সীমাহীন অনিয়মের অভিযোগ

আড়াই যুগ ধরে হ-য-ব-র-ল অবস্থায় মনপুরার বিদ্যুৎ উপ-কেন্দ্র

এইচ এম নাহিদ ॥ দীর্ঘ আড়াই যুগধরে মনপুরার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটিতে নানান সমস্যায় জর্জরিত হয়ে হযবরল অবস্থা। নিয়মিত আবাসিক অফিসার কর্মস্থলে থাকেন না। দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে উৎপাদন কেন্দ্রে কোন অপারেটর, টেকনেশিয়ান নেই। ১৫ বছর ধরে কোন উচ্চমান সহকারি হিসাব রক্ষক নেই। লাইনম্যান নেই একজনও, বিদ্যুৎ’র লাইন মেরামতের হেলপার (সাহায্যকারী) ও ভাড়াটিয়া লোক দিয়ে দীর্ঘ ২ যুগ ধরে চলছে মনপুরার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। এতে ভোগান্তিতে কয়েক লাখ মানুষ।
দক্ষ লোকের অভাবে অদক্ষ লোকগুলোর কাছে দায়িত্ব ন্যাস্ত হওয়ার কারনেই মনপুরার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটিতে সীমাহীন অনিয়ম, লুটপাট চলছে। দিনের ১৯ ঘন্টাই বিদ্যুৎ থাকেনা। রাঁতের ৫ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকলেও বারবার লোডসেডিং হয়। জ্বালানি তেলের সঠিক ব্যাবহার না থাকা, অবৈধ সংযোগ ও বিদ্যুৎ বিল নিয়ে অনিয়ম, আবাসিক কর্মকর্তার উদাসীনতায় এমনটি হচ্ছে। বলে মনে করেন উপজেলার বাসিন্দারা।
মনপুরা প্রেসক্লাবের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও কবি সীমান্ত হেলাল বলেন, আবাসিক অফিসার আব্দুস সালাম সকল দুর্নীতির কারিগর। গত মাস দুয়েক আগেও আবাসিক অফিসার আব্দুস সালামের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি সংস্থায় অভিযোগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। মনপুরার মানুষ বিশ্বাস করে এই অনিয়মের সাথে ওজোপাডিকোর উপর মহল জড়িত। আপনারা লেখা লেখি করে কোন লাভ হবেনা।
নাগরিক কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি নাদিম হাওলাদার বলেন, আমরা মনপুরার মানুষ দিনবদল আর স্মার্ট বাংলাদেশ চায়না আমরা বিদ্যুৎ চাই। ঘরে অসুস্থ সন্তান হাসপাতালে নিতে পারিনা বিদ্যুৎ নাই, বাচ্চারা লেখা পড়া করতে পারেনা বিদ্যুৎ নাই। প্রচন্ড তাপদাহে সমস্ত শরীর পুড়ে যাচ্ছে একটু বাতাসের জন্য হাহাকার বিদ্যুৎ নাই। ব্যাবসা বাণিজ্যর কোন উন্নতি হয়না, জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন হয়না, ৮/১০ ঘন্টা বিদ্যুৎ দেয়ার কথা আমাদের ৫ ঘন্টা দেয়। লুটপাট ছাড়া বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন কোন কাজই করতে জানেনা। এ নিয়ে অনেক আন্দোলন, সংগ্রাম করেছি কোন কাজ হয়না আর হবে বলেও আমাদের বিশ্বাস হয়না।
তথ্যমতে, মনপুরার ওয়েষ্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী (ওজোপাডিকোর) এই উপ-কেন্দ্রটিতে সদরের প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। ৮৫০ জন গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহর জন্য রয়েছে ৫শত কেভির দুইটি, ৬শত ৩০ কেভির একটি ১ মেঘাওয়াটের একটি ইঞ্জিন। বিভিন্ন সময় এসব ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে ব্যাহত হচ্ছে বিদ্যুৎ সরবরাহ। আগে বিচ্ছিন্ন এলাকাটিতে ২৪ ঘন্টায় ৮ ঘন্টা বিদ্যুৎ দেয়া হলেও এখন রাঁতে ৫ ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।
মনপুরার আবাসিক প্রকৌশলী আব্দুস সালাম বলছেন, মনপুরা উপজেলা ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী প্রতি বছরে ৬ কোটি টাকা লোকসান দিয়ে মনপুরাবাসিকে সার্ভিস দিচ্ছেন। এর বাহিরে তাদের কিছু করার নেই।
সংশ্লিষ্ট সুত্র বলছে, ১২ জুন ২০২৩ সোমবার, ঝালকাঠি জেলার পদ্মা অয়েল কোম্পানী থেকে মনপুরার আবাসিক প্রকৌশলী আব্দুস সালাম এইচ এস ডি ১৫১০ কোডের ১২০ ব্যারেল (২৪০০০ হাজার লিটার) জ্বালানি তৈল মনপুরার ওয়েস্ট পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানীর নামে ২৫ লক্ষ ৩০ হাজার ৩শত ২০ টাকা মূল্যে ক্রয় করেন। মনপুরার যে ইঞ্জিন চালিত জেনারেটর আছে তার হিসাব অনুযায়ী ক্রয়কৃত জ্বালানি দিয়ে প্রতি ঘন্টায় ৮০ লিটারে ১ হাজার ৬শত ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। ৫ ঘন্টায় ৪শত লিটার জ্বালানি খরচ করে ৮ হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হলে প্রতি মাসে ১২ হাজার লিটার জ্বালানি দিয়ে ২ লাখ ৪০ হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। অবশিষ্ট ১২ হাজার লিটার জ্বালানি যার ক্রয় মূল্য ১২ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা হিসেবে প্রতি মাসে অবশিষ্ট থাকবে।
একজন অফিস ষ্টাফ নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভোলার বাণী’কে বলেন, জহীর, হেলপার বিল্লাল আমাগো স্যারের ডান হাত। বিল্লালের বাপের কিছু ছিলনা কিন্তু সে এখন কোটিপতি। দামি সিগারেট, দামি পোষাক, দামি গাড়ী ছাড়া বিল্লালের চলেনা। আর জহীর ভাইকে স্যার এখানে ভাড়া করে এনেছেন। স্যারের খুব বিশ্বাসের লোক, টাকা পয়সার সকল হিসাব তার কাছে। জহীর ভাইর ২ টা মেয়ে ডাক্তার, ১ টা ঢাকার গণস্বাস্থ্য চাকুরী করেন আর ১ টা লন্ডনে থাকেন, আর ২ ছেলে ইঞ্জিনিয়ার। তিনি সকল আরাম আয়েস ত্যাগ করে মনপুরার বিচ্ছিন্ন দ্বীপে পড়ে আছেন শুধু মাত্র কালো ধান্দার জন্য।
আবাসিক প্রকৌশলী আব্দুস সালামের হিসেব অনুযায়ী বছরে ৬ কোটি টাকা কোম্পানীর লোকসান হলে জ্বালানি থেকে বেঁচে যাওয়া বছরে ১ কোটি ৫৪ লক্ষ ৮০ হাজার টাকার হদিস কোথায়। ১ টি মিটার থেকে ১০ থেকে ১৫ টি অবৈধ সংযোগের অস্তিত্ব মেলে। অবৈধ সংযোগের কারিদের কাছ থেকে প্রতি মাসে বিদ্যুৎ অফিসের এক অসাধু কর্মচারিকে কাল্কেশন দিতে হয়। সর্বচ্চ ৩ মাস বকেয়া বিদ্যুৎ বিল বাকি থাকলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে পুনরায় সংযোগ দিয়ে আর সি/ডিসির ৬৩০ টাকা দুইজন অফিস ষ্টাফ ভাগ করে নেয়। প্রায় ২ লক্ষ ৪০ হাজার ইউনিটের বিদ্যুৎ বিল বাড়ি বাড়ি গিয়ে এনজিওর আদলে দৈনিক বা সপ্তায় কাল্কেশন করেন মি. জহির মিয়া। যাহা বিদ্যুৎ ও জালানি আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অভিযোগগুলোর বিষয়ে অভিযুক্তদের সাথে আলাপ করলে তারা দুর্নীতি, অনিয়মের কথা শিকার করে একজন আরেক জনের উপর দোষারোপ করছেন। এবং বলছেন এগুলোর সব কিছু স্যার (আব্দুস সালাম) জানেন। আবাসিক প্রকৌশলী আব্দুস সালাম সকল অভিযোগ অস্বীকার করে ভোলার বাণী’কে বলেন, প্রতি মাসে আমাদের কোম্পানী ৪৫ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা লোকসান দিয়ে মনপুরা বাসিকে সেবা দিচ্ছেন। আমাদের যতটুকু ক্যাপাসিটি আছে ততটুকুই করছি এর বাহিরে নয়। আপনি আসেন মনপুরায় দাওয়াত রহিল।
ভোলা ওয়েষ্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানীর (ওজোপাডিকোর) নির্বাহী প্রকৌশলী ম. খালেদুল ইসলাম খাঁন-কে মনপুরা অফিসের অনিয়ম আর দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়গুলো খুব মনযোগ দিয়ে শুনে ব্যাস্ত আছি বলে ভোলার বাণীকে বলেন, আপনার সাথে পড়ে কথা হবে।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।