মধ্যরাত : পর্ব-১৬৯

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত পর্বের পর) : কচ বলল দাদু আপনাকে কুসুম, কুসুমের বর দেখতে এসেছে। আপনার শরীর ভালত ? দোলা বলল, সুশান্ত দাদু কই ? সুশান্ত তখনও ঘুমুচ্ছিল। তাড়াতাড়ি উঠে এল। উমা কিচেনে বসে ডোরাকে নিয়ে কি সব পিঠে বানাচ্ছিল। সুশান্ত খুব রেগে গেল। উমা, মিস ডোরা আপনার বাড়ীতে মেহমান এল, আপনার কোন খোঁজ নেই। ডোরা হাসতে হাসতে বলল, মেহমান এর সমাদর করার জন্য একটু দেশের জিনিস বানাচ্ছি। সুশান্ত বলল, আমিও উমাকে বলেছি এত হাঙ্গামার মধ্যে যেওনা। অল্পে সল্পে সেরে ফেল। আকাশ প্রশান্তকে প্রণাম করল। আকাশ বলল সত্যি ভাবতে পারিনি আপনাদের সাথে আমাদের কোনদিন আত্মীয়তা হবে। ভাগ্যিস কুসুম ধরে প্রফেসার ডোরাকে, দোলার মত সুন্দরী, সুশ্রী আভিজাত্যে ভরা এমন একটি বৌদি পাওয়া কম ভাগ্যের কথা না ? কি বলেন মিস প্রফেসার ? ডোরা বলল, খুব লক্ষ্মি মেয়ে, ঘরের বৌ, ঝিরা এমনই হওয়া দরকার।
দোলা উমা মেহমানদের নাশতা দেওয়ার তদারক করছিল। উমা ক্ষির পুলী, ক্ষির পুয়া এসব দেশী পিঠে বানিয়েছিল। ডোরাও ওর সাথে সাথে সাহায্য করেছে। ওসব দিয়েই অতিথি সৎকার করা হল। আকাশ পিঠে খেয়ে খুব প্রশংসা করল। সত্যি পাবনা, বরিশালের মেয়েরা অনেক ভাল ভাল পিঠে বানাতে পারে। অনেক দিন পর আত্মীয়-স্বজনের মাঝে পরে আকাশ অনেক অনেক গল্প করল। খুলনা বরিশাল দুটো পাশাপাশি জেলা। নদ-নদী সমুদ্র মেঘলার বঙ্গোপসাগরের সুন্দরবনের গল্প তুলল। অনাদি অনন্ত সীমাহীন জায়গা জুড়ে সুন্দর বনের বিস্তৃতি। পাখ-পাখালি বন মোরগের ডাকে রাতের প্রহর শেষ হয়। হরিণের চল চঞ্চল ছন্দ গতিতে মানুষের মনে ভাল লাগায়। দুটো পটোল চেরা কাজল কালো টানা চোখ, পাতলা চিকন দেহ সকলের মনকে অধীর করে তুলে। এসব গল্প করতে সকলকে বিস্মিত করে তুলল। তারপর বলল বাংলাদেশের লোক যে এখন সুন্দরবন না দেখেছে তা হলে বলতে হবে, তারা একটা বিশিষ্ট প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে লীলা খেলা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
আমি কিছুটা স্বীকার করলাম। সত্যি আপনা আপনি থেকে হাজার হাজার মাইল সর্পিল গতিতে এই সুন্দরবন তার বিরাটত্ব প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে মানুষের কোন হাত নেই, নেই কোন কৃত্তিমতা। পাশ দিয়ে চলে গেছে বিশাল বিশাল নদ-নদী। ছুটে চলেছে সাগরের সাথে মিলতে। বিশাল বঙ্গোপসাগরের উত্তাল তরঙ্গ ধু ধু করছে সীমাহীন সুন্দরবনের পাশ দিয়ে। হরিণেরা সমুদ্রের কূলে-উপকূলে চঞ্চল চোখে এদিক-ওদিক তাকায়, আর সমুদ্রের জল খায়। বনের আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়ায়। আকাশ অনেকক্ষণ গল্প করতে করতে রাত অনেক হল। সত্যি বিদেশে এসেও নিজের ঐতিহ্যকে একটু ভোলেনি। দেশের প্রতি কি শ্রদ্ধা, কি ভালবাসা, কি মায়া তার হৃদয়ে এখনও জেগে আছে। আমি বললাম, আকাশ হৃদয়টা এই বিশাল আকাশের মতই সুন্দর মসৃণ। আকাশ হাসল, ডোরা এসে কাছে বসল। বলল, আপনাদের একটু নিমন্ত্রণ করতে চাই। বলেন কখন, কোনদিন, কোন সময়, সময় হবে। আকাশ বলল, আবার নিমন্ত্রণ কেন ? একদিন আমরা সময় করে এসে নিজেরা খেয়ে যাব।

(চলবে——-)

 

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।