লুজা, ল্যাঙ্গড়া বললে খারাপ লাগে

একদিন সকল গ্লানি মুছে যাবে বলে স্বপ্ন দেখেন তারা

এইচ এম নাহিদ ॥ তিন পুত্রকে নিয়ে সুখের সংসার ছিল ইয়ানুর বেগমের। বড় ছেলের ৯ বৎসর বয়সেই অজানা রোগে আক্রান্ত হয়ে সব কিছু তছনছ করে দেয়।এর পর এক এক করে ৩টি পুত্রই শারীরিক বিকলাঙ্গ হতে শুরু করে। দাঁত পড়ে দাঁত উঠলেই এই রোগের উপস্বর্গ দেখা দেয়। স্বামী আবুল কালাম নদীতে জাল বায়। মেঘনায়ই একমাত্র আয় রোজগাড়ের উৎস। দিনের একবেলা খেলে আরেক বেলা খাবার থাকে না ঘরে। ৬ মাসে ১ বার সরকারি ভাতা জোটে। আবার কখনো জোটেওনা। প্রতিবন্ধী হওয়ার এ সংকট থেকে পরিবারটি মুক্তির পথ খুঁজছে। সামনের দিনগুলোতে স্বাভাবিক শরীর নিয়ে বেঁচে থাকার বড় ইচ্ছে তাদের। প্রয়োজন উন্নত চিকিৎসা। দীর্ঘ ৯ বছর সহায়তায় কেউ এগিয়ে আসেনি কখনো।
ভোলা সদর উপজেলার পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড ভাঙ্গতির খাল এলাকার মুন্সী বাড়ীর আবুল কালাম মাঝির তিন পুত্র, সাকিল (১৭), শরীফ (১৫) ও হাসান (৯) অন্য ১০টি ছেলের মত স্বাভাবিক ভাবে জীবন যাপন করছিল। খেলা ধুলা, স্কুলে পাঠদান নিয়মিত ছিল। মা-বাবার স্বপ্ন ছিল অনেক। কিন্তু সন্তান ৩টির বয়স যখন ৯ বৎসর অতিক্রম করে তখনই শরীরে বাসা বাঁধে অজানা রোগ। ডাক্তার, কবিরাজ ধরে কোন কুল কিনারা পাচ্ছেননা। ঢাকা পঙ্গু হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে উন্নত চিকিৎসা হলে ভাল হয়ে যাবে। কিন্তু যাদের নুন আন্তে পান্তা জোটেনা উন্নত চিকিৎসার খরচ মিটানোর কোন সম্ভলই তাদের নেই।
অসহায় ইয়ানুর বেগম বলেন, সব কিছু অন্ধকার দেখি। স্বামি নদীতে জাল বেয়ে কিছু জোটলেই আমাদের মুখে আহার জোটে। আর চিকিৎসার বিষয়টিতো অনেক দূরের স্বপ্ন। শুনেছি এলাকার মেম্বার চেয়ারম্যানদের কাছে অনেক দান-খয়রাত আসে। অনেকবার গিয়েছি, উল্টো গাল-মন্দ করে বের করে দেয়। এখন কারো কাছে সাহায্য চাইতেও ভয় লাগে।
প্রতিবন্ধি সাকিল এখনো আকাশ ভরা স্বপ্ন দেখেন। একদিন তাদের ঘরে এক রাজা এসে সাহায্য করবে। তাদের এ গ্লানি মুছে যাবে সেদিন। সবাই আবার তাদের নাম ধরে ডাকবে। লুজা, ল্যাঙ্গড়া বলে কেউ আর ডাকবেনা। আবার দৌড়ে স্কুলে যাবে, পেট ভরে ভাত খেতে পারবে।
প্রতিবেশী মোস্তফা (৭০), দুলাল (৫০) ও হাসিনা (৩০) বলেন, একেতো অভাবের সংসার আবার ছেলে তিনটারে আল্লায় পঙ্গু বানাইছে। চিকিৎসাতো দূরের কথা, দুইটা ভাত খাইতেই কষ্ট। সমাজের বিত্তবানরা যদি একটু আগায়া আসতেন তাহলে হয়তো একটা গতী হইতো ইয়ানুরের।
এ বিষয়ে ভোলা অটিস্টিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কলের শিক্ষক মোশারেফ লাবু বলেন, প্রতিবন্ধী শিশুদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারের ঋণসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হলে এই বিশেষ শিশুরা সঠিক পরিচর্যায় সামাজিক ভাবে বেঁচে থাকার অবলম্বন খুঁজে পাবে।
ভোলা সমাজ সেবা অধিদপ্তরের উপ-সহকারী পরিচালক কাজী গোলাম কবির ভোলার বাণী’কে বলেন, আমরা সাধ্যমত সব ধরনের সহযোগীতা করবো। আমরা সমাজ সেবার আওতায় বিষয়টি দেখভাল করবো এবং নিয়মিত ভাতা পাওয়ার ব্যবস্থা করবো। এছাড়াও ওই পরিবার থেকে জেলা সমাজ কল্যাণ পরিষদে আবেদন করা হলে তাদেরকে আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা করে দিব বলে আশ্বাস দেন।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন ছোটন এই প্রতিবেদককে বলেন, বিষয়টি এতদিন আমার জানা ছিলনা। আপনাদের মাধ্যমে জানলাম। সামনে ঈদ, পরিষদের সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা যাহাতে তারা পাইতে পারে আমি সেই ব্যাবস্থাই করার চেষ্টা করবো। এছাড়া আমার ব্যক্তিগত তহবিল থেকেও আমি তাদের সাহায্য করবো বলে আশ্বাস দেন তিনি।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।