মধ্যরাত : পর্ব-১৬৫

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),
(গত পর্বের পর) : আমি বললাম প্রশান্ত ডোরাকে ফোন কর, ও খুব খুশী হবে। কচ বলল, কেন আপনারা কুসুমের ওখানে যাবেন না ? আমি বললাম তুমি-দোলা কুসুমের ওখানে যাও। আমরা দু’বন্ধু উমা ডোরার ওখানে যাই, কি বলিস সুশান্ত ? সুশান্ত বলল উত্তম প্রস্তাব। ডোরাকে ও কুসুমকে ফোন করলাম, ডোরা তখন ইউনিভার্সিটিতে ছিল। খুশীতে আত্মহারা হয়ে গদ গদ হয়ে বলল প্রশান্ত সত্যি ? তুমি সুশান্ত বাবুকে নিয়ে উমা বৌদিকে নিয়ে আসছ ? আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। আমি কি স্বপ্ন দেখছি, না সথ্যি আসছ। আমি বললাম ডোরা সত্যি তোমার কাছে আসছি।
কুসুমের ওখানে কচ ফোন করল। কচ বলল, কুসুম আনন্দে নাকি উৎফুল্লে নেচে উঠেছে। সত্যি দূর দেশে কেউ আপনজন এর সাক্ষাত পেলে বড় আনন্দ লাগে। আমরা তাড়াতাড়িই গিয়ে সন্ধ্যার মিনিট পাঁচেক আগে ভার্জিনিয়ায় পৌছে গেলাম। সেদিন বোধ হয় শারদীয় পূর্ণিমা ছিল। প্রকান্ড চাঁদ আকাশের এক কোনে সোনার থাকার মত হয়ে ভেসে উঠেছিল। অসংখ্য ছোট ছোট তারায় আকাশ ছেঁেয় গিয়েছিল। শিউলির মত না না জানা ছোট ছোট হলুদ বোটা লাগান ফুল এর সুগন্ধ মন যেন আছন্ন হয়ে গিয়েছিল। অসংখ্য রক্ত লাল গোলাপ, হলুদ গাঢ় হলুদ গোলাপ, আমাকে হাতছানি গিয়ে গিয়ে ডোরার ইউনিভার্সিটির কোয়াটারের কাছে এগিয়ে নিয়ে গেল। বেশ ছিম-ছাম নিস্তব্ধ-নিঝুম নিরব কল কোলাহল নাই। বনবীধির বনচ্ছায়ে পাইন গাছের আড়ালে আবডালে ডোরার কোয়ার্টার।
ডোরা বাড়ীর সামনে লনে দাঁড়িয়ে ছিল। কিন্তু রক্ত লাল গোলাপ হাতে করে পরণে ছিল রক্তলাল একখানা সিল্কের শাড়ী। গায়ে একটি রক্তলাল ব্লাউজ, পায়ে লাল ভেলভেটের সেন্ডেল। দু’হাত ভরা অসংখ্য লাল কাঁচের চুরি। প্রতিক্ষিতা হয়ে আছে আমাদের জন্য। আমাদের গাড়ী গিয়ে ডোরার বাড়ীর সামনে থামল। ডোরা হাঁসিমুখে এগিয়ে এসে অভ্যর্থণা জানাল। হ্যালো প্রশান্ত বলে আমার হাতটা প্রথম এ তুলে নিল নিজের হাতে। তারপর সুশান্ত ও উমার সাথে কর মর্দন করল। কতক্ষণ লনে দাঁড়িয়ে কুশলাদি দেওয়া হল। কুসুমের বাসায় কচ-দোলা গিয়েছে কিনা, এখানে এলও পারত, আমি কুসুম এর কথা বললাম, কুসুম নাকি খুব ধরেছে। ওদের ওর বাসায় উঠার জন্য। সুশান্ত বলল আপনার বাসায় এত লোক উঠলে অসুবিধা হবে। তাই আমরাও বেশী জোর করলাম না।
ডোরা বলল, না—-না কোন অসুবিধা হবে না। এলে খুব খুশী হতাম। আমি বললাম, এক জায়গায়ই আমরা আছি, পরে আসবে। ডোরা আমাদের নিয়ে ওদের ঘরে ঢুকে সুশান্তকে, উমাকে একটি সুন্দর কামরা দেখিয়ে দিল। আমাকে পাশের একটি কামরা গিল। দু’রুমেই অসংখ্য তাজা ফুল, ফুল দানিতে রাখা ফুলের সুগন্ধে ঘর সুগন্ধে মৌ মৌ করছে। আমরা সকলে কাপড়-চোপড় বদল করে হাত মুখ ধুয়ে চা খেতে ডাইনিং টেবিলে গেলাম। পটেপো চিপস, চা, কোকো নোনতা বিস্কুট দিয়ে চা খেলাম। ডোরা বলল, সুমান্ত দা আমি-ত সংসারী না। তবুও আমার আন্তরিকতা, বৌদি এসেছেন। বৌদি আমাকে কত যতœ করেছেন, আদর দেখিয়েছেন, আমি কতটুকু করতে পারব কিনা জানিনা। তারপর কিছুক্ষণ গল্পগুজব করে, আরও পথের নিউইয়র্ক স্ট্যচু অব লিবার্টির গল্প করলাম। কচ-দোলা মিস লিবার্টির মাথায় উঠে বিশ্ব রেকর্ড করেছে বলে আমি ও সুশান্ত খুব হাসাহাসি করলাম। ডোরা হেসে বলল দু’জনে ছেলে মানুষ। এই বয়সে এই রকম একটা কিছু ধারনা জন্ম নেয়, সে ধারণা টা স্বাভাবিক।
(চলবে——-)