এখনই সময় রুখে দেয়ার, অভিভাবকরা সচেতন হোন

ভোলার সবত্রই ছড়িয়ে পড়েছে মোবাইল জুয়ার আশক্তি ॥ পিছিয়ে নেই শিশুরাও

হারুন অর রশীদ॥ ভোলার সর্বত্রই এখন মোবাইল জুয়ার আশক্তি ছড়িয়ে পড়েছে। শুধু শহরেই সিমাবদ্ধ নয় ছড়িয়ে পড়েছে তৃনমুল পর্যায়ে। পাড়ায়, মহল্লায়, খোলা মাঠে, নদীর পাড়, বিভিন্ন গাছের ছায়ায়, চায়ের দোকানে কিংবা দোকানের পেছনে, আড়ালে, আবডালে। স্মার্ট ফেনের এ দাপটে আপনার সন্তান কি করছে খবর রাখার সময় এখনই। অভিভাবকরা সচেতন হোন, তা না হলে মোবাইলই কাল হয়ে দাড়াবে আপনার সন্তানের জীবনে, আপনাকেও এ দায় বহন করতে হবে।
মোবাইল জ্বরে আশক্ত পুরো দেশ। আমরাও পিছিয়ে নেই। অতি প্রয়োজনিয় এ তার বিহীন যন্ত্রটি (ডিভাইসটি) কারো কারো কাছে প্রিয়জনের চেয়েও প্রিয়, আবার বিরক্তিকরও। কেউ জ্ঞান অর্জন করছে কেউবা জুয়ায় ডুবে বাপের পকেট খালি করছে, আবার জীবনকে মৃত্যুর দ্বার প্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে। বাড়ছে পরিবারে অশান্তি। মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে।
ভোলার বিভিন্ন এলাকা ঘুড়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন দোকানে চায়ের আড্ডায় কয়েকজন মিলে মোবাইল টেবিলে রেখে খেলায় মগ্ন, কাছে গিয়ে দেখা গেলো লুডু খেলা হচ্ছে বাজির মাধ্যমে। একই ভাবে দেখা গেছে তিন পট্টি (তাশের জুয়া) কেরামবোর্ড সহ নানা খেলায় মত্ত হয়ে উপুর হয়ে রয়েছে। এ ছাড়াও দেখা গেছে ক্রিকেট খেলায় অনলাইন জুয়া। কেউ স্কুল ফাকি দিয়ে, কেউ চায়ের আড্ডায়, কেউবা ছাদে কেউবা (শ্রমজিবী) কাজের অবসরে জুয়ায় মেতে উঠেছে। নানা গেমসতো আছেই। এটা বড়ই ভয়ঙ্কর বলে বলছেন অনেকেই। ভয়ঙ্কর এ আশক্তি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আনাচে কানাচে।
নাওয়া খাওয়া ভুলে প্রতিনিয়ত ডুবে আছে এ ভয়াভহ আশক্তিতে। ধ্যান জ্ঞান সবই মিশে আছে স্মার্ট ফেনের স্ক্রিনে চলছেতো চলছেই। শিশু থেকে শুরু করে তরুন, যুবকরা আশক্ত বেশি বলে বিভিন্ন স্থান ঘুড়ে দেখা গেছে। দিন দিন অধুনিক প্রযুক্তির উন্নয়নে পৃথিবী এখন হাতের মুঠোয়। আর এ প্রযুক্তি নিয়ে অপব্যাবহার রুখতে অভিভাবকরা আরো সচেতন হওয়া প্রয়োজন। এ প্রযুক্তির অপব্যবহারে যে কোনো সময় আপনার পরিবার ও সমাজে বড় ধরনের বিপদ ডেকে আনবে এটা নিশ্চিত করে বলা যায়। আমাদের প্রত্যাশা আপনি সাবধান হোন। আপনার সন্তানের গতিবিধি লক্ষ করুন। শুরুতেই থামায়ে দিন না হলে বড় বিপদ আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। অপনার সন্তানকে আগামি দিনের ভবিষ্যত কর্ণধার হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব আপনার। স্কুল শিক্ষক বা পুলিশ প্রশাসনের নয়। পর্যায়ক্রমে অপনি নিজেই পদক্ষেপ নিন। এটা আপনার সন্তান ও সমাজের জন্য মঙ্গলময়।
এ ব্যাপারে ইউনিসেফ এর হেলথ অফিসার ডা. হাসনাইন আহমেদ বলেন, মোবাইল ফোনের রয়েছে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ প্রভাব। এর মধ্যে কিছু স্বল্পমেয়াদী কিছু আবার দীর্ঘমেয়াদী। দীর্ঘক্ষণ মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখের দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি হয়। স্মার্টফোনের নীল আলো চোখের কোষের ক্ষতি করে। ফলে শিশুদের চোখের সমস্যা যেমন দৃষ্টিশক্তি হ্রাস, চোখে ঝাপসা দেখা, এস্থেনোপয়া, মায়োপিয়া সহ অন্যান্য রোগ দেখা দেয়।
এ ছাড়াও স্মার্টফোন এর স্ক্রিনে অনেক দ্রুত তথ্যের পরিবর্তন হয় যার ফলে মনোযোগ কমে যাওয়া, ঘুম কমে যাওয়া, কাজের সক্ষমতা হ্রাস পওয়া প্রভৃতি সমস্যা দেখা দেয়। স্মার্টফোনের ইদানিং বিভিন্ন এডিক্টিং গেমস গুলো শুধু শিশুদের ই না, কিশোর কিশোরী, যুবকদেরও অনেক সময় নিয়ে নিচ্ছে। অনেক গেমস তো টাকা পয়সার বিনিময়ে ও হচ্ছে। এর ফলে মেজাজ খিটখিটে হওয়া থেকে শুরু করে মানসিক ভারসম্য নষ্ট হওয়ার ঘটনাও বিরল নয়।
প্রতিকারের কথা যদি বলতে হয় তাহলে আসলে স্মার্টফোন এর ভালো বিকল্প শিশুদের হাতে তুলে দিতে হবে যাতে করে তারা দিনের বেশিরভাগ সময়ে স্মার্টফোন এর চেয়ে ভালো কজগুলোকে আপন করে নেয়। যেমন আউটডোর গেমস এর সুযোগ করে দেয়া, শিশুকে সময় দেয়া, সামাজিক কাজে শিশুদের এবং কিশোর কিশোরীদের যুক্ত করা ইত্যাদি।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।