মধ্যরাত : পর্ব-১৬০

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত পর্বের পর) : সেদিন সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছিল, পূর্ণিমার বড় বড় চাঁদটা তখন আকাশে অনেক বড় করে উঠেছিল। ছোট ছোট তারাগুলি ঝিমমিক করে আমাকে হাতছানি দিয়ে কাছে ডাকছিল। দোলা ও কচ দু’জনে আমার সাথে দেখা করতে এল। দোলার চোখে মুখে যেন অফুরন্ত আনন্দ উপছে পড়ছে। বসন্ত ফুলের সৌরভ খুঁজে পেয়েছে ওর যৌবন দীপ্ত অঙ্গে অঙ্গে। ভ্রমনের মধুর নেশা যেমন তাকে ফুলের কাছে নিয়ে আসে। দোলাকে তেমন এক নেশায় পেয়ে বসেছে। দোলা বলল, দাদু তোমার শরীর কেমন ? কেন অসুবিধা হয়নিত ? আমি বললাম, নারে খুব ভাল আছি। তোরা ভাল থাকলে, সুখে থাকলে আমিও ভালো থাকব।
আমি বললাম, কেমন লাগল নায়াগ্রা ? বলল দোলা, চমৎকাল——-। দোলা বলল, নায়াগ্রা-ত আমি আরো আগে দেখেছি। তবে দাদু, বলতে আমার লজ্জা নেই। এখন যেন নতুন করে নায়াগ্রা আমার কাছে মনে হল। অনেক অনেক মনোরম মনোহর। কচ চুক করে বসেছিল। আমি বললাম, কি হে শ্যামসুন্দর কথা বল। কেমন লাগল মানমন্দিরের মানস প্রতিমাকে সহ নায়াগ্রা দর্শণ ? কচ বলল, দাদু আপনার-ত মানস প্রতিমা নেই, কি করে বুঝাব ? আমি বললাম, আমার নেই বলেই আমি অনেক বেশি বুঝি। এমনি করে হাঁসিতে-গল্পে সেদিনের সন্ধ্যে অনেক আনন্দেও উপযোগী হয়েছিল।
উমা সকলকে খেয়ে যাবার জন্য ডাইনিং টেবিলে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানাল। আমি ওদের সকলকে নিয়ে ডাইনিং টেবিলে বসলাম। খেতে খতে সুশান্ত অনেক অনেক গল্প আরম্ভ করে দিল। কচ মুচকি মুচকি হাসছে আর খাচ্ছে। দোলাও একটু একটু হাসছে। ওদের মনে এখন কত রং, কত রংয়ের বাহার, কত আনন্দের হোলী, আবির ঢেলে মন-প্রাণ মাতিয়ে রেখেছে। কবির কল্পনায় এখন ওরা দু’টি কপোত-কপোতি। দোলা বলল, দাদু চলনা কুসুম খুব ধরেছে ভার্জিনিয়া থেকে ঘুরে আসার জন্য। আমি বললাম, ডোরাও খুব করে বলে গেছে, ওর ওখানে যাবার জন্য। বললাম, আচ্ছা সুশান্তর ছুটিটা হয়ে যাক, তারপর শরীরের সুস্থ্যতা দেখে পাড়ি জমান যাবে। কচ বলল, দাদু এখন আসি, পরে এসে আপনার সাথে গল্প করব।
রাত বেড়ে যাচ্ছিল, আমি শোবার জন্য সুশান্ত খুব তাড়া দিচ্ছিল। শুতে গেলাম কিন্তু ঘুম আসেনা। অনেক কথা মনের গহীনে ভির করে আমাকে উতলা করে তোলে। সংসার বাঁধলাম না, বাঁধতে যেয়েও কেন জানি বাঁধা হল না। বিধির কি বিধান জানিনা। যাকেই আপন করে রাখতে চাই, সে চলে যায়। জগতে কিছুই স্থির নয়, কিছুই বাস্তব নয়। সব ভুল ভুলকে আকড়ে ধরে লাভ কিছুই নাই, তবু একটু শান্তি। আমি স্বার্থপর নই, স্বার্থ পরতা দেখাতে কোথায় যেন আমার লাগে। যাক ভাবছিলাম কিছুদিন দোলার ভালবাসায়, শ্রদ্ধায় আমার জীবন না হয় কিছুদিন কেটে যাবে। তা দেখছি সে গুড়ে বালি। তবু ওদের দু’জনের প্রেম, আমাকে আমার নিজের প্রেমের চেয়ে শান্তি ও তৃপ্তি, সুখ-শান্তি, সুখের প্রশান্তি এনে দিয়েছে।

(চলবে——-)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।