এখান থেকে ২৬-৩০ বছর পর্যন্ত গ্যাস পাওয়া যাবে ॥ সেপ্টেম্বরেই যাবে ঢাকার শিল্প কারখানায়

ভোলার ইলিশা-১ দেশের ২৯ তম গ্যাসক্ষেত্র ঘোষণা

ডেস্ক রিপোর্ট ॥ ভোলার ইলিশা-১ কূপটি দেশের ২৯তম গ্যাসক্ষেত্র হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এখানে ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুদ রয়েছে। দেশীয় গ্যাসের বাজার মূল্যে মজুদ গ্যাসের দাম ৬৫০০ কোটি টাকা। আর আমদানিকৃত এলএনজির দর বিবেচনায় মূল্য দাঁড়াবে ২৬ হাজার কোটি টাকা। সোমবার সকালে নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন এই গ্যাসক্ষেত্রের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাপেক্সের তত্ত্বাবধানে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রম গত ৯ মার্চ ইলিশা-১ কূপের খনন কাজ শুরু করে। ১৪ এপ্রিল কূপের ৩ হাজার ৪৭৫ মিটার গভীরতায় খনন কাজ শেষে পৃথক নতুন একটি গ্যাসের স্তর আবিষ্কার করে। সার্বিক ভূতাত্ত্বিক ও ভূপদার্থিক কারিগরি বিশ্লেষণ ও ডিএসটি (ড্রিল স্টেম টেস্ট) করে ইলিশা কূপকে দেশের নতুন ২৯তম গ্যাসক্ষেত্র হিসেবে ঘোষণা প্রদানের বিষয়ে বাপেক্স মতামত প্রদান করে। আজকে প্রতিমন্ত্রী আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, এটা খুবই আনন্দের সংবাদ এবং সৌভাগ্যের। এখান থেকে ২৬-৩০ বছর পর্যন্ত গ্যাস পাওয়া যাবে। ভোলাতে সব মিলিয়ে প্রায় ৩ টিসিএফ গ্যাস মজুদের আশা করা হচ্ছে। ভোলার ইলিশাতে বর্তমানে দৈনিক ১২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন করার সক্ষমতা রয়েছে। সেখানে সব গ্রাহক মিলে চাহিদা রয়েছে ৯২ দশমিক ৩২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। গ্রাহক না থাকায় ২৭ দশমিক ৬৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উদ্বৃত্ত থাকছে। এখন একটি প্রসেস প্ল্যান্ট আছে। আরও একটি বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যে নতুন কূপের গ্যাস পাইপলাইনে দেওয়া সম্ভব হবে। তখন গ্যাস উত্তোলন সক্ষমতা দাঁড়াবে ১৮০ থেকে ২০০ মিলিয়ন ঘনফুটে। উদ্বৃত্ত গ্যাস ঢাকায় এনে সংকটে থাকা শিল্পে দেওয়া হবে। এজন্য ইন্ট্রাকো নামের একটি কোম্পানির সঙ্গে রোববার চুক্তি করেছে সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি। তারা বিশেষ পরিবহনে সিএনজি করে এই গ্যাস নিয়ে আসবে ঢাকা অঞ্চলে। দিনে ৫ থেকে ২৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আনবে ইন্ট্রাকো।
প্রতিমন্ত্রী জানান, ভোলা থেকে বরিশাল হয়ে খুলনা যাবে একটি পাইপলাইন। প্রি-ফিজিবিলিটি শেষ এখন ফিজিবিলিটি স্টাডির কাজ চলছে। দ্বীপজেলা ভোলার অন্য দুটি গ্যাসক্ষেত্র হলো বোরহানউদ্দিন উপজেলার শাহাবাজপুর গ্যাস ক্ষেত্র, ৬ কূপ ও সদরের ভেদুরিয়া ইউনিয়নের ভোলা নর্থ, ২ কূপ। সর্বশেষ ইলিশা-১ কূপ।

এদিকে সেপ্টেম্বরেই ভোলা থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাস (সিএনজি) আকারে আসতে পারে ঢাকার শিল্প কারখানায়। তিতাসের আওতায় গ্যাস সংকটে থাকা শিল্প গ্রাহকেরা প্রতি ঘনফুট গ্যাস পাবেন ৪৭ টাকা ৬০ পয়সায়। প্রাথমিকভাবে ভোলা থেকে প্রতিদিন পাঁচ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ঢাকার পাশের কারখানায় সরবরাহ করতে চুক্তি সম্পন্ন করেছে সুন্দরবন ও ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং। রাজধানীর একটি হোটেলে এই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ভোলার গ্যাসের সর্বোত্তম ব্যবহারে জোর দিচ্ছে সরকার।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার জানান, দেশের বিদ্যুৎ, আবাসিক ও শিল্পখাতে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা চার হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। তবে স্থানীয় গ্যাসক্ষেত্র আর আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) মাধ্যমে প্রতিদিন তিন হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা যায়। কিন্তু অতিরিক্ত দামের কারণে গত বছরের মাঝামাঝি বিশ্ববাজার থেকে গ্যাস কেনা বন্ধ রাখা হয়। এতে শিল্পখাতে দেখা দেয় তীব্র গ্যাস সংকট। জনেন্দ্র নাথ সরকার আরও জানান, শিল্প মালিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ভোলার উদ্বৃত্ত গ্যাসের একাংশ সিএনজি আকারে শিল্পে সরবরাহের চিন্তা শুরু করে সরকার।
প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক ই-ইলাহী চোধুরী জানিয়েছেন, এ বছরই ভোলায় আরও পাঁচটি কূপ খননের পরিকল্পনা রয়েছে জ্বালানি বিভাগের। স্থানীয় আবাসিক ও শিল্প গ্রাহকদের চাহিদা পূরণেও গুরুত্ব দেওয়ার কথা জানান জ্বালানি উপদেষ্টা। ভোলা থেকে ঢাকায় সড়কপথে একেকটি গাড়িতে চার হাজার ঘনফুট পর্যন্ত গ্যাস সিএনজি আকারে পরিবহন করা যাবে।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।