সর্বশেষঃ

মধ্যরাত : পর্ব-১৪৬

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন), 

গত পর্বের পর) : কিছুক্ষণের ভিতর আমরা সুশান্তর বাসায় এসে পৌছে গেলাম। উমা এডগিয়ে এসে ডোরাকে নামিয়ে নিয়ে গেল। দোলা দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ডোরাকে প্রণাম করল। ডোরা বলল বাহ সুন্দও দেখতে ত দোলা, ভারী মিষ্টি মেয়ে। প্রশান্ত তোমার নাতনীর নাম দোলা, ওকে দেখলেও কিন্তু হৃদয় দুলে উঠে মন উচাটন হয়। আমি ডোরার কথা শুনে মৃদু মৃদু হাসছিলাম। এত তাড়াতাড়ি প্রশংসা আরম্ভ করলে। আরও পরে করার জন্য সময় রাখ। আমার নাতনীর ভাবী কচকে দেখলেত তোমার মাথা ঘুরে যাবে। ডোরা বলল, বলকি ? সত্যি ? আমি বললাম, রূপকুমার-রূপকুমারী বলতে পারো। হাসি ঠাট্টায় আনন্দে ডোরার আগমনে তখন সুশান্তর বাড়ীটা সরগরম হয়ে উঠেছিল।
উমা যেন সেদিন বনের মুক্ত হরিণের মত চহ্চল চরণে ছুটো-ছুটি করছিল। কে কি খাবে, কার জন্য কি রান্না হবে। কিচেন আর ডাইনিং রুমে ঘোরাঘুরি করছিল। সুশান্ত সেদিন গাড়ী নিয়ে আশির্বাদের নিমন্ত্রণের বন্ধু-বান্ধবদের বাড়ী যাতায়াতে ব্যস্ত। আমি এখানে দু’একজন ছাড়া কাউকে চিনিনা। ও সকলকে জানে, চিনে, ওদের আনন্দে ওদের উচ্ছাসে আজ আমার মনে হয় দোলা যেন এই পরিবারের একজন আপনার কেউ। দোলা যেন যতই আশির্বাদের সময়, বিয়ের সময় ঘনিয়ে আসছে। ততই ধীর-স্থির, নিরব-নির্বাক, নিস্তব্ধ হয়ে ভাবনার অতল গহ্বরে তলিয়ে যাচ্ছে।
মনে হয় আমাকে ছেড়ে যাবে বলে ওর বুকে খুব কষ্ট হচ্ছে। বাবা, মা, ভাই, বোন দিদিমা কেউই ওর কাছে নেই। শুধু আমি ছিলাম ওর একমাত্র সুখ-দুঃখের আশ্রয়। ও প্রথম এসে বলেছিল আমাকে জান দাদু, দিদিমা বলেছেন, প্রশান্তটা বড় একা, তুই ওখানে গিয়ে পড়াশুনো কর, আর প্রশান্তর যতœ করিস। জান দাদু, আমি কিন্তু তোমাকে ছেড়ে কেথাও যাবনা। আজ ওর চোখ ছল ছল করা কান্না। কান্না মুখ দেখে আমার হৃদয়ে যেন একটা ওকে হারানোর বিরাট ঝড় বইছে। তবু তবু সহ্য করতে হবে। আমাকে এই বিয়োগ ব্যথা। পৃথিবীর এই নিয়ম। আমি ডাকলাম দোলা দাদু, তুই খেয়েছিস ? না তোমরাত এখনও খাওনি দাদু। আমি উমাদি, ডোরাদির সাথে খাব। আমি উমাকে ডেকে বললাম, উমা লঞ্চ রেখ দোলা বোধ হয় ঠিক মত খায়না। উমা বলল, সারা রাত ফুলে ফুফে কাঁদে। বলে আমার দাদুকে কে দেখবে। এই যে দাদুর অসুখ হয়েছিল আমি কাছে ছিলাম। আমি চলে গেলে আমার দাদুকে কে দেখবে ?
আমি উমার মুখে এসব শুনে আর স্থির থাকতে পারছিনা। বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ারের মত দুকুল ছাপিয়ে আমার হৃদয় ভেঙ্গে চৌচির হয়ে গেল। তবু নিজকে যতদূর সম্ভব সংযত রেখে সকল দিক লক্ষ্য রেখে চলতে হচ্ছে। ডোরা এসে আমার কাছে বসে। আমার শরীর বর্তমানে কেমন চলছে, মামুলী দু’চারটি কথা জিজ্ঞাসা করছিল। আমি বললাম, খুবই অসুখে পরেছিলাম। ভাগ্যিস দোলা কাছে ছিল, আর এরি মধ্যে সুশান্ত-উমা মন্ট্রিলে এসে সব দায়-দায়িত্বের ভার গ্রহণ করে, আমার সুস্থ হওয়া অবধি থেকে। আমাকে মন্ট্রিল থেকে নিয়ে এসে ছাড়ল। ডোরা বলল, প্রশান্ত তোমার কপাল খুব ভাল। আমি বললাম সে কি রকম ?

(চলবে————-)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।