মধ্যরাত : পর্ব-১৬১
ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),
(গত পর্বের পর) : আমি একা বড় একা। তবু ভাগ্য ভাল, সুশান্ত আমাকে ভাইয়ের মত, বন্ধুর মত সর্ব রকমের সাহায্য-সহায়তা করে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সুখে-দুঃখে, ব্যাথা-বেদনায় অষ্ট প্রহরে আমাকে পাহারা দিচ্ছে। জীবনে কোনদিন পূণ্য করেছিলাম বলে আমার মনে নেই। পাপ-পূণ্য সব ভগবানের হাতে। কে পাপী, কে তাপী, তা তিনিই বলতে পারেন। শুনেছি, কেউ নাকি সারাজীবন তপস্যা করেও ভগবানের সান্নিধ্য পায়না। আবার কেউ কোন তপস্যার ধার দিয়ে হাটেনা। সে আবার ভগবানের পরম প্রিয়। এসব অলৌকিক রহস্য বুঝা আমার মত অতি সাধারণ লোকের বুদ্ধিতে কুলোবেনা। দোলা এসে বলল, দাদু চল সুশান্ত দাদুকে বল আমরা মায়ামি যেতে চাই। কুসুম ধরেছে ভার্জিনিয়া যাবার জন্য। তুমি-ত এখন ভাল, আমরা নিউইয়র্ক থামব, স্টাচু অব লিবার্টি টা দেখে, ভার্জিনিয়া দু’দিন বিশ্রাম নেব, তোমার জন্য। তারপর সোজা চলে যাব ফ্লোরিডা।
আমি বললাম, দোলা তুমি কচকে নিয়ে যাও। আমরা থাকি, যাও হানিমুন করো। সুশান্ত এখনও ছুটি পায়নি। তবু দোলা জোর করতে লাগল তোমরা চল। আমি বললাম, আমরা থাকলে তোমার কচের অনেক অসুবিধা হবে। তোমরা ভালভাবে সবকিছু এনজয় করতে পারবে না। দোলা বলল, না তুমি চল।
সুশান্ত’র ইউনিভার্সিটির কি কাজ ছিল। বাসায় ফিরতে রাত ১০টার মত বেজে গেল। এসে খেয়ে ঘুমিয়ে গেল। দোলার ব্যাপার নিয়ে আলাপ করতে আমার সময় হলনা। তবু সকালে ব্রেকফাষ্টের টেবিলে সুশান্তর কাছে কথাটা তুললাম। সুশান্ত বলল, এইত এত বড় অসুখ, দু’বার করে হয়ে গেল তোর। এত দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে, তুই আবার অসুস্থ্য না হয়ে পরিস, সেই ভাবনা আমার আবার ভাবতে হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত ঠিক হলে সুশান্তর গাড়ীতে আমি থাকব। দোলা কচের গাড়ীতে, ওরা দু’জনেই থাকবে। উমা থাকবে আমাকে দেখাশুনো করার জন্য। বাবা বাঁচলাম। দোলার ঘ্যান ঘ্যানানি আর ভালো লাগে না। সুশান্ত বলল, দোলা আবদার করছে আমারা সাথে যাবার জন্য। কিন্তু উমা, প্রশান্ত খাবার-দাবার সব সময় সাথে রাখবে। দোলা ছেলে মানুষ, নতুন বিয়ে হল; এখনও বাস্তবতার সাথে পরিচয় ঘটেনি। ফুর্তিও সাথে আপোষ করে চলছে ওদের জীবন।
দু’দিন পর একদিন খুব ভোরে আমি, সুশান্ত, উমা টরেন্টো হতে দোলাও কচের সাথে নিউইয়র্কের পথে পাড়ি জমালাম। সুশান্তই ড্রাইভ করছে, পথেে যতে যেতে কত সুন্দর সুন্দর দৃশ্য অবলোকন করলাম। রাতে এক হোটেলে থেকে সকালে খুব ভোরে স্ট্যাচু অব লিবার্টিও পাড়ে গাড়ী পার্কিং এর জায়গা খুঁজে পেয়ে আমাদের দু’টো গাড়ি পার্কিং করে স্টাচু অব লিবার্টির কাছে টিকেট ক্রয় করার জন্য লাইনে দাড়ালাম। ওরে বাপরে দাঁড়িয়ে আছি-ত দাঁড়িয়ে আছি। দীর্ঘ এক মাইল লম্বা সে লাইন। ঘণ্টা খানেক দাঁড়িয়ে থাকার পর লাইন ভাঙ্গল, তারপর টিকেট মিলল। সাগরের কিনারে দাঁড়িয়ে থাকলাম তা প্রায় আধাঘণ্টা। (মিস লিবার্টি———-মিস লিবার্টি) জাহাজে উঠলাম, কচ দোলা জাহাজের এক কোনে আশ্রয় নিল। আমি সুশান্তর কাছে একখানা বোঞ্চে আশ্রয় নিলাম। উমা জাহাজের পাশে দাঁড়িয়ে সমুদ্রের তরঙ্গমালার উত্তাল ঢেউগুলি গুনছিল। দোলা ও কচ জাহাজের ডেকে দাঁড়িয়ে আটলান্টিক মহাসাগরের দূও দিগন্ত ব্যপী সমুদ্র মেঘলার রূপ দর্শণ করছিল। কচ সমুদ্র না দেখে আমি দূর থেকে দেখলাম দোলার পানে চেয়ে রয়েছে।
(চলবে————-)