদ্দিন) আসন নিয়ে নির্বাচনী হালচাল।

প্রিয় পাঠক, আগামীকাল দেখুন ভোলা-২ (দৌলতখান-বোরহানউদ্দিন) আসন নিয়ে নির্বাচনী হালচাল।

 

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।