জীবনে প্রথম বিসিএস-এ স্বপ্ন পূরণ হলো ভোলার ছেলে নিষাদ’র

ডেস্ক রিপোর্ট ॥ সদ্য ঘোষিত ফলাফলে ৪১ তম বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন ভোলা সদর উপজেলার মেধাবী ছেলে আওসান হাবিব নিষাদ। আহসান হাবিব নিষাদ ভোলা সদর উপজেলার পশ্চিম চরনোয়াবাদ এর বাসিন্দা ফরহাদ হোসেন ও রেহানা বেগমের এর জ্যেষ্ঠ পুত্র, ছোট ভাই রিফাত সেনাবাহিনীতে সৈনিক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন এবং ছোট বোন অন্যা ভোলা সদর গার্লস স্কুল এ ৮ম শ্রেণিতে পড়ছেন, পরিবারের ৩ ভাই-বোনের মধ্যে জ্যেষ্ঠ তিনি।
আওসান হাবিব নিষাদ পড়ালেখা শুরু করেন চরনোয়াবাদ মুসলিম হাই স্কুল থেকে। ২০১১ সালে চরনোয়াবাদ মুসলিম হাই স্কুল থেকে জিপিএ ফাইভ নিয়ে এসএসসি সম্পূর্ণ করেন। সে সময়ে একমাত্র তিনিই তার স্কুলে জিপিএ ফাইভ পেয়েছিল। ২০১৩ সালে আলতাজের রহমান ডিগ্রি কলেজ থেকে জিপিএ ফাইভ নিয়ে এইচএসসি সম্পূর্ণ করেন। ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর থেকে যুক্ত হয় সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনে। এক সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সাংস্কৃতিক সংগঠন ধ্রুবতারার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। মিউজিকের প্রতিও ছিল তার প্রবল আগ্রহ।
প্রশাসন ক্যাডার হওয়ার সেই গল্পের শুরুটা নিষাদ হাবিব জানান, সেই সময়ে অনার্সের রেজাল্টও প্রকাশিত হয়নি। কিছুদিন আগেই অনার্সের পরীক্ষা দিলাম। বিসিএস দেয়ার কোনো ইচ্ছে ছিলো না এবং বিসিএস সম্পর্কে খুব একটা ধারণা ছিল না। আমি প্লান করেছিলাম আইবিএ করবো। ইএসআরএম বিভাগের সেলিম ভাই (এখন দুদক এর এডি) আর গণিতের রিওন ভাই (এখন অগ্রণী ব্যাংকে কর্মরত) জোর করেই ফর্ম তুলেন। অনার্স রেজাল্ট এপিয়ার্ড দিয়ে আবেদন করে। ভাই না জোর করলে হয়ত আজ কিছুই সম্ভব হতো না। বাসায় (ভোলা) বসে বসে পড়াশোনা করেছি। কোথাও কোচিং করিনি। লাইভ এমসিকিউ তে পরীক্ষা দিতাম। তা ছাড়াও আমার ডিপার্টমেন্টের রিফাত ফারাবি সৌরভ ভাই (এখন অডিট ক্যাডার) উনি বেশ হেল্প করেছিল। ভাইদের কাছে অনেক কৃতজ্ঞ।
তিনি আরও জানান, ৪১ তম বিসিএসের রিটেনের পর আমার এনএসআই এ লিখিত পরীক্ষা পাশ করি কিন্তু ভাইভা দেইনি। কারণ সেখানে যোগদান করার পর তিন বছর কোথায় পরীক্ষা দেয়া যাবে না। শুধুমাত্র বিসিএস পরীক্ষার জন্য এত বড় একটা রিস্ক নেই। মাঝে মাঝে খুব টেনশন হতো বড় একটা সুযোগ হাতছাড়া করলাম যদি না হয়। আল্লাহর রহমতে ফাইনালি তো হয়েই গেল।
হাবিব নিষাদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় বলতে আমি যেটা বুঝতাম ক্লাব আর মুক্তমঞ্চ। পড়াশোনা একদমই করতাম না। আমি একজন ব্যাকবেঞ্চার। আমার সিজিপিএ ছিল ২.৯২। আরেকটা মজার কাহিনী হলো বিসিএস এর ফর্ম পূরণের সময় রিওন ভাই জিজ্ঞাসা করেছিল, প্রথমে কি চয়েজ দিবি ? এডমিন, নাকি পুলিশ ? পরে আমি ভাইয়ের থেকে জানতে চাইলাম, এডমিন হলে আর পুলিশ হলে কি আসবে প্রথমে ? তিনি বললো, এডমিন হলে ম্যাজিস্ট্রেট আর পুলিশ হলে এএসপি। ম্যাজিস্ট্রেট এর কথা শুনে আগ্রহ অনেক বেড়ে যায়। আমি যখন এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছি তখন পরীক্ষার হলে ম্যাজিস্ট্রেট আসতো, আর স্যাররা আগে থেকেই সংকেত দিতো। সে সময় ভয়ও কাজ করতো। তাই ভাইকে বলি এডমিন দিতে আর পরেরেগুলো আপনার মন মতো দিয়ে দিন। আমি নিজেও জানি না কি কি চয়েজ দিয়েছিল! ভাইবার আগে দেখলাম এডমিন, পুলিশ, কাস্টম, অডিট এভাবে ছিল। বিসিএস ভাইভা ছিল আমার জীবনের প্রথম এবং একমাত্র ভাইভা।
একাধিক টিউশন করালে পড়ার ক্ষতি হবে তাই ছোট ভাই বলছে একটা টিউশনি করা আর টাকা যা লাগে সব আমি দিবো। বড় ভাইরা সবসময় ছোটদের জীবন সহজ করে দেয়, আর আমার ছোট ভাই আমার জীবন টা সহজ করে দিছিল।
প্রতিষ্ঠা করেন MBMC (MBSTU Band Music Community). তিনি তার কো-ফাউন্ডার ছিলেন এবং সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। গিটারিস্ট হিসাবে অন্বেষণ এবং ফানুস নামে দুটি ব্যান্ডেও যুক্ত ছিলেন। ধ্রুবতারা ক্লাবের সামনে ধ্রুব গিটার স্কুল নামে একটা গিটার শিখার স্কুল চালু করেন। সেখানে বিনা পারিশ্রমিকে সবাইকে গিটার শিখাতো। প্রসঙ্গ, ৩ আগস্ট ৪১ তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করেছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। সেখানে ২৫২০ জনকে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।