মধ্যরাত : পর্ব-১৪৯

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত পর্বের পর) : দোলাকে সাজিয়েছেও উমা। কল্যাণময়ী জগধাত্রী উমা। নিরব নিঝুম। নির্বাক কোন কিছু নিয়ে হা-হুতাশ করার মেয়ে সে নয়। ধুপ যেমন নীরবে আগুনে পুড়ে, সকলকে সুগন্ধ প্রদান করে উমাও তেমনি। অথচ সেজন্য উমার বা সুশান্তর কোন অহঙ্কার নেই। সব লোকজন চলে গেলে বাড়ীটা কেমন খালি হয়ে গেল। দোলা বসে বসে কার্লমার্ক এর একটা বই পড়ছে। ডোরা নেহরুর জীবনী নড়াচাড়া করছে। উমা এতগুলো লোকের চা নশতা খাওয়ার তদারক করছে। আবার বাসন কোসনগুলো ধুয়ে পরিস্কার করে তুলে রাখছে। সুশান্ত একটু আরাম করে কোল বালিশটা কোলে করে নাক ডেকে ঘুমুচ্ছে।
আমি বেলকুনিতে বসে খবরের কাগজটা দেখছিলাম। উমা এসে বলল, বিয়েত কুড়ি তারিখ। এখনই হওয়ার কথা চলছিল। কিন্তু কুসুম ভার্জিনিয়া থেকে এখন তার বরকে নিয়ে এসে পৌছয়নি, সেজন্য বিশ্বজিৎ বাবু কুড়ি তারিখ ফেললেন বিয়ের তারিখ। আমাকে সুশান্ত তাই বলল, প্রশান্ত দা, তোমাকে বলেনি ? আমি আশির্বাদের পর এখনও সুশান্তর সঙ্গে আলাপ করিনি। আলাপ হলেই জানতে পারব। হঠাৎ ক্রিং ক্রিং করে সুশান্তর ঘরের ফোনটা বেজে উঠল। আমি গিয়ে ধরলাম, হ্যাঁলো, আমি রাহাত খান বলছি। আমি বললাম বলুন, আপনার বন্ধু সুশান্তর বাসার ঠিকানা দরকার। আপনার শরীর এখন কেমন আছে। আমি বললাম ভাল। ঠিকানা ফোনে জানিয়ে দিলাম, কিন্তু আমার চিন্তা হলে কেন রাহাত খান মন্ট্রিল থেকে এখানে আসছেন, কি প্রয়োজন, আমি চিন্তিত হয়ে পড়লাম। ফোন ছেড়ে সুশান্তর দিকে চেয়ে দেখলাম ও দিব্বি কোল বালিশ কোলে নিয়ে এই দিনে দুপুরে নাক ডেকে দিব্বি ঘুমুচ্ছে। ছেলে মেয়ে নেই। সংসারে দু’জন মানুষ স্বামী-স্ত্রী। খায়-দায়-ঘুমোয়। কোন চিন্তা ভাবনা নেই, বেশ আছে।
আমি ওকে ডাকলাম, এই সুশান্ত এত ঘুমুচ্ছিস ? উঠনা। দেখনা মন্ট্রিল থেকে ফোন এল ম্যাগগিলের প্রফেসার মিষ্টার রাহাত খান ফোন করল। কি বললি, আমি বললাম, বললাম তো। মন্ট্রিল থেকে প্রফেসার রাহাত খান আসছেন। আগামী দিন দুপুরে তড়াক করে লাফিয়ে উঠে ববস, কি ব্যাপার ? আমি আস্তে আস্তে বললাম আরকি, তুইত বুঝতেই পারছিস। বোধ হয় শ্যামলের কথা বলতে। সুশান্ত বলল, এটা জোরের কি আছে, যার যেখানে পছন্দ, যার যেখানে মন চায়, যেখানে আমাদের ইচ্ছে, আমরা আত্মীয় করব। আমি বললাম, এটা তোর আমার কথা। রাহাত খান কি বলেন, সেটা শোনার জন্য ও উত্তর দেবার জন্য প্রস্তুত থাক। আমি বলব আমি কিছুই জানি না। আমার শরীর খুব খারাপ। আমার বন্ধু সুশান্তর উপর সব ভার। আমাদের আশির্বাদ ও পাকা দেখা সব শেষ। এখন আর কোন কথা বলা শোনার আমাদের আর ক্ষমতা নেই।
পরের দিন দুপুর বেলা আমাদের টরেন্টোর (সুশান্তর) বাসায় দরজার বেল বেজে উঠল। দরজা খুলে এগিয়ে গেলাম। আরে দাদা আসুন আসুন, কি ব্যাপার ? এত হন্ত দন্ত হয়ে এই ভর দুপুরে গরীবের দুয়ারে হাতির পাড়া ? সুশান্ত হেসে উঠল। বলল, প্রশান্ত তুই এত কথা শিখলি কবে থেকে। রাহাত খান খুব গম্ভীর চুপ চাপ। আমাদের দু’জনের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিল। বড় বড় চোখ করে ঘরের আসবাবপত্রের দিকে বার বার করে দেখছে। রাহাত খান বললেন, আমি মন্ট্রিলের কঙ্ক্রোডিয়া ইউনিভার্সিটির সব প্রফেসারদের পক্ষ থেকে আসছি, প্রশান্ত বাবু আপনার নাতনী দোলার সাথে শ্যামল দেবতোষ বাবুর শালা তার বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে পাকা কথা বলার জন্য। আমি সুশান্তর দিকে তাকালাম, সুশান্ত বলল, গতকাল দোলার আশির্বাদ হয়ে গেছে, ২০ তারিখ বিয়ে। রাহাত খান তাজ্জব হয়ে আমার মুখের পানে চেয়ে থাকলেন। কতক্ষণ দম নিয়ে বললেন, কার সাথে বিয়ে ঠিক হল। কে আশির্বাদ করলেন ? আমি বললাম, কচ এর দাদা বিশ্বজিৎ বাবু। রাহাত খান বললেন, ছেলে পক্ষ খুব বড় লোক নাকি ? আমি বললাম, শিক্ষিত মার্জিত, ভদ্র, বিনয়ী। তবে বড় লোক কিনা জানিনা।

(চলবে———)।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।