সর্বশেষঃ

মধ্যরাত : পর্ব-১৭১

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত পর্বের পর) : ডোরা ড্রইংরুমের ফ্লোরে চাদর পেতে তেমনি শান্ত মেয়েটির মত ঘুমিয়ে আছে। পাশের রুমে সুশান্ত উমা আছে। রাথরুমে জল নাড়ার শব্দ আমার কানে ঢুকছে। আমি আবার এসে বিছানায় শুয়ে থাকলাম। বেলা অনেক হল উমা ডোরা আমাকে চা খাওয়ার জন্য ডাকল। আমি হাতমুখ ধুয়ে ডাইনিং রুমে গেলাম। চা খেতে খেতে কয়েক বার ডোরার সাথে চোখা চোখি হল। ডোরা বলল প্রশান্ত, দোলা কুসুমদের খেতে বলেছি, আমার ইউনিভার্সিটির কয়েকজন বন্ধুকে বলতে চাই। কি বল ? আমি বললাম, তার ব্যাপারে আমার কি বলার আছে ? তুমি যদি টাকা খরচ করতে পার। রেঁধে খাওয়াতে পার ভাল। ডোরা বলল, জান আমি আজ অনেক বছর এখানে, আজ পর্যন্ত কোন বন্ধু বান্ধবীকে এক বেলাও নিমন্ত্রণ করে খেতে বলিনি। আশ্চর্য্য অথচ আমি অনেক নিমন্ত্রণ পাই, যাইও। একা একা থাকি, সব ফাংশনে নিমন্ত্রণে যাই, গেলে ভাল লাগে, লোকের সাথে মেলা মিশা করলে মনটাও প্রফুল্ল থাকে।
তাই বলছিলাম আজ শুভক্ষণে প্রশান্ত তুমি আর সুশান্ত বাবু উমাদি যখন আমার এই ছোট্ট কুটিরে পায়ের ধুলো দিয়ে আমার মনকে প্রফুল্ল ও আমোদিত করে তুললে, তখন এই কুটিরে একটু আনন্দের বাতি জ্বলুক। আমি বললাম, তুমি উপন্যাসিক, উপন্যাসিকের মত করে বললে। আচ্ছা ডোরা, তুমি যে উপন্যাস লিখেছ আকাশের কত রং, কই আমাকেও দিলেনা পড়তে ? ডোরা মিষ্টি করে হাসল। দেব দেব তুমি যেদিন চলে যাবে, সেদিন তোমাকে প্রেজেন্ট করব। উমাদিকে একখানা দেব। তখনকার মত ব্রেকফাষ্ট এর সময় এসব কথা বার্তার মধ্যে কেটে গেল। আমি বললাম, সুশান্ত উমাকে নিয়ে তুমি তোমার নিমন্ত্রিত অতিথিবর্গের খাওয়ার মেনু করে কেনাকাটা করো। ডোরা বলল, তুমি যাবে না ? আমি বললাম, এত কেনা-কাটা করা, মার্কেটে মার্কেটে ঘোরা মোটেই ভাল লাগে না। ডোরা মুখ গম্ভীর করে চুপ করে থাকল। আমি বললাম, কি চুপ করে রইলে যে, কথা বল ? ডোরা বলল, আমি কি বলব ? তুমি সব কিছুই পছন্দ করনা। কোনটা তুমি পছন্দ কর, না করনা আমি আজ পর্যন্ত বুঝে উঠতে পারলাম না। উমা সুশান্ত টেবিলে বসেছিল বলে আমি আর কথা বাড়ালাম না। আমি উঠে ড্রইং রুমে গিয়ে খবরের কাগজটা হাতে নিয়ে নাড়া-চাড়া করছিলাম এবং কিছু কিছু খবরে চোখ বুলিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ যেন শরীরটা ভাল লাগছিলনা। মাথা ভীষণ ধরেছে, বিছানায় গিয়ে চোখ বুজে শুয়ে থাকলাম।
ডোরা ও উমা বসে ড্রইং রুমে কেনা-কাটার হিসাব পত্র করছিল। উমাই সপিংয়ের মেনু করে দিল। ডোরা বলল, চলুন উমাদি আমরা দু’জনেই সব সপিং করে আনব। ওরা মনে করে ওদের ছাড়া আমরা কোন কিছু পারিনা। আমি শুয়ে শুয়ে ওদের সব কথা শুনছিলাম। আর মৃদু মৃদু হাসছিলাম, মেয়েরা অনেক কমপ্লেক্সে ভুগে। ভগবান ওদের ফিজিক্যাল ইউয়িক করে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। তবু শক্তির কত বড়াই করে। লেখা, পড়ায়, জ্ঞানে-গর্ভে, পুরুষের সাথে সমা তালে তাল মিলিয়ে যাচ্ছে। সমান তালে নয়, আরও বেশী। এখন দেখা যায় পরীক্ষায় ইউনিভার্সিটিতে ওরাই প্রথম হয়ে বসে আছে। ছেলেরা বটতলায় বা মাঠে ঘাটে বসে বিরাট জল্পনা-কল্পনা করে যে, আমরা ছেলেরা রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামাই। সমাজের ন্যায়-অন্যায় নিয়ে মেতে উঠি, বাবা-মা-ভাই-বোন এদের নিয়ে চিন্তা করি। কিন্তু মেয়েদের-ত কোন দায়িত্ব বা কর্তব্য সমাজ কাঁধে চপিয়ে দেননি। বিয়ে হলে স্বামীর ঘরে গিয়ে তাতে রাঁধবে, ছেলে-মেয়ে পেটে নেবে। আর আমরা ছেলেরা কত দায়িত্ব কর্তব্য সমাজের মত ন্যায়-অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হয়। আমরা সেজন্য ভাল করে পড়াশুনো করতে পারি না।

(চলবে————)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।