প্রচন্ড গরমে হাঁসফাঁস, সঙ্গে অস্বস্তি-অস্থিরতা

ডেস্ক রিপোর্ট ॥ চৈত্রের বিদায়বেলায় দেশজুড়ে চলমান দাবদাহে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। অতিমাত্রার দাবদাহে গ্রাম থেকে শহর, সবখানেই নাভিশ্বাস অবস্থা। পবিত্র রমজানে রোজা রেখে এই দাবদাহে সবার মাঝেই এক অস্বস্তি ও অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। প্রচন্ড এই গরমে বেশি বিপাকে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষেরা। গত কয়েকদিনে দেশের অসহনীয় তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে জীবনযাত্রার মান যেমন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, সেই সাথে কমছে কর্মঘণ্টা। এদিকে গরমের তীব্রতার সাথে খরার প্রকটতাও যেন বেড়েই চলেছে। অনাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আবাদি জমি। এবারের খরার প্রভাবে বিভিন্ন সবজি ও ফলের ফলন কম হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
সকাল থেকে রাত অবধি রাজধানীর বুকে রিকশা চালান মোস্তফা। প্রতিদিন যাত্রী বহন করে তিনি আয় করেন ৭শ’ থেকে ৮শ’ টাকা। তবে আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রচন্ড গরমের কারণে তিনি আয় করেছেন মাত্র দেড় শ’ টাকা। গরমে রাস্তায় রিকশা চালানোই দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মালিবাগের বাসিন্দা সাগর বলেন, প্রচ- গরমে বাচ্চাদের নিয়ে বাসায় থাকাও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। ফ্যানের বাতাসও প্রচুর গরম। বৃষ্টি না হলে মানুষ অসুস্থ হয়ে পরবে।
রাজধানীর সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক পুলিশদের অবস্থা আরো বেগতিক। এই গরমে রোজা রেখে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে খোলা আকাশের নিচে রাস্তায়। কারো মাথায় ছাতা থাকলেও কেউ কেউ আবার ক্যাপ মাথায় দিয়েই কোনো রকম দাঁড়িয়ে আছেন। অসহ্যকর গরমের শরীর থেকে ঘামও যেন শুকিয়ে গেছে অনেকের।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, দেশের ওপর দিয়ে চলমান মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপ প্রবাহ আরো কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে। বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ২৫.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।
এদিকে প্রচন্ড গরমের তীব্রতায় বাড়ছে বিভিন্ন রোগবালাই। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন চিকিৎসা সেবা কেন্দ্রে বাড়ছে ডায়রিয়া, জ্বর, চর্মরোগ, কাশি, মাথাব্যথা ও টাইফয়েড রোগীর সংখ্যা। বুধবার (১২ এপ্রিল) প্রচন্ড গরমে হিট স্ট্রোক করে মারা যায় বরগুনার কমলেশ ভদ্র নামের ৪০ বছরের এক যুবক।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. আয়শা আক্তার বলেন, প্রচন্ড গরমে মানুষের শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মানুষের শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে হিট স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। যখন বাইরের তাপমাত্রা মানুষের শরীরে চেয়ে বেশি মনে হবে এবং বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকবে তখন একটু পর পর বেশি বেশি তরল খাবার ও পানি খেতে হবে। যেহেতু এখন রমজান মাস, অনেকেই রোজা রাখেন, তাদের অবশ্যই ইফতারের পর থেকে সেহরি পর্যন্ত প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে। পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। তিনি আরো বলেন, যারা বাইরে কাজ করেন তাদের বাইরের খাবার কম খেতে হবে। বিশেষ করে এই গরমে খাবারের দিকে একটু বেশি নজর নিতে হবে। গরমে মানুষের শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দেয়ায় বমি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই বেশি বেশি বিশুদ্ধ খাবার পানি পান করতে হবে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে তাপবাহের ওপর প্রভাব পড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণ গ্রিনহাউস গ্যাসের সমস্যা। অতিরিক্ত জ্বালানি পোড়ানোর ফলে বায়ুম-লে কার্বন ডাইঅক্সাইড, নাইট্রোজেন, মিথেনসহ নানা ধরনের ক্ষতিকারক গ্যাস বৃদ্ধি পায় এবং এই গ্যাসগুলো বায়ুম-লকে উত্তপ্ত করে চলেছে। অনাবৃষ্টি দাবদাহকে দিন দিন আরো ভয়ঙ্কর করে তুলছে।

সুত্র : কালের কণ্ঠ।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।