ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ থেকে রক্ষায় বোরো ধান কাটায় ব্যস্ত বোরহানউদ্দিনের চাষিরা

মনিরুজ্জামান, বোরহানউদ্দিন ॥ পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় “মোখা” আগমনী বার্তায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ভোলার বোরহানউদ্দিনের কৃষকরা। তাই ফসলের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার পূর্বে চলতি বোরো মৌসুমের পাঁকা ও অর্ধপাকঁ ধান কাটায় ব্যস্ত সময় পাড় করছেন এখানকার চাষিরা। উপকরণের দাম বৃদ্ধিতে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর উপর ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়-ক্ষতির আতঙ্কে উদ্বিগ্ন কৃষকরা। উপায়ন্তর না দেখে বোরো ফসল ঘরে তুলতে দিশেহারা কৃষকেরা। তারা আরো জানান, হারভেস্টার মেশিন ও শ্রমিক দিয়ে দ্রুত ধান কাটার চেষ্টা করছেন। উপজেলার বিভিন্ন কৃষকদের সাথে কথা এমন বক্তব্য পাওয়া যায়।
বোরহানউদ্দিন উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, এ বছর ৯ হাজার ৯শ’ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে ৭ টন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় থেকে রক্ষায় ক্ষেতের ৮০ শতাংশ ধান পাকলেই কাটার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এমন দাবী কৃষি বিভাগের।
গংগাপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের কৃষক আবুল হাসেম বকুলও নাজিম উদ্দীন মিয়া জানান, চলতি মৌসুমে ৩৭ একর জমিতে বোরো ধান চাষ করেন। যার মধ্যে ৫০ ভাগ জমির ধান কাটতে পারছেন। অর্ধেক জমির ধান কাঁচা থাকার কারণে এখনও মাঠে। যাতে ১০০ মন ধান এখনও মাঠে। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় কাটছে তাদের দিন।
সাচড়া ইউনিয়নের কৃষক শাফিজল ও ইউনুছ জানান, বোরো আবাদের জমিতে অন্য ফসল করায় কিছু জমিতে দেরিতে আবাদ করা হয়েছে। সেগুলোর ধান এখনো পাকেনি, ঘূর্ণিঝড় হলে এসবের ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
বড় মানিকা ও পক্ষিয়া ইউনিয়নের কৃষক রফিজল, নাসিম, রিয়াজ ও আব্দুল খালেক জানান, আগামী দুই তিনদিনের মধ্যে বাকি সব পাঁকা ধান ঘরে তুলতে পারলে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ইতিমধ্যে ৮০-৯০ ভাগ জমির পাঁকা ধান কাটা হয়েছে। তবে কিছু কিছু জমির ধান এখনো পাঁকেনি।
বড় মানিকা ইউনিয়নের কৃষক রেশাদ আলী জানান, তার সম্পূর্ণ ধান ঘরে তুলতে পারছেন। বড়মানিকা ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, তার ব্লকে ৪৫০ হেক্টর বোরো আবাদ হয়েছে। যার মধ্যে ৯০ ভাগ ধান কর্তণ হয়েছে।
টবগী ও কাচিয়া ইউনিয়নের কৃষক নাগর, খোরশেদ, ছিদ্দিক, রিপন চন্দ্র দাস, মফিজ হাওলাদার জানায়, তাদের ব্লকের অনেকে ধান কাটতে পারলে ও যারা হাইব্রিড ও ব্রিধান ধান ৮৯ করছে তাদের ধান পাকেঁনি বলে মাঠে রয়েছে। তাদের ক্ষতির সম্ভবনা রয়েছে।
উভয় ব্লকের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী-কৃষি-কর্মকর্তা মমিন ভূঁইয়া জানান, তার ব্লকের অধিকাংশ ধান কর্তন করা হয়েছে। জীবনকাল বেশি হওয়ায় হাইব্রিড ও ব্রিধান ৮৯ মাঠে রয়েছে, যার পরিমান কম।
বোরহানউদ্দিন উপজেলা কৃষি অফিসার এইচএম. শামীম জানান, ঘূর্ণিঝড় মোখা থেকে কৃষকদের ফসলের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে কয়েকদিন পূর্বেই পাঁকা ধান ও মৌসুমী বিভিন্ন রবি শস্য ঘরে তোলার জন্য মাঠ পর্যায়ে পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি কমাতে আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি ও সচেতনতা কার্যক্রম অব্যাহত আছে।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।