সর্বশেষঃ

ভোলার লঞ্চে চুলের মুঠি ধরে নারী যাত্রীকে মারধর, কান্নার ভিডিও ভাইরাল ॥ মামলা দায়ের

ডেস্ক রিপোর্ট ॥ ভোলা-ঢাকা নৌ-রুটে চলাচল করা কর্ণফুলী-৩ লঞ্চের স্টাফদের হাতে লাঞ্ছিত ও মারধরের শিকার হয়েছেন এক নারী যাত্রীসহ বেশ কয়েকজন। স্টাফদের কাছে লঞ্চের ইঞ্জিন বিকল হওয়ার কারণ জানতে গিয়ে এ লাঞ্ছনা ও মারধরের শিকার হোন যাত্রীরা। এ ঘটনায় ভোলা সদর থানায় লঞ্চের ১০ থেকে ১২ জন স্টাফের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন মো. ফরিদ উদ্দিন নামে এক যাত্রী। শনিবার (১৫ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১০টার দিকে ভোলা সদর উপজেলার ইলিশা লঞ্চঘাটে কর্ণফুলী-৩ লঞ্চের মধ্যে এ হামলার ঘটনা ঘটে। রোববার ১৬ এপ্রিল সকালে ভুক্তভোগী যাত্রী ফরিদ উদ্দিন এ মামলা দায়ের করেন। সদর থানার ওসি মো. শাহীন ফকির মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মামলার বাদী মো. ফরিদ উদ্দিন চরফ্যাশন উপজেলার পৌর ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত আব্দুল মালেকের ছেলে। বর্তমানে তিনি ভোলা পৌর ৭ নম্বর ওয়ার্ডে থাকেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, শনিবার ১৫ এপ্রিল রাজধানী ঢাকার সদরঘাট থেকে ভোলায় আসার উদ্দেশ্য নিয়ে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে কর্ণফুলী-৩ লঞ্চে উঠেন তিনি। সঙ্গে তাঁর স্ত্রী জারিন তাসনিম ওমি ছিলেন। লঞ্চটি ছাড়ার কিছুক্ষণ পর যাত্রীরা জানতে পারেন লঞ্চের একটি ইঞ্জিন বিকল। লঞ্চটি ধীরগতিতে চলছে। সদরঘাট থেকে বিকেল সাড়ে ৩ টায় ছেড়ে লঞ্চটি ইলিশাঘাটে এসে পৌঁছার নির্ধারিত সময় রাত সাড়ে ৮ টা। কিন্তু লঞ্চটির ইঞ্জিন বিকল হওয়ায় তা যথাসময়ে ঘাটে এসে পৌঁছাতে পারেনি। রাত সাড়ে ১০টার দিকে লঞ্চটি ইলিশাঘাটে এসে পৌঁছার পর মামলার বাদীসহ আরও কয়েকজন যাত্রী লঞ্চের স্টাফদের কাছে লঞ্চ দেরিতে পৌঁছার কারন জানতে চাইলে যাত্রী ও স্টাফদের মধ্যে তর্কবিতর্ক বাঁধে। একপর্যায়ে স্টাফরা যাত্রীদের উপর হামলা চালায়। তাদের হামলায় বেশ কয়েকজন যাত্রী আহত হয়।
ফরিদ উদ্দিনের সঙ্গে থাকা তাঁর স্ত্রী জারিন তাসনিম ওমিকে স্টাফরা চুলের মুঠি ধরে লাঞ্ছিত ও মারধর করে। আঘাত করা ফরিদকে। তাঁর গায়ের গেঞ্জি টেনেহিঁচড়ে ছিঁড়ে ফেলা হয়। ট্র্যাভেল ব্যাগসহ যাত্রীদের মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়া হয়। কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে তাঁরা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল দেয়। কল পেয়ে পুলিশা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের একটি টিম ঘাটে যায়। পুলিশের উপস্থিতি দেখে তাড়াহুড়ো করে লঞ্চটি ঘাট ত্যাগ করে।
এদিকে এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ছড়িয়ে পড়া ২ মিনিট ৪১ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে মামলার বাদী, তাঁর স্ত্রী ওমি ও আরেক ভুক্তভোগী এ ঘটনার বিষয়ে বর্ণনা দিতে দেখা যায়। কান্না জড়িত কন্ঠে ওমি জানান,‘স্টাফরা তাঁর গায়ে হাত তোলে তাকে মারধর করে এবং চুলের মুঠি ধরে লাঞ্ছিত করে’। ভিডিওতে মামলার বাদীকে ছেঁড়া গেঞ্জি গায়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তিনিও ঘটনার বর্ণনা দেন। ফেসবুকে এ ভিডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়ার পর অনেকেই ভোলা-ঢাকা নৌ-রুটে চলাচল করা যাত্রীবাহি লঞ্চ কর্ণফুলীকে বয়কট করার দাবি তোলেন। অনেকেই মন্তব্যের ঘরে লিখেছেন, ‘কর্ণফুলী লঞ্চের স্টাফরা সবসময়ই যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে আসছে’।
কর্ণফুলী-৩ লঞ্চের ইন্সপেক্টর উজ্জ্বল বাবু জানান, লঞ্চের কোনো স্টাফই মামলার বাদী এমনকি কোনো যাত্রীকে মারধর করেনি। এ কথা বলে প্রসঙ্গ এড়িয়ে উজ্জ্বল মোবাইল ফোনের কল কেটে দেন। এরপর একাধিকবার কল দেয়া হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। এ বিষয়ে লঞ্চটির মালিক মো. সালাউদ্দিনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও ফোনে তাকে পাওয়া যায়নি।
ভোলা সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহীন ফকির জানান, এ ঘটনায় ফরিদ উদ্দিনের দায়ের করা মামলায় ৪ থেকে ৫ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর হয়েছে। পুলিশ এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে গ্রেফতার চলমান রেখেছে।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।