বোরহানউদ্দিনে অনাবৃষ্টিতে ব্যাহত আউশ চাষ, শঙ্কিত কৃষকরা

মনিরুজ্জামান ॥ বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ভোলার বোরহানউদ্দিনে ব্যাহত হচ্ছে আউশ চাষ। তীব্র খরা, অনাবৃষ্টির কারণে জমিতে পানি না থাকায় ক্ষেত ফেঁটে চৌচির হয়ে গেছে। মৌসুমের শুরু থেকে তীব্র খরায় আউশের অনেক বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। এতে আউশ চাষ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন উপজেলার প্রান্তিক চাষিরা।
সারাদেশের মতো উপকূলীয় এ জেলায় আশানুরূপ বৃষ্টি না হওয়ায় কেউ কেউ পুঁকুর ও খাল থেকে পাম্প মেশিনে পানি সেচ করে আউশের চারা রোপণ করছেন। চারা রোপনের মৌসুম প্রায় শেষ হলেও বেশির ভাগ চাষির জমি এখন অনাবাদি অবস্থায় পড়ে আছে। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের চাষিগনের ভাষ্যমতে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় এবছর এখনো প্রায় ৮০ শতাংশ জমি অনাবাদি।
দেউলা ইউনিয়নের কৃষক সালেম মাতাব্বর, কয়ছর ও মফিজল হক সহ অনেকে জানান, পুঁকুর থেকে পানি দিয়ে বীজ বপন করেছিলাম। এখন ক্ষেত (জমি) রোপণ করার সময়। বৃষ্টি না থাকায় ক্ষেত শুকিয়ে আছে। পানির অভাবে এখনো জমিতে হাল দিতে পারেনি। তাই আউশের চারা রোপণ করতে পারছিনা। অনাবৃষ্টির কারণে পুঁকুরের পানিও শুকিয়ে গেছে। তাই আমাদের জমি অনাবাদি পড়ে আছে। তারা আরও জানান, মাঝে মাঝে হালকা বৃষ্টি হয় তাতে জমিও ঠিক মতো ভেজে না।
সাচড়া ৬নং ওয়ার্ডের রহমান সিকদার জানান, পুঁকুর থেকে পানি সেচে ৩ মন আউশ ধানের বীজ বপন করেছিলাম। পরে তীব্র খরায় তা পুরো নষ্ট হয়ে গেছে। একই ওয়ার্ডের সেরাজল মাল ও ইউনুছ জানান, বৃষ্টি না হওয়ায় খাল থেকে পানি সেচে ধানের চারা রোপন করেছি। এখন জমি শুকিয়ে ফেটে আছে, ভালো করে বৃষ্টি না হলে তা নষ্ট হয়ে যাবে।
কুতুবা ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের বৃহত্তম চাষি অহিদ সদ্দার জানান, চলতি আউশ মৌসুমে তিনি ৩ একর জমি চাষের জন্য বীজধান (চারা) বোপন করেন। চারা বড় হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বৃষ্টির অভাবে জমি প্রস্তুত করতে পারছেন না। আবাদের বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, চারা শেষ পর্যন্ত গরুকে ঘাস হিসেবে খাওয়াতে হবে।
একই এলাকার রফিজল বলেন, এলাকায় প্রায় ৩ মন ধানের চারা নষ্ট হবে। এ পরিস্থিতি থাকলে আউশ উৎপাদন ব্যাহত হবে। একই ভাবে শঙ্কা প্রকাশ করেন গংগাপুরের কৃষক তাজল আলম, রফিক, কাচিয়ার হীরালাল, সমির, হাসাননগরের জুয়েল আব্বাস।
বড় মানিকা ব্লকের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মিজানুর রহমান রনি, পক্ষিয়ার খায়রুল আলম মুন্সি, টবগী ও কাচিয়ার মমিন ভূঁইয়া, পৌর সভা এলাকার নাছির আহমেদ জানান, অনাবৃষ্টির ফলে বীজ তলা তৈরি ও ধানের চারা রোপণে চাষিদের অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। চারার বয়স বেড়ে যাওয়ায় রোপণের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে। তারা আরো জানান, মাঝে মধ্যে হলকা বৃষ্টি হয় তাতে ক্ষেতে ধান রোপণের উপযোগী হয় না। তাই কেউ কেউ খাল এবং পুকুরের পানি দিয়ে চারা রোপণ করছেন। ৎ
বোরহানউদ্দিন উপজেলা কৃষি সংরক্ষণ কর্মকতা মোঃ ফিরোজ আলম জানান, গত বছর ৭ হাজার ৮শ’ হেক্টর জমিতে আউশ আবাদ হয়েছে। এবছর লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিল ৮ হাজার ৮শ’ ৫০ হেক্টর। বৃষ্টি না থাকায় বেশির ভাগ কৃষক জমিতে হাল দিতে পারেননি। এতে চারা রোপণ সম্ভব হচ্ছেনা। তাই এবছর আমাদের কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম জমিতে আউশ চাষ হবে।
ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ হাসান ওয়ারিসুল কবীর জানান, বাংলাদেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় ভোলায় আউশ চাষের জন্য সেচ ব্যবস্থা চালু হয়নি। তাই খরা ও অনাবৃষ্টির কারণে এখানকার চাষিগন আউশ চাষে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।

You cannot copy content of this page