মিথ্যা অভিযোগ ও অপ-প্রচারের প্রতিবাদে দৌলতখানে সংবাদ সম্মেলন
ঝুঁকির মুখে কয়েক হাজার পরিবার
ভোলার মেঘনার ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ প্রকল্পে অনিয়ম

এইচ এম নাহিদ ॥ ভোলা সদর উপজেলার পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের দালাল বাজার সংলগ্ন ভাংতীর খালের মেঘনা নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় চলমান প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বাঁধ সংরক্ষণ প্রকল্পের জন্য কোন সিটিজেন চার্টার না দিয়ে স্থানিয়দের চোখে ধুলা দিয়ে তড়িগড়ি করে কাজ করছেন ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড। পাউবো ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কারসাজিতে নিন্মমানের মিহি ধুলার মত বালু আর মাটি ভর্তি করা অর্ধেক জিও ব্যাগ সেলাই করে গননা ছাড়াই তড়িঘড়ি করে এসব বালির বস্তা নদীতে ডাম্পিং করা হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে জুন মাসকে পুঁজি করে বরাদ্ধকৃত জিও ব্যাগ না ফেলে কাজ সম্পন্ন করার পায়তারা করছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ নিয়ে স্থানিয় বানভাসী মানুষের মনে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
সুত্রমতে জানা গেছে, প্রতিবছর মেঘনার ভাঙ্গনে ভোলা সদর উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে আসছে। অনেকের বাড়ী ঘর হারিয়ে নিস্ব হয়ে পড়ে। হারিয়ে যায় উপজেলার কয়েকটি গ্রামের মানচিত্র। এ জন্য ভাঙ্গন রোধে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রতিবছর মেঘনা নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের নকসা তৈরি করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠায়। বার্ষিক জরুরি ভাঙনরোধ প্রকল্পের আওতায় ভোলার মেঘনা নদীর জরুরি ভাঙন রোধে পূর্ব ইলিশার ২নং ওয়ার্ডের দালাল বাজার সংলগ্ন ভাংতীর খাল এলাকায় নদীর বাঁধ রক্ষার জন্য পূর্ব শতর্কতামূলক জরুরি ভাঙন রোধ প্রকল্পের পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ দিয়ে ৪শ’ মিটার নদীর তীর সংরক্ষণের জন্য চট্টগ্রামের ঠিকাদার মের্সাস গরীবে নেওয়াজ এন্টার প্রাইজ নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রায় ১ কোটি ৭৩ লাখ টাকার চুক্তি করে।
চুক্তি অনুযায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৪২ হাজার ৩শ’ টি জিও ব্যাগে ২শ’ ৫০ কেজি প্রকৃত মোটা বালি ফেলে ডাম্পিং করবে। এসব ব্যাগে ছয় অনুপাত এক পরিমাণ বালু ও সিমেন্ট ব্যবহার করা হবে। এখন চলছে জিও ব্যাগে বালু দিয়ে ভর্তি করা। ৩০ জুনের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে। কাজটি ঠিকাদারের কাছ থেকে চুক্তিতে নিয়েছেন ভোলার ঠিকাদার ইকবাল সর্দার নামে এক ব্যক্তি। কিন্তু পাউবো’র অসাধু কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারের সঙ্গে আঁতাত করে জরুরি কাজের সুযোগে জিও ব্যাগে প্রকৃত বালির পরিবর্তে নিন্মমানের ধুলার মত মিহি বালি মাটি মিশ্রিত আবর্জনা ভরে পরিমানের চেয়ে অর্ধেক করে জিও ব্যাগ ভর্তি বস্তা সেলাইয়ের কাজ করছে ঠিকাদার।
সূত্র বলছে, এই জিও ব্যাগে সম্পূর্ণ না ফেলে কোন রকম দ্বায়সারা কাজ সম্পন্ন করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে বুঝ দেবেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আর এই কাজে সহযোগীতা করছেন ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু অসাধু কর্মকর্তা। এতে চলমান কাজটি অত্যন্ত নিন্মমান হচ্ছে বলে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে ভাঙনের শঙ্কা প্রকাশ করেন এলাকাবাসী।
জরুরি ভাঙন রোধের নামে ঠিকাদার ও পাউবোর লুটপাট কয়েক লাখ টাকা। জিও ব্যাগ ভরাটে অনিয়ম দুর্নীতিতে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। এলাকার বাসিন্দা (ছদ্ম নাম) আব্দুল মোতালেব, রাবেয়া বেগম, রাজন আলী, জসিম মাঝি, দুলাল মাঝি, কাঞ্চন মাঝি জানায়, এলাকার বসতি রক্ষার জন্যে অনেক দেন দরবার করে এই তীর রক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। এটি সঠিক ভাবে করা না হলে দুর্ভোগে পড়বে এলাকাবাসী। আর আমরা জন সম্মুখে এই অনিয়মের কথা বলতে পারিনা। কারন কোন রকম টু শব্দ করলে আর এলাকায় বসবাস করার অধিকার থাকবেনা। তাই সব কিছু দেখেও না দেখার ভান করি আর আল্লাহর কাছে বিচার দেই।
রবিবার প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, একদল শ্রমিক জিও ব্যাগ ভরছে আর একদল শ্রমিক হাফ ব্যাগ বালু ভরে বস্তার মুখ সেলাই করছে। এ সময় ধুলার মত মাটি মিশ্রীত বালু ভরা হচ্ছে বস্তায়। কাজের সার্বক্ষণিক দায়িত্বে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্য সহকারী মো. হুমায়ুন বলেন, বস্তার ওজন ঠিক আছে তবে বস্তায় যা ভরছে তার কিছু উল্টাপাল্টা আছে। আমি এ বিষয়ে অফিসকে জানাবো।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মের্সাস গরীবে নেওয়াজ এন্টার প্রাইজের ভোলা প্রতিনিধি মি. ইকবাল সাংবাদিকদের বলেন, আমার কাজে বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ ভিত্তিহীন। কাজের কোন সমস্যা নেই, কাজ ঠিকমত হচ্ছে তাছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড আমাদের কাজে সার্বক্ষনিক মনিটরিং করছেন।
ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম বলেন, সকল অভিযোগ ভিত্তিহীন। জিও ব্যাগ ভরার জন্য বালুর কোন গ্রেড নেই। আর জিও ব্যাগের বস্তা সঠিক ওজন দিয়ে এবং গননা করে নদীর পার সংরক্ষণের কাজে ফেলা হচ্ছে। তাছাড়া ভোলা পাউবো’র এ কাজে তেমন দায়-দায়িত্ব নেই। আমরা শুধু রুটিন মাফিক কাজ করছি। এ ব্যাপারে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে তারাই ভালো বলতে পারবেন। টাস্কফোর্স এসে যাচাই বাছাই ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কাজ সঠিক পেলে ঠিকাদার বিল পাবেন।
ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ম. হাসানুজ্জামান বলেন, দালাল বাজার সংলগ্ন চলমান কাজে কোন অনিয়ম করার সুযোগ নেই। যে অভিযোগ গুলো উঠেছে তা সঠিক নয়। আমরা শত ভাগ কাজ বুঝে ডাম্পিং করি তাছাড়া ঢাকা থেকে টাস্কফোর্স সদস্যরা এসে কাজের দেখভাল করছেন। পুনরায় যখন ট্রাস্কফোর্স সদস্যরা আসবে তখন আপনাকে ফোন করে কাজের তদারকী দেখার জন্য বলবো তখন আপনি আসবেন। এসময়ে তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও পাউবো’র ওয়ার্ক এ্যাসিসটেন্ডের অগচোরে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করার অভিযোগ উঠেছে তার কি উত্তর আপনার কাছে। তখন তিনি বিষয়টি অসম্ভব বলে উড়িয়ে দেন। তিনি আরও জানান, আশা করছি যথা সময়ে কাজটি শেষ করতে পারলে ভাঙ্গনের হাত থেকে মেঘনার দালাল বাজার সংলগ্ন বানভাসী দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাবেন।