ভোলার কিংবদন্তি নেতা নাজিউর রহমান মঞ্জু’র ১৫ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত

মোঃ ওমর ফারুক ॥ দ্বীপজেলা ভোলার উন্নয়নের রুপকার খ্যাত, স্থানীয় সরকারের প্রবর্তক, সাবেক স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী, ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)’র প্রতিষ্টাতা মরহুম নাজিউর রহমান মঞ্জুর ১৫ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত পালিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) ভোলার উকিল পাড়াস্থ শান্ত নীড়ে এ মৃত্যু বার্ষিকী উদযাপন করা হয়। এ উপলক্ষে বাদ আসর মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
দোয়া ও অনুষ্ঠানে মরহুমের ৩ সন্তান সাবেক সংসদ সদস্য বিজেপি চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, কেন্দ্রীয় আওয়ামী যুব লীগের নির্বাহী সদস্য অর্থনীতিবিদ ড. আশিকুর রহমান শান্ত ও ব্যাবসায়ী ব্যারিস্টার ওয়াসিউর রহমান অঞ্জনসহ তার পরিবারের সদস্যগণ এ দোয়া ও মোনাজাতে অংশ নেয়।
এর পূর্বে মরহুমের পরিবারবর্গ ভোলার উত্তর দিঘলদী বালিয়া গ্রামের মিয়া বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে শায়িত নাজিউর রহমান মঞ্জু’র কবর জিয়ারত করে দোয়া মোনাজাত করে তার রুহের মাগফিরাত কামনা করেন। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন ভোলা জেলা বিজেপি ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, বিএনপির জেলা কমিটি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সহ জেলার আইনজীবি, সাংবাদিক, বিভিন্ন ব্যাবসায়ী এবং পৌর এলাকার গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ ও সর্বস্তরের নাগরিকগণ। অনুষ্ঠানে দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন হাফেজ মাওলানা বনি আমিন।
নাজিউর রহমান মঞ্জুর সংক্ষিপ্ত জীবনি : ভোলার কৃতি সন্তান মরহুম নাজিউর রহমান মঞ্জু। তিনি ১৯৪৮ সালে ৩০শে জুন ভোলার ঐতিহ্যবাহী বালিয়া মিয়া বাড়ীতে মিয়া পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। ২০০৮ সালের ৬ই এপ্রিল তিনি লিভারে সমস্যা জনিত কারনে মাত্র ৬০ বছর বয়সে ঢাকা ইউনাইটেড হাসপাতালে মারা যান। রাজনীতিতে সফল এই নেতা প্রাক্তন এলজিআরডি মন্ত্রী ও অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সফল মেয়র এবং আধুনিক ভোলার রুপকার মরহুম নাজিউর রহমান মঞ্জু । বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার শাখা ব্যবস্থার জনক বাংলাদেশের সাবেক এই প্রভাবশালী নেতা। তাঁর পিতা মরহুম বজলুর রহমান মিয়া। ৪ ভাই এর মধ্যে তিনি ছিলেন ২য়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে এম.কম পাস করেন। প্রথম জীবনে মতিঝিলে তিনি এশিয়াটিক ট্রাভেলের ব্যবসা শুরু করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি একজন সফল ব্যবসায়ী। রাজনীতির ক্ষেত্রেও তিনি ছিলন সফল। ছাত্র জীবন থেকেই তিনি রাজনীতির সংস্পর্শে আসেন। ১৯৭০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মাস সংসদের সাধারন সম্পাদক ও সভাপতি ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যকরী সংসদের সদস্য ও হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদের ১৮ দফা বাস্তবায়ন পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। তৎকালীন সময়ে জাতীয় পার্টি (জাপা)’র মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি চারদলীয় ঐক্য জোটের বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) শরীক দল ছিলেন। তাছাড়াও ১৯৮৬ সালে তিনি জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ঢাকা সিটিকর্পোরেশনের পূর্বে নাম ছিল ঢাকা মিনিসিপাল কর্পোরেশন তা পরিবর্তন করে তার নাম দেন ঢাকা সিটি কর্পোরেশন। তিনি ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের প্রথম মেয়র হিসেবে দক্ষতার পরিচয় দেন। এরশাদের আমলে তিনি ছিলেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় দফতরের মন্ত্রী। তিনি ভোলা জেলার সকলের একজন জনপ্রিয় ব্যক্তি ছিলেন। তিনি ১৯৮৪ সালে ভোলা সাব-ডিভিশনকে ভোলা জেলায় উণ্ণীত করেন। তাঁর জনহিতকর কর্মকান্ডে ছোঁয়া পায়নি এমন এলাকা খুবই বিরল। তিনি সোডিয়াম বাতি দ্বারা ভোলার রাজপথকে করেছিলেন আলোকিত। তাঁর ভক্তরা তাঁকে কখনো “হাতেম তাই” বলে সম্বোধন করতো। নিজের অর্থে নির্দিষ্ট সময়ে তিনি ব্যাপকভাবে জনসেবামূলক কাজ করেছেন যার জুড়ি মেলা ভার। তাঁর আশা আকাঙ্খা ছিল অনেক। তার কথার সাথে কাজের মিল রেখেই এগিয়েছেন অনেকটা। ভোলার উন্নয়নের স্বার্থে নিয়ে ছিলেন নানা রকম পরিকল্পনা। পরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়নও করেছেন অনেক কাজ। উচ্চাভিলাসী এই মানুষটি হঠাৎ লিবার জনিত সমস্যায় ২০০৮ সালের ৬ই এপ্রিল “হাতেম তাই” খ্যাত এই নেতা পৃথিবীকে চির বিদায় জানান। তার মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়ে ভোলা জেলার মানুষ। ভোলাবাসী হাড়িয়েছেন এক অমূল্য রতন।